কাকে সন্দেহ করবো!
কাকে করবে তা বলি কি করে? তবে করো কিনা সেইটাই শুধু জিজ্ঞাসা করছি!
না।
অর্থাৎ সন্দেহ করতে পারো এমন কোন নাম মনে পড়ছে না, এই তো! বেশ আমি কয়েকটা নাম করি-ধর বিশাখা দেবী, শ্রাবণী দেবী, সুসীম, নীরেন–
কি বলছো কিরীটী, এরা—after all এরা কেন সুনন্দাকে হত্যা করতে যাবে!
তারপরেই যেন দুম্ করে কিরীটী বললে, কিন্তু তুমি?
আমি!
বিস্ময়ে বিস্ফারিত নয়নে তাকায় মৃণাল কিরীটীর মুখের দিকে।
হ্যাঁ তুমি—তুমিও তো পার তাকে হত্যা করতে!
কথাটা বেশ স্পষ্ট ও সহজকণ্ঠে কিরীটী বললেও, কৌতুকে যেন তার চোখের পাতা দুটো নাচছিল তখন।
আমি হত্যা করবো সুনন্দাকে!
কেন, অসম্ভব কি?
কি বলছো কিরীটী?
স্বাভাবিক হ্যাঁ, তাই বলছি!
স্বাভাবিক?
কিরীটী বলে, কি জান ডাক্তার, মানুষের অবচেতন মনের অন্ধকার গলিখুঁজিতে কখন যে কোন্ লিঙ্গা নখর বিস্তার করে, তা সে নিজেও টের পায় না। এই ধর না আমার কাছে তোমার আসাটা! কেন তুমি এসেছো আমার কাছে?
কেন—
এসেছো তুমি এ ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করেছে বলেই—
তার মানে?
মানে কি তুমি জান না?
কি বলতে চাও?
বলতে চাই—
কিন্তু কিরীটীর মুখের কথাটা শেষ হলো না, সুসীম এসে ঘরে ঢুকলো।
কি হলো মিঃ নাগ, চাবিটা পেলেন? কিরীটী শুধায়।
আশ্চর্য! চাবিটা তো ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে পেলাম না মিঃ রায়!
পেলেন না?
না।
সেটা তাহলে বোধহয় খুনীর পকেটেই রয়ে গিয়েছে!
সুসীম বা মৃণাল কিরীটীর কথার কোন জবাবই যেন খুঁজে পায় না। কেবল দুজনে দুজনের মুখের দিকে নিঃশব্দে তাকায়।
কিন্তু এখানে আর নয় সুসীমবাবু, চলুন আপনার এই বাথরুমের পাশের ক্লোরুমটা একবার দেখবো।
চলুন।
.
ক্লোকরুমটাও নেহাৎ আকারে একেবারে ছোট নয়। তবে একটু লম্বা প্যাটার্নের। ক্লোমটার মধ্যে অবিশ্যি বেশী কিছু জিনিসপত্র ছিল না। একটা বড় সাইজের ড্রেসিং টেবিল, একটা আলমারি ও গোটাকয়েক স্টীলের কালো রংয়ের ট্রাঙ্ক এবং একটা আলনা।
ঘরের চারিদিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে কিরীটী শুধায়, এ ক্লোব্রুমটা যেন মনে হচ্ছে আজকাল আর ব্যবহার হচ্ছে না মিঃ নাগ!
না, বছর দুয়েক ধরে ওপরের হলঘরটায় অফিস করায় এটা আর ব্যবহার হয় না।
চাবি দেওয়াই থাকতো, না খোলাই থাকতো ঘরটা?
খোলাই থাকে।
খোলা থাকলেও ঘরটা নিয়মিত ঝাড়পোঁছ হয় বলে তো মনে হচ্ছে না?
তা বোধ হয় হয় না।
কিরীটী এবারে ড্রেসিং টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল এবং তার দুপাশের দুটো টানা টেনে একের পর এক খুললো।
দুটো টানাই একেবারে খালি। টানার হ্যাণ্ডেলে ধুলো জমে ছিল, হাতে সেই ধুলো লাগে কিরীটীর। হাতের ধুলোটা অন্য পকেট থেকে আর একটা রুমাল বের করে মুছতে মুছতে কিরীটী বলে, এ ঘরটা আপনার অনেকদিন মনে হচ্ছে ঝাড়পোঁছ হয় না মিঃ নাগ!
এ ঘরটা তো ব্যবহার হয় না। তাই হয়তো চাকররা—
মনোযোগ দেয় না এ ঘরটায়। স্বাভাবিক। ঠিক আছে, চলুন এবারে বাইরে যাওয়া যাক।
.
কিরীটীকে নিয়ে সুসীম তার নীচের পারলারে বসালো।
একটু পরে হরপ্রসাদ ও তার স্ত্রী সুধাও এলেন।
দুচারটে মামুলি কথাবার্তার পর একসময় কিরীটী সকলকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে এক এক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো।
প্রথমেই সুধা।
সুধাকে বলে, আচ্ছা সুধা দেবী, আপনার তো সুনন্দা চ্যাটার্জীর সঙ্গে পরিচয় ছিল?
হ্যাঁ।
কি ধরনের মেয়ে ছিল সে?
নসিয়েটিং! কখনো তাকে আমি স্ট্যাণ্ড করতে পারি নি।
কেন বলুন তো? তার স্বভাব-চরিত্র কি তেমন সুবিধার ছিল না?
তা জানি না, তবে এটা জানি, পুরুষকে নাচানোই ছিল তার স্বভাব। তার কোন–ইংরেজীতে যাকে বলে—প্রিন্সিপল চরিত্রে ছিল না।
আচ্ছা সুধা দেবী, সেরাত্রে কে একজন আমন্ত্রিতদের মধ্যে নানা ধরনের তাসের ম্যাজিক দেখাচ্ছিলেন, আপনি তাঁকে দেখেছিলেন?
না।
আর একটা কথা, আপনার দাদার বন্ধু ডাঃ সেন, নীরেন সেন আর বিষ্ণু দে—এঁদের সকলের সঙ্গেই বোধ হয় আপনার পরিচয় ছিল?
ছিল। তবে বেশী আলাপ যদি বলেন তো একমাত্র ডাঃ সেনের সঙ্গেই—
এঁদের তিনজনের মধ্যে কেউ তাসের ম্যাজিক জানেন কি?
কখনো শুনি নি তো!
আচ্ছা আপনি যেতে পারেন। সুসীমবাবু—আপনার দাদাকে এ ঘরে পাঠিয়ে দেন যদি!
দিচ্ছি।
সুধা বের হয়ে গেল ঘর থেকে।
.
সুসীম নাগ।
দেখুন সুসীমবাবু, কিরীটী বলে, আপনার ও মিস্ সুনন্দা চ্যাটার্জী সম্পর্কে সব কথাই শুনেছি ডাঃ সেনের কাছ থেকে। তাই সে-সব কথা নয়—অন্য কয়েকটা প্রশ্ন আপনাকে আমি করবো। আচ্ছা আপনার বন্ধুদের মধ্যে কাউকে কি আপনি সুনন্দা চ্যাটার্জীর মৃত্যুর ব্যাপারে সন্দেহ করেন?
না।
নীরেনবাবুকে?
না।
আচ্ছা সেই ম্যাজিসিয়ান সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
ব্যাপারটা এখনো আমার কাছে রহস্যপূর্ণ।
কিন্তু there was somebody—এটা তো আপনি স্বীকার করবেনই।
অনেকেই যখন দেখেছে—
হুঁ। আচ্ছা সেরাত্রে শেষ কখন আপনার সুনন্দা চ্যাটার্জীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল?
রাত পৌনে এগারটা হবে বোধ হয়।
কোথায় দেখা হয়েছিল?
হলঘরের সামনের বারান্দায়।
একস্যাক্টলি কোথায়?
ঐ দোতলার ক্লোরুমটার সামনে একা রেলিংয়ে হাত রেখে সে দাঁড়িয়ে ছিল।
কোন কথা হয়েছিল সে-সময় তার সঙ্গে আপনার?
হয়েছিল।
কি কথা?
বলেছিল ঘরের মধ্যে স্টাফি বোধ হওয়ায় সে ঐখানে খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে—