খালি মিটিং রুম কিংবা গ্রুপে নয়। নিজে যখন চিন্তা করছেন তখনও চিন্তা করার সময় মনের সমালোচকটাকে পারলে একটু বন্ধ রাখবেন। বড় হতে হতে আমাদের মনের সমালোচক এত উচ্চমানের হয়ে যায় যে, আমরা সমালোচনার তোপে নতুন কোনো আইডিয়ার কথাই চিন্তা করতে পারি না। এবং এখানেই বাচ্চারা আমাদের চেয়ে ভিন্ন। তাদের চিন্তার কোনো বাধা নেই। ব্যবসা সফল হবে কি না, মানুষ পছন্দ করবে কি না, বস খুশি হবে কি না– এসবের একটা চিন্তাও বাচ্চাদের নেই। আর একারণেই তারা এমন সব চিন্তা করতে পারে যেটা বড়রা মাথাতেই আনতে পারেন না। তাই আবারও বলছি, পেন্সিল আর রাবার একসাথে চালাবেন না।
*
অদৃশ্য ভুল
আমরা অনেক সময় ইন্টারনেটে দেখি মানুষকে গালি দিতে এই বলে যে, অমুক একটা হিজড়া!
হিজড়া কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের যারা, তারাও তো মানুষ। হিজড়া কীভাবে একটা গালি হয়? অনেকে হয়তোবা অনেক দিন ধরেই হিজড়াকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু, প্রতিবার যখন হিজড়া শব্দটা কেউ গালি হিসেবে ব্যবহার করছে, তারা কি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অপমান করছে না? এবং এই অদৃশ্য ভুলটা কয়জনই বা এখনও বুঝতে পেরেছে? একইভাবে আমরা গালি হিসেবে কামলা, গ্রাম থেকে আসছে! এসব টুডে দেই। কেন রে ভাই? শহরে থাকার কারণে, কিংবা কংক্রিটের দেয়ালের মধ্যে কাজ করে বলে কি কেউ উচ্চপদের মানবসত্তা হয়ে গিয়েছে নাকি? বরং আমাদের দেশ চলে গ্রামের মানুষের কষ্টের ফসলের উপর, প্রবাসী ভাইদের রেমিটেন্সের উপর। মানুষ কতটা নিচ মানসিকতার হলে কামলা, চাষা, গ্রাম থেকে আসছে! –এসব শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে।
একটু অগোছালো হলে এখন রোহিঙ্গা বলে গালি দেয়া হয়। গালির এতই সংকট যে, উদ্বাস্তু মানুষকে নিয়েও এখন কথায় কথায় নিজের দীনতা প্রকাশ করতে হয়।
এমনই আরও অনেক অদৃশ্য ভুল আছে যেগুলো আমাদের মানসিক সঙ্কীর্ণতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ফেল করলে রিক্সাওয়ালা হয়ে যাবো যেই মুখ দিয়ে বের হয়, সেই মুখে সব পেশাই সম্মানজনক কথাগুলো আসলে খুব একটা মানায় না।
*
কমিউনিকেশনের বিপদসংকেত
একশ দুইশটা জিনিস না খুঁজে আমরা যদি একটা ব্যাপার খেয়াল করে জানতাম যে একটা বিয়ে টিকবে কি টিকবে না, তাহলে ব্যাপারটা বোঝা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যেত না? এমনই একটা বিপদসংকেত কয়েক যুগের রিসার্চের পর সাইকোলজিস্ট জন গটম্যান বের করেছিলেন। আর সেই মহাবিপদসংকেত হল : অবজ্ঞা (Contempt)।
কাপলদের ১৫ মিনিটের কথাবার্তা রেকর্ড করে তিনি দেখছিলেন যে অবজ্ঞামূলক আচরণ কতটুকু ছিল তাদের মাঝে। যেমন : এমন ভাব করা যেন অন্য মানুষটি কিছু বোঝে না, অন্য মানুষটিকে দিয়ে কিছু হবে না। এমন ভাব-ভঙ্গি করা, কথা বলার সময় এমনভাবে চোখ ঘুরানো যেন অন্য মানুষটির কথার কোনো মূল্যই নেই–এসব অবজ্ঞামূলক আচরণ তিনি খেয়াল করছিলেন। এবং মাত্র ১৫ মিনিটের কথাবার্তার ভিডিও রেকর্ড করে তিনি সিংহভাগ সঠিক ধারণা করতে পেরেছিলেন কাদের বিয়ে টিকবে না।
ব্যাপারটা খালি বিয়ের জন্য নয়। দুটো মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর হবে সেটা নির্ভর করে তারা কতটা কম অবজ্ঞামূলক আচরণ একে অন্যের প্রতি করে। অর্থাৎ, সম্পর্ক গভীর করতে হলে একে অন্যের ব্যক্তিত্ব, কাজ এবং কথার প্রতি সম্মানসূচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে হবে। না হলে খুব একটা ইতিবাচক সম্পর্কে আশা করা যাবে না।
*
জুনিয়রের সামনে কমিউনিকেশন
কমিউনিকেশনের একদম বেসিক দুটো ব্যাপার হচ্ছে, প্রশংসা করলে সবার সামনে করুন। এবং সমালোচনা থাকলে একান্ত ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ওয়ান টু-ওয়ান বলুন।
তার মানে ব্যক্তিগত সমালোচনাগুলো মানুষের সামনে করবেন না। বিশেষ করে জুনিয়রদের সামনে কাউকে অপদস্ত করবেন না। কারণ, এতে তার। সম্মান এবং অথরিটিতে বেশ আঘাত লাগে। জুনিয়র এমপ্লয়িদের সামনে তাদের বসকে ঝাড়লে পুরো টিমের মানসিকতাই ড্যামেজ হয়ে যায়। তাই, সমালোচনা কীভাবে করছেন সেটার উপর টিমের মোরাল এবং উপদেশের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি নির্ভর করে।
*
ম্যাজিক মিথ্যা জেনেও কেন মজা লাগে?
ছোটবেলায় ম্যাজিক দেখে আমি অনেক অবাক হতাম। কিন্তু, যেই পরিমাণে অবাক হতাম; বড় হয়ে ঠিক সেই পরিমাণেই হতাশ হয়েছিলাম যখন আমি ম্যাজিকের কারসাজিগুলো জানতে পেরেছি। এখন কাউকে ম্যাজিক করতে দেখলে মনে মনে জানি যে, এটাতে নিশ্চয়ই কোনো কৌশল আছে! লোকটার কোনো অলৌকিক পাওয়ার আসলে নেই। তবুও যতক্ষণ আসল কৌশলটা অজানা থাকে, ততক্ষণ ঠিকই উপভোগ করি। একইভাবে আরও অনেক কিছু আমরা ভেতরে ভেতরে ঠিকভাবে জানলেও উপরে উপরে আমরা পারফর্মেন্সটা কিংবা অভিনয়টা দেখতে চাই।
এটা নিয়েই একটা হ্যাক এখানে শেয়ার করি। মানুষ নিজের কষ্টের কথা সবাইকে বলতে চায়, শেয়ার করতে চায়। মানুষ আসলে চায় যে অন্যরা তাদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করুক। আর এখানে আসল ব্যাপার হচ্ছে তারা একটু সহানুভূতি চায় এবং মনের কথাগুলো শেয়ার করতে চায়। তারা শ্রোতা চায় আসলে। কিন্তু, অনেক সময় কষ্টের কথা শেয়ার করতে গেলে অপর পাশের মানুষটি সমস্যার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে। অবশ্যই সমাধান দেয়ার উদ্দেশ্যটা মহৎ। কিন্তু, সাথে সাথে সমাধানের কথা শুরু না করে আপনি যদি খালি মন দিয়ে শুনেন, তাহলে মানস আরও অনেক বেশি খুশি হয়।