Norendra Nath although shot in several places was not mortally hit and fled down the stairs, out of the Hospital Compound and along an alley way towards the gate.
The prisoner Kanai Lal Dutt pursued him and shot him fatally through the back. He was then secured by a Eurasian Prisoner named Linton.
The District Magistrate, Mr. Marr immediately commenced a judicial enquiry in the case.
A Police investigation has been started but the accused have not as yet been questioned by the Police as to how they came into possession of the weapons.
The accused Kanai Lal Dutt is a native of Jantipara Serampore, Hooghly and Satyendra Nath Bose is a native of Midnapore where he was head of the “National Volunteers”.
A telegram has been sent to the Director, Criminal Intelligence, Simla, and a copy of this letter has also been sent to him.
A further report will be submitted.
I have the honour to be,
Sir,
your most obedient servant,
F L Halliday
Commissioner of Police, Calcutta.
.
নরেন হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হল যুদ্ধকালীন দ্রুততায়। জুরি তাঁদের রায়ে কানাইকে দোষী সাব্যস্ত করলেন। ম্যাজিস্ট্রেট ফাঁসির সাজা শোনালেন ৯ সেপ্টেম্বর। সত্যেনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতা ছিল। দণ্ডাদেশ নির্ধারণে মামলা পাঠানো হয়েছিল হাইকোর্টে। উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ডই বরাদ্দ করেছিল সত্যেনের জন্যও।
কানাইকে ফাঁসির সাজা শোনানোর সময় বিচারক প্রথামাফিক জানালেন, উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। কানাইয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আবেদন? কীসের আবেদন?’
কুড়ি বছর বয়সি কানাইয়ের ফাঁসির দিন ধার্য হল ১৯০৮-এর ১০ নভেম্বর। কাকভোরে জেলে উপস্থিত হলেন খোদ নগরপাল হ্যালিডে সহ লালবাজারের পদস্থ কর্তারা। সকাল ছ’টায় কানাইলালকে নিয়ে যাওয়া হল ফাঁসির মঞ্চে। কানাই ছিলেন অচঞ্চল, তাপ-উত্তাপহীন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে পাওয়া যায়, কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দেওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন স্মিতহাস্য।
ফাঁসির সময় উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার পরে বারীনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘How many more do you have like him?’
এমন আরও কতজন আছে কানাইয়ের মতো? নিরুত্তর ছিলেন বারীন, মৃদু হেসেছিলেন শুধু।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার গতিপ্রকৃতি তুমুল আগ্রহের জন্ম দিয়েছিল বঙ্গসমাজে। নরেন-হত্যায় অভিযুক্ত দুই যুবককে কেন্দ্র করেও সর্বস্তরে স্রোত বইছিল সহানুভূতির। যা অজানা ছিল না প্রশাসনের। কানাইলালের মরদেহ নিয়ে মূল রাজপথ দিয়ে শোভাযাত্রার অনুমতি দিলেন না নগরপাল। টালি নালার পার্শ্ববর্তী গলিঘুঁজি দিয়েই শ্মশানযাত্রা হবে, নির্দেশ জারি হল। আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় ফোর্ট উইলিয়াম থেকে তলব করা হল রিজার্ভ ফোর্সের তিনশো জওয়ানকে।
কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে কি আর বলপূর্বক রাশ টানা যায়? গিয়েছে কখনও? মরদেহ যখন পৌঁছল গলির গলি তস্য গলি পেরিয়ে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে, মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে প্রতীক্ষারত জনসমাগম। আট থেকে আশি নেমে এসেছে রাস্তায়, শহিদবরণে। আশেপাশের বাড়িগুলির বারান্দা থেকে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে।
মহিলারা প্রস্তুত ফুল-মালা-ঘি-চন্দন নিয়ে। বয়স্কদের অধিকাংশের হাতে ভগবদ্গীতা। তরুণদের সম্মিলিত ‘বন্দে মাতরম’-এর গর্জন পরিণত শব্দব্রহ্মে। শহিদের দেহ ছুঁতে চাওয়ার আকুতিতে উত্তাল অপ্রশস্ত পথপরিসর। যানচলাচল স্তব্ধ জনস্রোতে।
তুঙ্গস্পর্শী উন্মাদনাকে কোনওমতে নিয়ন্ত্রণে এনে যখন শেষকৃত্য সম্পন্ন হল যুবকের, ফের ঘটল আবেগের অগ্ন্যুৎপাত। পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাওয়া দেহের ছাইভস্ম দখলে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল উন্মত্ত জনতা। ক্রোধ-ক্ষোভ-শোকের বিরল ত্র্যহস্পর্শের সাক্ষী থাকল শ্মশানপ্রাঙ্গণ।
.
সত্যেনের ফাঁসির দিন নির্দিষ্ট হয়েছিল ২১ নভেম্বর। কানাইলালের শেষকৃত্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সত্যেনের অন্তিম ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন হবে জেল প্রাঙ্গণেই। তা-ই হয়েছিল। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ছাব্বিশ।
ফাঁসির দিনকয়েক আগে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন সত্যেনের মা। সত্যেন রাজি ছিলেন না।
—না, মা আসবে না। কিছুতেই না। আমি মায়ের সঙ্গে দেখা করব না।
—না কেন?
—মা কান্নাকাটি করলে দুর্বল হয়ে পড়ব। বেশ, আসুক, কিন্তু কোনও চোখের জল নয়।
প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন গর্ভধারিণী। জেলে পুত্রের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতে এক বিন্দুও অশ্রুব্যয় করেননি।
.
মূল মামলার বিচারপর্বের চাপান-উতোরের বিবরণী দিয়ে দীর্ঘায়িত করছি না লেখা। রায় ঘোষিত হয়েছিল ১৯০৯-এর ৬ মে। মোট ৩৭ জন অভিযুক্তের মধ্যে বারীন ঘোষ এবং উল্লাসকর দত্তের ফাঁসির সাজা হয়েছিল, উচ্চ আদালতে যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে। হেমচন্দ্র দাস সহ দশজনেরও হয়েছিল দ্বীপান্তরের সাজা। চারজনের সাজা হয়েছিল দশ বছরের কারাবাসের, তিনজনের সাত বছরের। বাকিরা মুক্তি পেয়েছিলেন।