শ্রাবণীর ঈদৃশ আচরণে শেষ পর্যন্ত সুসীমের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছিল।
সুসীম বেশ একটু কড়াভাবেই বলেছিল, এটা তোমার সত্যিই কি একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে না শ্রাবণী।
কি বলতে চাও তুমি? স্পষ্ট তীক্ষ্ণকণ্ঠে প্রশ্নটা করে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়েছিল শ্রাবণী।
তা নয় তো কি! এতগুলো লোক আমরা এ বাড়িতে রয়েছি, একা তুমিই কেবল টিকতে পারছো না! কিন্তু কেন বলতে পারো? আর এ সময় হঠাৎ দুম করে তুমি চলে গেলে লোকেই বা ভাববে কি?
এর মধ্যে লোকের ভাবাভাবির কি থাকতে পারে শুনি?
থাকতে পারে বৈকি। তাছাড়া আমি বলেছিই তো, দুটো দিন সবুর কর, আমি নিজে গিয়ে তোমাকে শিলং-এ রেখে আসবো।
না, আমাকে তুমি ছেড়ে দাও।
দুটো দিনও তুমি অপেক্ষা করতে পারবে না?
না, না—
সত্যি আমি আশ্চর্য হচ্ছি শ্রাবণী, আমার মনের এই অবস্থা—
মনের এ অবস্থা যে তোমার হবে সে তো তুমি জানতেই।
কি বললে?
ঠিকই বলছি। ভুলতে যদি তাকে পারবেই না জানতে, তবে কেন আমাকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে গিয়েছিলে বলতে পার?
শ্রাবণী!
হ্যাঁ, হ্যাঁ– কার কাছে তুমি কি ঢাকা দিতে চাইছো? এ নাটক সৃষ্টি করবার আমাকে নিয়ে তো কোন প্রয়োজনই ছিল না!
তুমি থামবে শ্রাবণী?
তিক্ত একটা চাপা তিরস্কারের মতই যেন কথাটা বলে ওঠে সুসীম।
কি, চোখ রাঙাচ্ছ—কিন্তু সে সুযোগ আমি তোমাকে দেব না। শোন, কালই আমি চলে যাচ্ছি–
ঠিক আছে, যেও।
রাগ করেই অতঃপর সুসীম ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিল। এবং বাকী রাতটা সে পথে পথেই ঘুরে বেড়িয়েছে উদ্ভ্রান্তের মত।
.
সকালে গৃহে ফিরেই টের পেয়েছে সুসীম, আজই চলে যাবে শ্রাবণী। সব কিছুর তোড়জোড় সে দেখে এসেছে। ওকে গৃহে ফিরতে দেখে ওর বোন সুধা ঘরে এসে ঢুকল। মাথার চুল রুক্ষ, ক্লান্ত বিপর্যস্ত চেহারা সুসীমের।
দাদা!
কি?
সারারাত কাল কোথায় ছিলে?
সুসীম কোন জবাব দেয় না বোনের প্রশ্নের।
তোমরা কি শুরু করেছে জানি না! এদিকে বৌদি দেখছি সব গোছগাছ করে ফেলেছে আজই রাত্রে সে নাকি শিলং-এ তার মাসীর ওখানে যাচ্ছে!
ভুল হয়ে গিয়েছে সুধা, জীবনে বোধ হয় এত বড় ভুল আর হয় নি আমার। আর ভুল যখন হয়েছেই, তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকে করতে হবে বৈকি।
বৌদি আর ফিরবে না শুনলাম দাদা!
আমি জানি—
তুমি জান?
হ্যাঁ, জানি।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে সুধা। ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
তারপর এক সময় মৃদুকণ্ঠে আবার ডাকে, দাদা!
কি?
কি হয়েছে আমাকে বলবে?
আমাকে বিরক্ত করিস না সুধা, আমাকে একটু একা থাকতে দে।
সুধা বের হয়ে যায় ঘর থেকে।
কিন্তু সুসীমও ঘরে থাকতে পারে না। সে-ও বের হয়ে পড়েছিল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
১৬-১৮. পঞ্চশরের কীর্তি
কিরীটী এসে ঘরে ঢুকলো।
সুসীমের সঙ্গে কিরীটীর পূর্বেই পরিচয় হয়েছে, বিষ্ণু দের সঙ্গে কিরীটীর পরিচয় করিয়ে দিল মৃণালই।
কিরীটী বললে, ভালই হয়েছে ডাক্তার, তুমি আমাকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছো। আমিও চাইছিলাম তোমাদের তিনজনকে একসঙ্গে মিট করতে।
ফোনে আমি সে-সময় সব কথা তোমাকে বলি নি কিরীটী। কাল রাত্রে আর একটা দুর্ঘটনা প্রায় ঘটে গিয়েছিল আর কি–
জানি। মৃদুকণ্ঠে কিরীটী বলে।
জানো! সবিস্ময়ে তাকায় মৃণাল কিরীটীর মুখের দিকে।
হ্যাঁ, জানি। বিশাখা দেবীর ওপরে কাল রাত্রে অ্যাটেম্পট হয়েছিল, এই তো?
হ্যাঁ। কিন্তু তুমি—
বিশাখা দেবী সকালেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন। অবিশ্যি ঐ ধরনের একটা কিছু যে শীঘ্রই ঘটবে, বিশেষ করে আলফ্রেডের গ্রেপ্তারের পর, সেটা আমি কতকটা অনুমান করেছিলাম।
তুমি অনুমান করেছিলে?
হ্যাঁ। শুধু তিনি কেন, আমি অনুমান করেছিলাম তোমাদের যে কোন একজনের ওপরেও হয়তো হত্যাকারী অ্যাটেম্পট নিতে পারে। কিন্তু যাক সে কথা, তুমি জানলে কি করে? তোমাকেও বুঝি বিশাখা দেবী ফোন করেছিলেন?
না, না—সুসীমই তো এসে একটু আগে বললে!
সুসীমবাবু?
বিস্ময়ে কিরীটী সুসীমের মুখের দিকে তাকাল।
সুসীমও তাকায় কিরীটীর মুখের দিকে।
Is it true, সুসীমবাবু?
কিরীটী প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ, আমি সকালে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম, গিয়ে শুনি সব। সসীম বললে।
মৃদু হেসে কিরীটী বলে, ও, তাই বলুন। আপনি তাহলে গিয়েছিলেন আজ সকালেই বিশাখা দেবীর বাড়ি!
হ্যাঁ।
যাক সেকথা। অ্যাটেম্পটু হয়েছিল—শেষ পর্যন্ত কিছু তো ঘটে নি!
কিরীটী একটু যেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই কথাটা বলে।
সুসীম বলে, কিন্তু কি বলছেন আপনি মিঃ রায়, কিছু ঘটে নি বটে, তবে ঘটতে তো পারত!
তা হয়তো পারত, তবে ঘটে নি যখন–
তুমি যাই বল কিরীটী, আমার কিন্তু ব্যাপার দেখে কেমন হাত-পা পেটে সেঁধুবার যোগাড় হয়েছে!
ভয় নেই। মৃদু হেসে কিরীটী বোধ করি মৃণালকে সান্ত্বনাই দেয়।
ভয় নেই?
না।
আবার একসময় কিরীটী বলে, সেরাত্রের আপনাদের সকলের বক্তব্যই অবিশ্যি কিছু সাধন দত্তর কাছ থেকে এবং কিছু আপনাদের মুখ থেকেও শুনেছি, তবু আরো কিছু আমার আপনাদের সকলকেই জিজ্ঞাস্য আছে।
কিরীটীর মুখের দিকে তিনজনেই প্রায় একই সঙ্গে তাকালো।
কিরীটীও নিঃশব্দে সকলের মুখের উপরে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে বললে, আপনারা হয়তো জানেন না এখনো, সুনন্দা চ্যাটার্জীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত থেকে একটা বিশেষ ব্যাপার জানা গিয়েছে
কি—কি জানা গিয়েছে? মৃণালই প্রশ্ন করে।
যদিও তার গলায় সরু সিল্ক-কর্ডের ফাঁস ছিল এবং মৃত্যুর কারণও যদিচ শেষ পর্যন্ত ফঁসের দ্বারা স্ট্র্যাংগল করে শ্বাসরোধ করেই, তথাপি আরও কিছু আছে, ফাস দেবার পূর্বে she was given morphine–