অন্যান্য নাইটক্লাবে যা নিয়ম থাকে সচরাচর, এখানেও তাই। বন্ধ হওয়ার আধঘণ্টা আগে ‘লাস্ট ড্রিঙ্ক’-এর অর্ডার নেওয়া হয়। নেশার মাত্রা বেশি হয়ে যায় কারও কারও। ক্লাব বন্ধ হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বার কাউন্টারে গিয়ে হইহুল্লা এসব জায়গায় নিত্যনৈমিত্তিক। ঝামেলা সামলানোর জন্য মুশকো চেহারার ‘বাউন্সার’-ও থাকে একাধিক। বাড়াবাড়ি হলেই অর্ধচন্দ্র দেওয়ার জন্য তৈরি।
ঝামেলায় অবশ্য জড়াল না জুডিথদের গ্রুপের কেউই। সুজয় আর মাইকেল শুধু ম্যানেজারকে অনুরোধ করল আর একটা ড্রিঙ্কের জন্য। ম্যানেজার দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়লেন, ‘নো।’ জুডিথের আরও একটু থাকতে ইচ্ছে করছিল। দারুণ কেটেছে সময়টা। কিন্তু বড্ড তাড়াতাড়ি যেন শেষ হয়ে গেল। এই তো কিছুক্ষণ আগে ঢোকা হল, এর মধ্যে দুটো বেজে গেল! নামে নাইটক্লাব, তা হলে সারারাত কেন খোলা রাখে না এরা? রাত দুটোয় রাত শেষ হয়ে যায় বুঝি?
ক্লাব থেকে বেরিয়ে পার্ক স্ট্রিটে যখন পা রাখলেন জুডিথরা, ঘড়ির কাঁটা সদ্য দুটো ছুঁয়েছে। সকলেরই নেশা হয়েছে কমবেশি। পা টলমল অল্পবিস্তর। যে যার বাড়ি বা হোটেলে ফেরার ট্যাক্সি খুঁজছে যখন, মাইকেলই প্রস্তাবটা দিল, ‘মাই প্লেস ইজ় ক্লোজ়বাই। হোয়াই ডোন্ট ইউ গাইজ় ড্রপ ইন ফর সাম মোর ফান? হেই বার্থডে গার্ল, হোয়াট সে?’ সোৎসাহে সায় দিল সুজয়ও, ‘ইয়েস ইয়েস.. হোয়াই নট?’ জুডিথ বন্ধুদের দিকে তাকালেন। উইলিয়ামস বলল, ‘ইয়োর কল, উই আর টু টায়ার্ড ফর দিস।’ জুডিথ তখন দোটানায়। অত্যন্ত ভদ্রভাবে বাড়িতে আরও কিছুক্ষণ পার্টি করার প্রস্তাব দিচ্ছে মাইকেল। গত কয়েক ঘণ্টায় সুজয় বা মাইকেল, কেউই কোনওভাবে শালীনতার গণ্ডি পেরোয়নি কোনও অছিলায়। আর জন্মদিনের রাত তো বছরে একবারই আসে। দ্বিধাগ্রস্ত জুডিথ একটু ভেবে বলে ফেললেন, ‘ওকে ফাইন।’ বোঝেননি, ওই মুহূর্তের দ্বিধা এবং সম্মতি কী ঘোর সর্বনাশ ডেকে আনতে যাচ্ছে। বোঝেননি, নেশাকাতর অবস্থায় সব প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলতে নেই। সে যতই থাকুক সাময়িক ভাল-লাগা।
বাকিরা বেরিয়ে গেল যে যার মতো। মাইকেলের ফ্ল্যাট কাছেই। ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পাশের রাস্তায়। হেঁটেই সুজয়-মাইকেলের সঙ্গে ফ্ল্যাটে পৌঁছলেন জুডিথ। রাত তখন কত হবে? প্রায় আড়াইটে। ছোট্ট দু’-কামরার অগোছালো ফ্ল্যাট। ঢুকেই মাইকেল বসার ঘরের একটা ক্যাবিনেট থেকে বার করল ওয়াইনের বোতল, ‘লেটস হ্যাভ আ ফিউ মোর।’ প্রথম গ্লাসটা অর্ধেক শেষ করতে না করতেই ওয়াশরুমে ছুটতে হল জুডিথকে। খাদ্য-পানীয় যা যা উদরস্থ হয়েছিল সন্ধে থেকে, সব বেরিয়ে গেল। পরের একঘণ্টা আচ্ছন্নের মতো সোফায় বসেছিলেন জুডিথ। মনে আছে, মাইকেল জলের গ্লাস এগিয়ে দিয়েছিল, ‘ইউ ওকে?’ মনে আছে, সুজয়-মাইকেল ‘জয়েন্ট’ ধরাচ্ছিল একের পর এক। ধোঁয়ার চোটে দমবন্ধ লাগতে শুরু করেছিল জুডিথের। সাড়ে তিনটে নাগাদ একরকম জোর করেই উঠে পড়েছিলেন, ‘আই নিড টু গো নাউ।’ উঠে পড়েছিল সুজয়ও, ‘শিয়োর, আইল ড্রপ ইউ হোম।’ সুজয়ের সঙ্গে ট্যাক্সিতে ওঠার পর পিছনের সিটে নিজেকে এলিয়ে দেওয়া মাত্র চোখ আপনিই বুজে এসেছিল জুডিথের।
চোখ খুলেছিল ট্যাক্সির ব্রেক কষার শব্দে। বিল মেটাতে মেটাতে সুজয় বলছিল, ‘লেটস গো জুডিথ, উই আর হোম।’ মানে? ‘হোম’ মানে? হোটেলে ফেরার কথা তো! এটা কোথায়? একটা বড় রাস্তা। তার উপর তিনতলা একটা বাড়ি। যেটা দেখিয়ে সুজয় বলছে, ‘দিস ইজ় মাই প্লেস। ইউ লুক টায়ার্ড। ফ্রেশেন আপ আ বিট… আই উইল ড্রপ ইউ ব্যাক টু দ্য হোটেল।’
এটা কী হল? ওই আচ্ছন্ন অবস্থাতেও বিপদসংকেত টের পাচ্ছিলেন জুডিথ। কিন্তু সে সংকেতে সাড়া দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছিল না শরীর। অত রাতের ওই শুনশান অজানা-অচেনা রাস্তায় কী করবেন? চিৎকার করার মতো শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই শরীরে। নেশার দাপটে যেন অসাড় হয়ে গেছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সব। সুজয় হাত ধরে জুডিথকে নিয়ে গিয়েছিল বাড়িটার তিনতলায়। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ঠোক্কর খেয়েছিলেন বারকয়েক। সুজয় কোমরে হাত দিয়ে সামলে নিয়েছিল।
ছিমছাম পরিপাটি একটা ঘর। ঢুকেই বেশ জোরে মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে দিয়েছিল সুজয়। আর খুব কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘উড ইউ কেয়ার ফর অ্যানাদার ড্রিঙ্ক?’ জুডিথ মাথা নেড়েছিলেন। এলিয়ে পড়েছিলেন বিছানায়। সুজয় যখন উঠে এসেছিল বিছানায়, হাত রেখেছিল গালে, ওই আধোজাগা অবস্থাতেও সহজাত নারী-ইন্দ্রিয় জানান দিয়েছিল, এ স্পর্শ নিছক বন্ধুত্বের নয়। সুজয় যখন ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছিল গায়ের জোরে, আপ্রাণ প্রতিরোধে জুডিথ শুধু বলতে পেরেছিলেন, ‘নো… প্লিজ় নো…’। বাকিটা ব্ল্যাকআউট।
আচ্ছন্ন ভাবটা কেটেছিল সকালে। শরীরী প্রতিক্রিয়া এবং বিস্রস্ত পোশাক জানান দিয়েছিল জুডিথকে, নেশাতুর অবস্থার সুযোগ নিয়ে রাতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বলপূর্বক সহবাস করেছে সুজয়, একাধিকবার। সোজা ভাষায়, ‘রেপ’। চূড়ান্ত বিধ্বস্ত অবস্থায় কোনওভাবে নিজের জামাকাপড় গুছিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পথ আটকেছিল সুজয়। যার হাতে তখনও, ওই ভোর সাতটায় মদের গ্লাস, ঠোঁটে সিগারেট। চোখেমুখে অনুতাপের চিহ্নমাত্র নেই। স্বাভাবিক গলায় বলেছিল, ‘হোয়াটস রং? আই জাস্ট ওয়ান্টেড টু গেট ইউ গোয়িং।’