এক সময় নিচে অবস্থানরত জনসাধারণের মাঝখানে অতিকায় ও ভারী ঝুড়িটাকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হলো। বেশ বড়সড় যন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটাকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির বুকে কুয়াশা এমন গাঢ় হয়ে জমেছিল যার জন্য গায়ে কাটা দেওয়া কাজকর্ম কারো পকেই দেখা সম্ভব হলো না। এতে সবার মনেই কিছু না কিছু আক্ষেপ তো থেকেই গেল।
এক মিনিট দুমিনিট করে এসে আধঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেল।
ফ্যারিসীয় বহু নিচে অবস্থানরত স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে কয়েক মুহূর্ত নীরবে দাঁড়িয়ে রইল।
এক সময় চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্যারিসীয় বলল–এ যে দেখি বহু সময়ের ব্যাপার। আমাদের অনেক দেরি হয়ে যাবে। শেষপর্যন্ত কাঠোলিস আমাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেবে দেখছি!
তার কথা সমর্থন করে আবেল ফিত্তিম বলল–দেশে ফিরে আমাদের উপোষ করেই কাটাতে হবে দেখছি। পেটের ভাত যোগাড় করার কোনো সুযোগই থাকবে না। দাড়িতে আতর মাখা বন্ধ হয়ে যাবে, আর মন্দিরে গিয়ে সূক্ষ্ম বস্ত্র কোমরে জড়ানো পাটও ঘুচে যাবে। কী সমস্যার মুখোমুখিই যে আমাদের হতে হবে তা বে কিনারা পাচ্ছি না।
বেন-লেভি এতক্ষণ নিজেকে কোনোরকমে সামলে সুমলে রেখেছিল। এখন আর নিজেকে সামলে রাখা তার পক্ষ সম্ভব হলো না। শেষপর্যন্ত সে গালমন্দই করে বসল এক্কেবারে যাচ্ছেতাই কাণ্ড শুরু হয়ে গেছে দেখছি! অপদার্থ, বিশ্ব বখাটে! তারা কি আমাদের মালকড়ি, মানে টাকা পয়সা হজম করে দেওয়ার ধান্ধায় আছে নাকি?
আবেশ ফিত্তিম গম্ভীর মুখে প্রায় অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল–হুম! বেন- লেভি থামল না, বলেই চলল মালকড়ি মেরে দেবার ধান্ধা যদি নাও থাকে, হায় পবিত্র মোজেস!
কিছু সময় উত্তর্ণ হয়ে লক্ষ্য করে সে আবার মুখ খুলল–হায় পবিত্র মোজেস! তারা কি তবে গীর্জার শেঁকলগুলো ওজন করতে লেগে গেছে?
ফ্যারিসীয় এবার আরনিজেকে সংযত রাখতে না পেরে শেষে গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল–কী আশ্চর্য! কিছুই তো বুঝতে পারছি না। তারা শেষপর্যন্ত কোন্ ইঙ্গিত দিচ্ছে।–আর তুমি বুঝি বেন লেভি, –তুমিও টান?
এবার গিজকরিম টানতে আরম্ভ করল। টানের চোটে ক্রমে গাঢ় হয়ে জমতে থাকা কুয়াশা ভেদ করে ভারী বোঝাটা এদিক-ওদিক দোল খেতে খেতে ওপরের দিকে উঠে যেতে লাগল।
এক সময় এক ঘণ্টা পরে দড়িটার বিপরীত প্রান্তে কোনো একটা বস্তুকে দেখতে পাওয়া মাত্র বেন লেভি আচমকা সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল।
বুশোহ্ হে! বুশোহ্ হে! বুশোহ্ হে!
বুশোহ্ হে! ইস্ কী লজ্জার কথা! কী লজ্জার কথা! কিন্তু এ যে দেখছি এঙ্গোড়ির বনাঞ্চল থেকে নিয়ে আসা একটা অতিকায় ভেড়া। আর এটা জোহসোকাটি উপত্যকার মতো লোমশ ভেড়া। ঘাড় কাৎ করে ভালোভাবে দেখে নিয়ে আবার একই স্বরে সে বলে উঠল–হ্যাঁ, সে রকম লোমশ ভেড়াই বটে না।
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই আবেশ ফিত্তিম বলে উঠল–আরে এটা তো বুড়ো ধাড়ি ভেড়া নয়, বাচ্চা একেবারেই কম বয়স। তার পায়ের ভাঁজ আর ঠোঁট বাঁকানোর রকম সকম দেখেই আমি নিঃসন্দেহ হতে পারছি–নিতান্তই একটা বাচ্চা ভেড়া।
হুম্! ফ্যারিসীয় প্রায় অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল। আবেশ ফিত্তিম পূর্ব প্রসঙ্গের জের টেনে বলে চলল–এরচোখ দুটো কী সুন্দর। একমাত্র পেক্টোরলের মুক্তার সঙ্গেই এর তুলনা চলতে পারে। না, ঠিক বলা হলো না। পেক্টোরালের মুক্তোর চেয়েও সুন্দর–অনেক বেশি সুন্দর। আর মাংসের সাদ অবশ্যই হেনের মধুর মতোই সুস্বাদু আর উপাদেয়ও বটে।
ফ্যারিসীয় এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। সে বলল– এটাকে বালনের চারণভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যাক, যে কথা বলতে চাইছি– পৌত্তলিকরা কিন্তু আমাদের সঙ্গে খুবই ভালো ব্যবহার করেছে, অস্বীকার করতে পারব না।
মুহূর্তকাল নীরব থকে ফ্যারিসীয় এবার বলল–এক কাজ করা যাক। আমরা সমস্বরে মন্ত্র পাঠ করি, আপত্তি আছে?
মন্ত্র, অর্থাৎ স্তোত্র পাঠে কারোরই তো আপত্তি থাকার কথা নয়। ইতিমধ্যে গিজবারিম থেকে ফুট কয়েক নিচে ঝুড়িটা পৌঁছে গেল। ব্যস, ঠিক সে মুহূর্তে সচকিত হয়ে সবাই সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে দাঁড়িয়ে রইল। পরমুহূর্তেই সবাই দেখতে পেলঝুড়িটায় একটা শুয়োরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ বড়সড় আর নাদুস নুদুস একটা শুয়োরের বাচ্চা।
ব্যাপারটা দেখামাত্র তিনজনেরই চোখ ট্যারা হয়ে যাবার যোগাড় হলো। সবাই প্রায় সমস্বরেই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল–এবার এল এমনু! এবার এল এমনু!
তিনজনই একই সঙ্গে কথাটা বলেই হাতের দড়ির প্রান্তটা দুম করে ছেড়ে দিল।
ব্যস, দড়িটা আল্গা হওয়া মাত্র শুয়োরের বাচ্চাটা তর তর করে সোজা নেমে গিয়ে ফিলিস্থিনদের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।
এল এমনু! এল এমনু!–হে পরম পিতা, তুমি আমাদের সহায় হও! হায়! এ কী কেলেঙ্কারী ব্যাপার! উফ শুয়োর! শুয়োরের মাংস! এ মাংস যে আমাদের পক্ষে জিভে ঠেকানোও সম্ভব নয়।
এ টেল অব জেরুসালেম
সুউচ্চ পাহাড়ের গায়ে এক দুর্গ-শহর।
শত্রুসৈন্য দুর্গ-শহরটাকে ঘিরে রেখেছে। তারা পাহাড়ের শীর্ষদেশে অবস্থান করছে। শত্রু-শিবির থেকে নিচের দিকে তাকালে নজরে পড়ছে উঁচু, প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গ-শহরটা, আর ঐ একই স্থানে পাশাপাশি অবস্থান করছে শহর আর দুর্গটা।