“Red stains on the carpet/ red stains on the knife Oh Dr Buck Ruxton/ You murdered your wife Then Mary she saw you/ You thought she would tell So Dr Buck Ruxton/ You killed her as well.”
অনিল ন্যাশনাল লাইব্রেরি থেকে ছুটলেন ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (FSL)। মুষ্টিমেয় মামলাতেই তখনও প্রয়োগ হয়েছে ‘Photographic Superimposition’-এর। কিন্তু হয়েছে তো! পঞ্চম শুক্লার ক্ষেত্রে কেন করা যাবে না?
FSL-এর তৎকালীন ডিরেক্টর ছিলেন অধ্যাপক ড. নির্মলকুমার সেন। অনিল সবিস্তার জানালেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় কঙ্কাল থেকে লিঙ্গনির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। উচ্চতা এবং বয়স-নিরূপণও সম্পূর্ণ। পঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষদেহ, পাঁচ ফিট ছয়। যা মিলে যাচ্ছে পঞ্চমের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে। প্রশ্নাতীত শনাক্তকরণের জন্য, সেই প্রাক-DNA যুগে, রাক্সটন মামলার পদ্ধতির শরণ নেওয়া ছাড়া উপায় কী আর? দেখবেন একবার চেষ্টা করে?
ড. সেন অক্লান্ত পরিশ্রম করলেন। ভারতে সেই প্রথম কোনও মামলার তদন্তে ব্যবহৃত হল ‘সুপারইম্পোজ়িশন’ পদ্ধতি। প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসকদের হাতযশে যে কত অভিযুক্ত পর্যবসিত হয়েছে অপরাধীতে, হিসাবের অতীত। আলোচ্য মামলায় যেমন।
সুপারইম্পোজ়িশন কী? সহজ ভাষায়, কোনও এক অবয়বের কোনও একটি জায়গায় একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অন্য একটি অবয়বের ওই জায়গার ওই নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলে যাওয়া, মিশে যাওয়া নিখুঁতভাবে। মানবদেহের ক্ষেত্রে এই বিন্দুগুলিকে বলা হয় nodal point। যা শারীরগত, এবং ব্যক্তিবিশেষে এক এক জনের ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান প্রকৃতিগত পার্থক্যে। বিন্দুর সঙ্গে যদি মেলাতে হয় বিন্দুকে, দুটি অবয়বকে একই মাপের, একই আকৃতির করে নেওয়া জরুরি। যে কারণে পঞ্চম শুক্লার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটিকে নেগেটিভের সাহায্যে পরিবর্তিত করা হল quarter size-এ। উদ্দেশ্য, খুলির পরিমাপের সঙ্গে ছবির সাযুজ্য স্থাপন।
এখানে দু’-একটি কথা প্রাসঙ্গিক। আমাদের মুখ, নাক, কপাল, চিবুক ও কান আলাদা প্রত্যেকের, হাড়ের গঠন অনুযায়ী। কারও কপাল চওড়া, কারও মাথা বড়। কারও চিবুক ছোট, কারও গলা স্বাভাবিকের তুলনায় মাপে বড়। কাজ করা হচ্ছে দুটি অবয়ব নিয়ে। কপালের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা nodal point-কে যদি চিবুকের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে বা এক গালের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে যদি অন্য গালের একটি বিন্দুর সঙ্গে এক সরলরেখায় যোগ করা যায় এবং দুটি অবয়বের ক্ষেত্রেই যদি দৈর্ঘ্য এক হয়, তবে বলা যায় যে দুটি অবয়ব একই ব্যক্তির।
পঞ্চম শুক্লার করোটি
পঞ্চমের ক্ষেত্রে কোয়ার্টার সাইজের ছবিটিকে স্থাপন করা হল ক্যামেরার ঘষা কাচের (Ground Glass) নীচে। চিহ্নিত করা হল nodal point সমূহ। রেখাঙ্কিত করে নেওয়া হল অবয়বকে। ছবিটির উপর অতঃপর বসানো হল একটি স্ট্যান্ড। খুলিটিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনা হল একই অক্ষে। এবং দেখা গেল, খুলির নোডাল পয়েন্টগুলির সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে অবয়বের নোডাল পয়েন্ট। মুখাবয়বের গড়ন, নাক-কান-গলা-চিবুক, সব। প্রাপ্ত খুলি এবং ছবিটি যে একই ব্যক্তির, প্রমাণিত হল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায়। তর্কের অবকাশ ছিল না বিন্দুমাত্র।
মৃত্যুর এগারো দিন পরে উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেহের শনাক্তকরণ। তা-ও প্রথম বিশ্বের তুলনায় অনগ্রসর দেশে, প্রযুক্তির নিরিখে তুলনায় অনুন্নত পরিসরে, সাড়া পড়ে গিয়েছিল ভারতের পুলিশ মহলে।
বর্তমান সময়ে তদন্তে ‘সুপারইম্পোজ়িশন পদ্ধতির’ কম্পিউটার-নির্দেশিত প্রয়োগ নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে, এদেশে অচিন্তনীয় ছিল বিজ্ঞানভাবনার এই অভিনব প্রয়োগশৈলী। যাঁর দূরদৃষ্টি চালিকাশক্তি ছিল সাফল্যের নেপথ্যে, সেই অনিল ব্যানার্জি প্রয়াত হয়েছেন দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু জীবদ্দশাতেই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক তদন্তের।
ভারতের পুলিশ মহলে তদন্তপ্রক্রিয়ার উৎকর্ষের সিলমোহর পড়ত ‘Indian Police Journal’-এ বিবরণী স্থান পেলে। ডাকসাইটে আইপিএস অফিসার, স্বনামধন্য আইনবিদ বা যশস্বী চিকিৎসক ছাড়া লেখকতালিকায় স্থান পাবেন কেউ, ঘটত কদাচিৎ।
ইনস্পেকটর অনিল ব্যানার্জিকে পঞ্চম শুক্লা হত্যা মামলার নির্যাস পত্রিকায় লিপিবদ্ধ করার সসম্মান আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সম্পাদকমণ্ডলী। অনিলবাবু লিখেছিলেন তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ। শীর্ষক, ‘Camera identifies human skull’। যাতে ধরা ছিল অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলোর আখ্যান, যা আজও অবশ্যপাঠ্য তদন্তশিক্ষার্থীর।
বিচারপর্বে প্রশ্ন উঠেছিল ব্যবহৃত পদ্ধতির আইনি বৈধতা এবং প্রমাণমূল্য নিয়ে, ধোপে টেকেনি। নিম্ন আদালত প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন রামলোচনকে। হাইকোর্ট সাজা হ্রাস করেছিলেন যাবজ্জীবন কারাবাসে। যে রায় অপরিবর্তিত থেকেছিল সুপ্রিম কোর্টে।
কলকাতা পুলিশকে যে তুলনা করা হত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে, সর্বজনবিদিত। এই অভিধাপ্রাপ্তিতে অবদান আছে তদন্তে বিরল সাফল্যের নজিরসৃষ্টিকারী অসংখ্য মামলার, যার মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবে এই পঞ্চম শুক্লা হত্যা। ঘটনাচক্রে যার কিনারা হয়েছিল স্কটল্যান্ডেরই একটি ব্রিজের নীচে পড়ে থাকা দেহাংশের রহস্যভেদ প্রক্রিয়ার অনুসরণে।