তাই বুঝি? এ রকমটা মনে করার কারণ কী বল তো?
হ্যাঁ, কারণ তো অবশ্যই আছে। যাক, কারণটা বলছি, তবে ধৈর্য ধরে শোন কারণ, জায়গাটা অনেক উঁচুতে অবস্থিত, আর তার অবস্থান খাড়া জিরম পাহাড়টার শীর্ষদেশে। এখানে পাথর খোদাই করে করে গভীর পরিখা তৈরি করা হয়েছে। তারপর সেটাকে আরও খোদাই করে অধিকতর সুরক্ষিত করে তোলা হয়েছে। তার ভেতরের মালের ওপর সোজা ও লম্বা প্রাচীর গেঁথে। আর সেটার উচ্চতাও অবশ্যই লক্ষণীয়, যার ফলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা অধিকতর জোরদার হয়ে উঠেছে। শুধু কী এই? শ্বেতপাথরের বেশ কয়েকটা চৌকোনা গম্বুজ তৈরি করে সে প্রাচীরটার মাঝে মাঝে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম উচচতাবিশিষ্ট গম্বুজটার উচ্চতা ষাট হাত আর সবচেয়ে উঁচুটা একশো বিশ হাত। সব জেরুজালেমের সবচেয়ে উঁচু গম্বুজটার নাম এডম-বেজেক।
সাইমিয়ন তার সঙ্গি সাথীদের নিয়ে যখন এডুমি-বেজেক গম্বুজটার শীর্ষদেশে উপস্থিত হলো তখন তারা যে উচ্চতম স্থানটা থেকে নিচে অবস্থানরত শত্ৰু ছাউনিগুলোর দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করতে আরম্ভ করল, সেটার উচ্চতা কিয়সের পিরামিডের চেয়ে অনেক অনেক ফুট ওপরে অবস্থিত, আর বেলুস মন্দিরটার চেয়ে ফুট কয়েক বেশি উঁচু। অতএব সেটার উচ্চতা সম্বন্ধে অনায়াসেই ধারণা করে নেওয়া সম্ভব।
নিচের দিকে তাকালে মাথা ঘুরে-যাওয়া উচ্চতা থেকে নিচে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে ফ্যারীসয় চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল–হ্যাঁ, কথাটা খুবই সত্য যে, কাফেররা তো এক-একজন সমুদ্র উপকূলের এক-একটা বালির কন্টার সমতুল্য। অন্যভাবে বললে, সুবিশাল প্রান্তরে পঙ্গপাল যেমন অবস্থান করে ঠিক তেমনি তারাও হাজারে হাজারে লাখে-লাখে ছড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে রাজার উপত্যকা তো আর রাজার নিজের উপত্যকা নেই।
এ কী কথা! রাজার উপত্যকা তবে এখন কাদের?
আরে কথাটা অবাক হবার মতো শোনালেও খুবই সত্য।
ভালো কথা, রাজার উপত্যকা এখন কাদের দখলে গেছে?
এডমিন-এর উপত্যকায় পরিণত হয়ে গেছে।
তার কথা শেষ হতে-না-হতেই একজন যুদ্ধের সাজে সজ্জিত রোম সৈন্যের গলা শোনা গেল। সে রীতিমত কর্কশ ও হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে বলতে লাগল–রৌপ্য সেকালের ঝুড়ি, এখনও ওপরে রেখে দিয়েছ কেন?
তার কথার কোনো উত্তরই কেউ দিল না।
সে আবার একই সরবে চেঁচিয়ে বলল–ওই রৌপ্য সেকেলের ঝুড়িটাকে নিচে, এখানে নামিয়ে নিয়ে এসো।
মুহূর্তের জন্য থেকে কোনো উত্তর তার উদ্দেশ্যে ভেসে আসে কিনা লক্ষ করে নিয়ে রোমক সৈন্যটা পূর্বপ্রসঙ্গে জের টেনে আবার বলতে আরম্ভ করল রোমক মহাপুরুষ যে মুদ্রার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার যোগাড় হয়েছিলেন, চোয়াল বেঁকে যাওয়ার জো সে অভিশপ্ত মুদ্রাগুলোসমেত ঝুড়িটাকে ওপর থেকে এখানে নামিয়ে নিয়ে এসো। তোমাদের আচরণে আমি স্তম্ভিত হচ্ছি। আমাদের প্রভু পম্পেসুসের অনুগ্রহের প্রতিদান কি তোমরা এমনভাবেই দিতে চাচ্ছ? ভুলে যেও না আমাদের প্রভু যে অসীম কৃপাবশত তোমাদের পৌত্তলিক প্রার্থনা অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এবং প্রার্থনা শুনতে সম্মত হয়েছেন, তার বিনিময়ে তোমরা এভাবেই কৃতজ্ঞতা জানাতে উৎসাহি?
মুহূর্তের জন্য থেমে একটু দম নিয়ে সে আবার মুখ খুলল–শোন, এখন যা বলছি মন দিয়ে শোন–সত্যিকারের দেবতা ফিবুস এক ঘণ্টা রথে চেপে। পূর্ব আকাশে সূর্যদেব উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দূর্গ-প্রাকারে জড়ো হওয়া কি তোমাদের উচিত ছিল না? ঈডিপোল! তোমাদের আচরণে আমি যারপরনাই অবাক না হয়ে পারছি না। একটা কথা, তোমাদের কি ধারণা পৃথিবীবাসী কুকুরগুলোর সঙ্গে আদান প্রদান চালাবার জন্য প্রত্যেক কুকুর শালার ভাঙ বেড়ার গালে মু থুবড়ে পড়ে থাকা ছাড়া তোমাদের কি আর কোনোই করণীয় নেই? আমার তো মনে হচ্ছে, এটাই সত্যি। কি হল, সবাই যে নীরবে হাত গুটিয়ে কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে রইলে! যাও–ওই সেকেলে ঝুড়িটাকে নিচে নামিয়ে দাও। আমি তোমাদের বলছি, নামিয়ে দাও। আর একটা কথা, তোমাদের আজে-বাজে জিনিসগুলোর রং যেন লোভনীয় হয়, আর ওজনের দিকেও নজর রেখো, ঠিকঠাক থাকে যেন।
এল এলোহিম! এল এলোহিম! আবেগ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে কথাটা পর পর দুবার উচ্চারণ করেই ফ্যারিসীয় সংজ্ঞা হারিয়ে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ল। পরমুহূর্তেই সংজ্ঞাহীন আবস্থাতেই বার দুই কাতরে মন্দিরের দেওয়ালের গায়ে গিয়ে থামল।
এলো এলোহিম! দেবতা জবুখ কে? কার কথা বলছে ওই পাপাত্মাটা! কে সে? তুমি বুঝি বেন লেভি, জেন্টিলদের গ্রন্থগুলো তো তুমি পড়েছ, ঠিক কি না? আর টেরাফিমদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছ। কিন্তু ওই পৌত্তলিক কী বলছে, বলতে পার? সে কি নেরুগালের সম্বন্ধে বলছে? তা যদি নাই হয় তবে কী আসিমাহ সম্বন্ধে। তা না হলে নির্ভজ অথবা টাটকির কথা। তা না হলে এড্রামালে? তা না হলে এনামালেক? তা না হলে সুকোথ বেনিথ? তা না হলে ড্রাগন? তা না হলে বেলিয়াল? তা না হলে বালপিওর? আর এদের কথা না-ই হয়ে থাকে তবে কি বলজিবাবের কথা বলছে?
না, এদের কারো কথাই না। অবশ্যই এদের কথা বলতে চাইছে না। তবে খুবই সাবধান! সাবধান! করছ কী! দড়িটাকে আঙুলের ফাঁকে এত দ্রুত, এত বেশি পরিমাণে ছাড়ছ! কেন? অসুবিধা কি? অসুবিধা তো আছেই। দ্রুত নেমে আসা ঝুড়িটা যদি ওই মাথা বেরিয়ে থাকা পাথরগুলোর গায়ে ধাক্কা মারে তবেই সর্বনাশের চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ঝুড়ির যাবতীয় পবিত্র মালপত্র দুম দুম করে নিচে পড়তে আরম্ভ করবে। এক সময় দেখা যাবে খালি আর ভাঙা ঝুড়িটা নিচে নেমে এসেছে।