মুহূর্তের জন্য কিরীটীর পার্শ্বে উপবিষ্ট মৃণালের দিকে তাকিয়ে বিশাখা বলে, হ্যাঁ বলেছিলাম।
যা বলেছেন আপনি, সে-সম্পর্কে আপনার কোনরকম মতদ্বৈধ নেই—You are sure!
তাই মনে হয়েছিল সে-সময়—
কিন্তু ভদ্রলোক দেখতে কি ডাক্তারের মতো ছিলেন?
সেই রকমই।
অতঃপর কয়েকটা মুহূর্তের জন্য একটা স্তব্ধতা।
বিশাখা দেবী, শুনেছি আপনি নিহত মিস্ চ্যাটার্জীর সঙ্গে একই কলেজে অধ্যাপনার কাজ করতেন—কথাটা কি সত্যি?
সত্যি।
কতদিন একত্রে একই কলেজে অধ্যাপনার কাজ করছেন আপনারা?
তা বছর চার হবে।
A prety long time—কি বলুন!
তাই।
আপনাদের উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল নিশ্চয়ই?
না। তীক্ষ্ণকণ্ঠে জবাব দেয় বিশাখা।
ঘনিষ্ঠতা ছিল না, অথচ বলছেন একই কলেজে দুজনে আপনারা দীর্ঘ চার বছর ধরে—
তা করলেই বা!
না, তাই বলছিলাম—একই কলেজে দীর্ঘ চার বছর ধরে কাজ করেও আপনাদের পরস্পরের মধ্যে কোন ঘনিষ্ঠতা ছিল না-rather strange!
কেন, এতে strange হবার কি থাকতে পারে?
তা একটু মনে হয় বৈকি! কিরীটী বলে।
মনে হবার তো কোন কারণ নেই।
কিন্তু বিশাখা দেবী–
বিশাখা কিরীটীকে কথা শেষ করতে দিল না, সে বললে, আমি তাকে ঘৃণা করতাম—সমস্ত অন্তর দিয়ে ঘৃণা করতাম।
কণ্ঠস্বরে বিশাখার যেন একটা তিক্ত ঘৃণা আর অবরুদ্ধ আক্রোশ ঝরে পড়লো।
ঘৃণাই যে শুধু আপনি তাকে করতেন বিশাখা দেবী তাই নয়, মনে হচ্ছে আক্রোশও ছিল তার প্রতি আপনার একটা!
বিচিত্র নয়। যদি জানবার আপনার সৌভাগ্য হতো মিঃ রায়, কি নীচ মন আর কুৎসিত চরিত্র তার ছিল—she was not only a vamp, a filthy snake too! স্বাভাবিক ভাবে একজন মানুষ আর একজন মানুষের ঐ ধরণের বীভৎস মৃত্যুতে দুঃখ পায়, আমিও পেয়েছি তবু বলবো, she deserved it! Rather I should say, she has been rightly served!
কথাগুলো একটানা বলে অন্যদিকে মুখ ফেরালো বিশাখা।
মৃণাল বোধ হয় সহ্য করতে পারে না আর, কি যেন বলবার চেষ্টা করে, কিন্তু বিশাখা—তুমি–
একটা থাবা দিয়ে যেন সঙ্গে সঙ্গে মৃণালের বক্তব্য থামিয়ে দিল বিশাখা।
বললে, থাম থাম মৃণাল—তোমাদের ক বন্ধুর কাছে সে demi-goddess ছিল জানি। পুরুষ তোমরা, তাই তার সত্যিকারের বীভৎস চেহারাটা কখনো তোমাদের চোখে পড়ে নি—পড়লে বুঝতে how obscene and how filthy she was!
অকস্মাৎ ঐ সময় কিরীটী ধীর শান্ত কণ্ঠে কথা বলে ওঠে, বিশাখা দেবী, সুনন্দা চ্যাটার্জীর নিহত হওয়ার ব্যাপারে আপনি কি তাহলে কাউকে সন্দেহ করেন?
সন্দেহ!
হ্যাঁ।
সন্দেহের কথা যদি বলেন মিঃ রায় তো বলবো, সকলকেই আমি করি—এমন কি নিজেকে পর্যন্ত আমি সন্দেহ করি!
নিজেকেও আপনি সন্দেহ করেন?
নিশ্চয়ই। কারণ many a time I sincerely wished that I could kill her! কত সময় মনে হয়েছে তাকে আমি হত্যা করি—strangle her to death!
অবরুদ্ধ একটা উত্তেজনায় যেন হাঁপাতে থাকে বিশাখা।
সঙ্গে সঙ্গেই কিরীটী আর কোন প্রশ্ন করে না বিশাখাকে। একটু সময় দেয় যেন।
.
বিশাখা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসেছিল।
বেশ কিছুক্ষণ একটা স্তব্ধতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হবার পর একসময় আবার মৃদুকণ্ঠে কিরীটী বলে, বিশাখা দেবী, আজ আর আপনাকে বিরক্ত করবো না বেশী। একটি মাত্র প্রশ্ন আপনাকে আমার আর করবার আছে।
বিশাখা ফিরে তাকালো কিরীটীর মুখের দিকে।
একটু আগে আপনি ডাক্তারকে বললেন, তোমাদের কবন্ধু বন্ধু বলতে কাকে কাকে আপনি exactly mean করছেন?
কেন, ওরা বিশেষ তিনজন—যারা ওদের বন্ধুমহলে Three Musketeers বলে পরিচিত।
Three Musketeers!
হ্যাঁ–মৃণাল, সুসীম আর নীরেন!
নীরেনবাবুকে তাহলে আপনি চিনতেন?
চিনতাম বৈকি।
Excuse me, আর একটি কথা—নীরেনবাবুর সঙ্গে যে সুনন্দা চ্যাটার্জীর পরিচয় ছিল, আপনি কি তা জানতেন?
কেন জানব না, খুব জানতাম!
তুমি জানতে বিশাখা? মৃণাল বিশাখার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে।
জানতাম বৈকি। কেন, তুমি জানতে না?
না।
আশ্চর্য! সে বর্মা থেকে এলে তো তার বেশীর ভাগ সময় ওর বাড়িতেই কাটত। দুনিয়াসুদ্ধ সবাই ব্যাপারটা জানত, আর বলতে চাও তুমিই জানতে না—nonsense!
সত্যিই আমি জানতাম না, মৃণাল বলে, আর সুসীমও জানত না।
Another hypocrite-কাজে এক-মুখে আর!
কি বলছো বিশাখা?
হ্যাঁ, হ্যাঁ—another hypocrite হচ্ছে তোমাদের ঐ সুসীম নাগ!
চল হে ডাক্তার, এবারে ওঠা যাক। ওঁকে অনেকক্ষণ বিরক্ত করেছি। বলতে বলতে কিরীটী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
.
১২.
ঐদিনই সন্ধ্যাবেলা।
কিরীটীর বাড়িতে তার দোতলার বসবার ঘরে সাধন দত্ত আর কিরীটী দুটো চেয়ারে মুখোমুখি বসে সুনন্দা চ্যাটার্জীর হত্যা-ব্যাপার নিয়েই আলোচনা করছিলেন।
সাধন দত্ত বলছিলেন, সেদিন উৎসবের রাত্রের সেই ম্যাজিসিয়ান ভদ্রলোকের ব্যাপারটার কিছুতেই কোন সলুশনে যেন আমি আসতে পারছি না মিঃ রায়! ব্যাপারটা so mysterious–
কিরীটী মৃদু হেসে বলে, মিস্টিরিয়াস!
নয়? একঘর নিমন্ত্রিতের মধ্যে লোকটা ম্যাজিক দেখিয়ে গেল, আর ব্যাপারটা বাড়ির লোকেদের কারোরই নজরে পড়ল না—এমন কি ডাঃ সেনেরও নয়!
নজরের কথা ছেড়ে দিন মিঃ দত্ত, তবে আপনি ব্যাপারটার মধ্যে যতখানি গুরুত্ব আরোপ করছেন, আমার মনে হয় তার কিছুই নয়—
তার মানে? কি আপনি বলতে চান মিঃ রায়?