অ্যারেস্ট! বা হোয়াট্ ফর?
যথাসময়েই জানতে পারবে।
.
১৪.
আলফ্রেড ঘোষকে গ্রেপ্তার করবার পরের দিনের ঘটনা।
বিষ্ণু দে কলকাতায় ফিরে এলো।
মৃণাল সমস্ত ব্যাপারটাই জানত, তার মুখ থেকেই বিষ্ণু দে সব শুনলো। এবং এও সে শুনলো মৃণালের মুখেই যে, সুনন্দা চ্যাটার্জীর হত্যার ব্যাপারে কিরীটী তাদের সকলকেই নাকি সন্দেহ করেছে। এবং মৃণালকে কিরীটী বলে রেখেছে, বিষ্ণু দে কলকাতায় ফিরে এলেই তার সঙ্গে কিরীটী একবার দেখা করতে চায়।
বিষ্ণু দে বললে, কিন্তু আমি-আমি তার সঙ্গে দেখা করে কি করবো?
দেখা করা তোমার কর্তব্য। মৃণাল বলে।
কর্তব্য বলছো! শুধায় বিষ্ণু দে।
হ্যাঁ।
কিন্তু কেন?
কারণ সেই দুর্ঘটনার রাত্রে আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম—
কিন্তু আমরা ছাড়াও তো সে রাত্রে সেখানে আরো অনেকেই উপস্থিত ছিল।
তা অবিশ্যি ছিল, তবে আমরা তার অর্থাৎ সুনন্দার বিশেষ পরিচিত ছিলাম।
তাতে কি এমন অপরাধ হলো?
অপরাধ কিছু নয়—
তবে?
হয়তো আমাদের মত তোমাকেও তার কিছু জিজ্ঞাস্য থাকতে পারে। চলই না, একবার দেখা করে আসবে।
বলছো চল, কিন্তু সত্যি বলছি মৃণাল, ব্যাপারটা আমার কেন যেন আদপেই ভাল লাগছে!
স্পষ্ট একটা বিরক্তিই যেন বিষ্ণু দের কণ্ঠস্বরে প্রকাশ পায়।
ভাল লাগালাগির প্রশ্ন তো এখানে নয়, দেখা করাটা তোমার কর্তব্য।
বেশ, তাহলে সুসীমকেও ডেকে পাঠাও।
সুসীম!
হ্যাঁ, যেতে হয় একসঙ্গে তিনজনই যাবো–
মৃণাল উঠে গিয়ে ঘরের কোণে রক্ষিত ফোনের রিসিভারটা তুলে সুসীমের নম্বরে ডায়েল করতে যাবে, এমন সময় দরজার গোড়ায় সুসীমকে দেখা গেল।
এই যে মৃণাল, বিষ্ণু তোমরা দুজনেই আছে—এদিকে কাল রাত্রে একটা সাংঘাতিক ব্যাপার–
আবার সাংঘাতিক ব্যাপার কি হলো? মৃণাল শুধায়।
কাল রাত্রে বিশাখার life-এর ওপরে নাকি একটা attemept হয়েছিল–
সে কি!
দুজনেই সুসীমের কথায় চমকে ওঠে।
হ্যাঁ। But thank God, she has narrowly escaped! একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে—
কিন্তু ব্যাপারটা কি একটু খুলে বলবে? অধীর কণ্ঠে মৃণালই প্রশ্ন করে।
ঘুমন্ত অবস্থায় তার গলাতে ফাঁস দিয়ে—
ফাঁস! অর্ধস্ফুট একটা চিৎকার করে ওঠে যেন বিষ্ণু দে।
হ্যাঁ, ফাঁস পরানো হয়েছিল। তবে হঠাৎ বিশাখার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আততায়ীকে ধাক্কা দিয়ে সে ফেলে দেয়—
বল কি সুসীম, how horrible! যা বলছে সত্যি? বিষ্ণু শুধায়।
সত্যি।
তারপর? মৃণাল শুধায়।
তারপর আর কি, হত্যাকারী উধাও হয়ে যায়!
দেখেছিল—মানে দেখতে পেয়েছিল বিশাখা হত্যাকারীকে?
না। ঘরের আলো নেভানো ছিল—
মৃণালই এতক্ষণ কথা বলে যাচ্ছিল। বিস্ময়ে হতভম্ব বিষ্ণু নিঃশব্দে শুনছিল, এবারে বিষ্ণু প্রশ্ন করলো, কিন্তু তুমি—তুমি সে কথা জানলে কি করে সুসীম?
আমি?
হ্যাঁ।
আমি বিশাখার বাড়িতে গিয়েছিলাম আজ সকালে, দেখি বেচারা আকস্মিক ঘটনায় আর ভয়ে একেবারে যেন সিঁটিয়ে রয়েছে।
তা তো হবারই কথা। মৃণাল সহানুভূতির সঙ্গে জবাব দেয়।
কিন্তু আমি তো মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না মৃণাল, বিশাখার উপরে আবার হত্যার attempt হলো কেন!
মৃণাল সহসা যেন কোন জবাব দিতে পারে না। সুসীম, মৃণাল ও বিষ্ণু অতঃপর তিনজনই যেন কেমন মুহ্যমানের মত বসে থাকে।
একটু আগে যে মৃণাল ও বিষ্ণু কিরীটীর ওখানে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল, ঐ মুহূর্তে যেন সে কথাটাও তারা বিস্মৃত হয়।
একে তো সুনন্দার সেরাত্রে আকস্মিক হত্যার ব্যাপারটাই সকলকে কেমন স্তম্ভিত বিমূঢ় করে দিয়েছে, তার ওপর এই নতুন দুঃসংবাদ। ভেবে পায় না যেন ওরা, হঠাৎ বিশাখার ওপরই বা আবার কেন অটেমপ্ট নেওয়া হলো!
আর কেই বা নিল? তবে কি এও সুনন্দার হত্যাকারীরই কাজ? কিন্তু কেন?
সুনন্দাকেই বা কেন হত্যা করা হলো, আবার বিশাখার উপরেই বা গতরাত্রে হত্যার প্রচেষ্টা হলো কেন?
ঘটনাপ্রবাহ কোথায় চলেছে?
.
সত্যি, ব্যাপারটা শুধু আকস্মিকই নয়—রীতিমত একটা চিন্তারও বৈকি।
পনের দিনও হয় নি, মৃত্যু তাদের একজনকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে, এবং সেই দুশ্চিন্তা আর আশঙ্কা এখনো যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো তাদের ঘিরে রয়েছে। ইতিমধ্যেই আবার মৃত্যুর কালো ছায়া তাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল।
কেন–কেন এ মৃত্যুর পদসঞ্চার!
বিষ্ণু দে আর মৃণাল সেন দুজনকেই যেন স্তব্ধ বিমূঢ় করে দিয়েছে সুসীমের দেওয়া সংবাদটা। হত্যাকারী তাদের মধ্যে থেকে একজনকে হত্যা করে নিশ্চিন্ত হয় নি, আবার সে তার মৃত্যুস হাতে রাত্রির অন্ধকারে অলক্ষ্যে আর একজনের পশ্চাতে এসে গতরাত্রে দাঁড়িয়েছিল!
নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে সুসীমই আবার কথা বলে, শ্রাবণী ভয়ানক ভয় পেয়ে গিয়েছে সংবাদটা শুনে। সে আর এক মুহূর্ত কলকাতায় থাকতে চায় না। শিলং-এ তার এক মাসী আছেন, ভাবছি কালই তাকে পাঠিয়ে দেবো সেখানে। যাক্, কিছুদিন সেখানে গিয়েই না হয় থেকে আসুক।
মৃণাল বলে, সেই ভাল, তাকে সেখানেই পাঠিয়ে দাও সুসীম।
সেই ব্যবস্থাই করছি।
কিন্তু কিরীটী রায়কে সর্বাগ্রে গতরাত্রের সংবাদটা দেওয়া প্রয়োজন। মৃণাল বলে।
ঠিক বলেছো মৃণাল।
এক কাজ করলে হয় না! মৃণাল সুসীমের মুখের দিকে চেয়ে শুধায়।
কি?
ফোন করে এখানেই একবার কিরীটী রায়কে আসতে বললে হয় না!
সেই ভালো, তাই বরং ফোন করে দাও। সুসীম সায় দেয়।