—ইয়োর গেম ইজ় আপ..
—হোয়াট? হোয়াট গেম আর ইউ টকিং অ্যাবাউট? আই ডোন্ট গেট দিস …
কৌতূহলী ভিড় জমার আগেই পকেট থেকে আই কার্ড বার করেন সৌম্য, মেলে ধরেন দুবাই থেকে সদ্য কলকাতায় আসা যুবকের সামনে। সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট, কলকাতা পুলিশ।
জোঁকের মুখে নুন পড়লে যা অবধারিত, চোখমুখ নিমেষে রক্তশূন্য হয়ে যায় যুবকের। মহিলারও। মিনিটখানেকের মধ্যেই একটা টাটা সুমো এসে থামে গেটের সামনে। যাতে দু’জনকে চাপিয়ে গাড়ি বেরয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে।
গন্তব্য? কোথায় আর? গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার!
.
গোওওওল! বল জড়িয়ে গেছে জালে। তারপর যা হয়, গোলদাতাকে ঘিরে উচ্ছ্বাস এক দলের। গোলকিপারকে নিয়ে হা-হুতাশ বিপক্ষের।
শীতশেষের ফেব্রুয়ারিতে ফুটবলের তেমন চল নেই কলকাতা ময়দানে। ব্যাটে-বলেরই দাপট থাকে ওসময়টা। ময়দানের এই মাঠটায় ছেলেগুলো তবু দিব্যি ফুটবল পেটাচ্ছে। অফ সিজ়ন প্র্যাকটিস?
মাঠের বাইরে একটা চেয়ারে বসে লাল-কালো ট্র্যাকসুট পরিহিত যিনি নজর রাখছেন ছেলেগুলোর উপর, তাঁর দিকে এগিয়ে যান দুই যুবক। নিয়মরক্ষার আলাপ-পরিচয়ের পর সোজাসুজি আর্জি জানান।
—দাদা, আমাদের একটা ভাল স্ট্রাইকার চাই। বলটা যে মোক্ষম সময়ে তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারবে। গোল করার লোক নেই আমাদের টিমে।
লাল-কালো ট্র্যাকসুট চুপ করে শুনলেন। এবং তারও মিনিটখানেক পর সামান্য হাসলেন। সে হাসি দেখে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ মনে পড়ে যায় দুই যুবকের। শুণ্ডির রাজা মেয়ের জন্য পাত্র হিসেবে গুপীকে ভেবে রেখেছেন শুনে বাঘার মাথায় বজ্রাঘাত। উদভ্রান্ত বাঘাকে আশ্বস্ত করে হল্লারাজার টিপ্পনী, ‘রাজকন্যা কি কম পড়িতেছে?’ অবিকল সেই হাসি ভদ্রলোকের মুখে। শুধু ‘রাজকন্যা’-র বদলে ‘ফুটবলার’ বসিয়ে দিতে হবে, এই যা। শেষ দৃশ্য ‘আর কম পড়িতেছে?’—মার্কা হাসি।
—স্ট্রাইকার? পাচ্ছেন না? তা বাজেট কত আপনাদের?
—আপনিই বলুন মিল্টনদা, কত দিতে হবে? আসলে সঞ্জয়ের হঠাৎ চোট হয়ে গেল। সঞ্জয়, আমাদের টপ গোলস্কোরার। লিগামেন্ট টিয়ার, মাঠে ফিরতে ফিরতে বেশ কয়েক মাস তো বটেই। এদিকে পাঁচ দিন পরে ফাইনাল… ভাল স্ট্রাইকার ছাড়া কোনও চান্স নেই আমাদের।
—খেলা কোথায়? কত মিনিটের?
—পাইকপাড়ায়। এই খেপ টুর্নামেন্টটা প্রতি বছর এ সময়েই হয়। সত্তর মিনিট। থার্টিফাইভ – থার্টিফাইভ।
—হুঁ, বিদেশি ছেলে আছে একটা। বেনসন। গত বছর কলকাতা লিগের সেকেন্ড ডিভিশনে খেলেছে। তেরোটা গোল করেছে। দু’পায়েই ভাল শট আছে। হেডটাও ভাল। সিক্স ফিট প্লাস… হাইটটা কাজে লাগাতে জানে।
হাতে যেন চাঁদ পান দুই যুবক।
—ওর কথা আমরাও শুনেছি। ওকে পেলে তো কথাই নেই কোনও… ইন ফ্যাক্ট, ওর জন্যই আসা… দিন আমাদের ছেলেটাকে… প্লিজ় দাদা… আমরা জানি, আপনি যেখানে খেলতে বলেন, সেখানেই খেলে ও।
তৃপ্তির হাসি হাসেন ‘দাদা’। মধ্যপঞ্চাশের মিল্টনদা। ‘প্রাচীন ময়দান প্রবাদ’ অনুযায়ী যিনি এখানে-ওখানে ছোটখাটো ‘খেপ’ টুর্নামেন্টে ফুটবলার সাপ্লাইয়ে ডক্টরেট করে ফেলেছেন।
—ম্যাচ প্রতি পাঁচ হাজার নেয়। পোষাবে?
সোজাসাপটা কথা। তেল মাখতে গেলে কড়ি ফেলতে হবে। মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন দুই যুগল।
—পাঁচ? একটা ম্যাচের জন্য একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে… কিন্তু আপনি যখন বলছেন গোলটা ভাল চেনে, তখন না হয় পাঁচই দেব। ফাইনালটা জিততেই হবে যে ভাবে হোক। প্রেস্টিজ়ের ব্যাপার..
ফের একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন মিল্টনদা।
—আমি যখন বলছি মানে? না ভাই .. আমি বলছি বলে দিতে হবে না। নিজেরাই দেখে নিতে পারেন। পরশু বেনসন একটা খেপ খেলতে যাবে। ইচ্ছে করলে গিয়ে দেখে নেবেন। টাকাপয়সার কথা না হয় তারপর হবে।
—না… মানে… আমরা ঠিক ওভাবে বলতে চাইনি… আসলে অনেকগুলো টাকা তো… কোথায় খেলা পরশু?
—হাওড়ায়। সাঁতরাগাছি পেরিয়ে। বিকেল তিনটেয়।
হাওড়ার মাঠটা ঠিক কোথায়, মিল্টনের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে হাঁটা দেন ওঁরা দু’জন। যাঁদের একজন প্রশ্ন করেন অন্যকে, ‘সেভেন্টি মিনিটের ম্যাচে পাঁচ হাজারটা একটু বাড়াবাড়ি না!’
উত্তরও আসে চাঁচাছোলা, ‘ওটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। দশ চাইলেও দিতে হত, বিশ চাইলেও দিতে হত, জানিসই তো!’
.
—আমরা জাস্ট ক্লুলেস স্যার… এমন তো কখনও হয়নি আগে!
শুনতে শুনতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে নগরপালের। এটা তো নতুন ধরনের ক্রাইম। এ শহরে অন্তত এর আগে হয়নি। বাকি দেশেও হয়েছে কি? মনে তো হয় না।
আইসিআইসিআই ব্যাংকের RCU (Risk Containment Unit, গ্রাহক এবং ব্যাংক, আদানপ্রদানের প্রক্রিয়া যাতে দুই তরফেই থাকে যথাসম্ভব ঝুঁকিহীন, সেই শাখা)-এর প্রধান রীতিমতো ঘামছিলেন ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে।
—আমরা বুঝতে পারছি না কী করব … ফিনান্সিয়াল লস কুড়ি লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। হেড অফিস থেকে রোজ ফোন, রোজ মেল। পাগল হয়ে যাওয়ার জোগাড়। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, টেকনিক্যাল কোনও প্রবলেম, যেটা ইন্টারন্যালি সর্ট আউট হয়ে যাবে। কিন্তু হচ্ছে না… প্লিজ় ডু সামথিং স্যার।
—কী ব্যাপার? কীসের লস?
—সংক্ষেপে, বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য কোনওভাবে জেনে যাচ্ছে জালিয়াতরা। ধরুন, আমেরিকার ব্যাংকে মার্কিন নাগরিক রামের টাকা রাখা আছে। রামের কাছে সেই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড আছে। সেই কার্ডের যাবতীয় তথ্য চুরি হয়ে ঢুকে যাচ্ছে এদেশের কোনও ব্যাংকের গ্রাহক শ্যামের ক্রেডিট কার্ডে। রামের কার্ডের ব্যালান্স নিয়ে শ্যাম দেদার কেনাকাটা করে চলেছে। এইভাবেই যদুর টাকা নিয়ে মধু।