হ্যাঁ, বাবার লাইব্রেরী এটা। বই পড়ার একটা নেশা ছিল বাবার।
সুসীম মৃদুকণ্ঠে বলে।
আচ্ছা মিঃ নাগ—
বলুন!
নীরেনবাবু মানে আপনাদের বন্ধু নীরেন সেন আপনাদের বান্ধবী সুনন্দা দেবীকে হত্যা করেছে বলে কি আপনার মনে হয়?
স্বাভাবিকভাবে মনে হয় না, তবে–
তবে?
নীরেন আমাদের সহপাঠী বন্ধু বটে, তবে তার সবটুকুই কি আমরা জানি, না সেটা সম্ভব!
তা তো বটেই।
মৃণালকেও আমি তাই বলছিলাম—
চলুন মিঃ নাগ, আপনার সেই হলঘর ও বাথরুমটা একবার আমি দেখতে চাই।
নিশ্চয়ই, চলুন!
.
প্রথমেই ওরা দোতলার সেই হলঘরে যায়।
হলঘরটির চারপাশে একবার দৃষ্টিপাত করে প্রথমেই প্রশ্ন করে কিরীটী, ঐ যে আলমারিগুলো দেখছি, সেরাত্রে কি ঐভাবেই আলমারিগুলো ছিল মিঃ নাগ?
হ্যাঁ।
ঐভাবেই বরাবর রয়েছে?
না, উৎসবের জন্য আলমারিগুলোকে ঘরের একধারে place করা হয়েছিল জায়গার জন্যে–
আলমারিগুলোর মধ্যে কি আছে?
অফিসের ফাইল, কাগজপত্র।
এটা তাহলে আপনার অফিস-ঘর হিসাবেই সাধারণতঃ ব্যবহৃত হয় বলুন।
হ্যাঁ।
কিরীটী লক্ষ্য করে দেখলো আলমারিগুলো স্টীলের।
কিরীটী অতঃপর আলমারিগুলোর পিছনে গিয়ে দেখলো, সেগুলো একেবারে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড় করানো নয়, আলমারি ও দেওয়ালের মাঝখানে বেশ কিছুটা জায়গার ব্যবধান আছে।
সেদিন এই হলঘরেই বোধ হয় নিমন্ত্রিতদের বসবার জায়গা হয়েছিল?
হ্যাঁ, কিছু সোফা আর চেয়ার পেতে বসবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
সেগুলো সরিয়ে ফেলেছেন মনে হচ্ছে!
হ্যাঁ, নীচের অফিস-ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুসীম জবাব দেয়।
অতঃপর কিরীটী গিয়ে ইয়েল-লক চাবি দিয়ে দরজা খুলে হলঘরের সংলগ্ন বাথরুমের মধ্যে ঢুকলো। বাথরুমের ও ঘরের মধ্যবর্তী দরজার উপরার্ধে মোটা কাচ বসান।
সুসীম ও মৃণাল কিরীটীকে অনুসরণ করে।
বাথরুমটা নেহাৎ ছোট নয়। বেশ বড় সাইজের বাথরুম। কিরীটী লক্ষ্য করে, বাথরুমের মধ্যে বেসিনের ঠিক ওপরেই দেওয়ালে যে আয়নাটা রয়েছে সেটা একেবারে দরজাটার মুখোমুখি বসানো।
কিছুক্ষণ সেই আয়নাটার দিকে তাকিয়ে থাকে কিরীটী। তারপর বাথরুমের দরজা দুটো পরীক্ষা করে। দুটো দরজাতেই ইয়েল-লক লাগানো।
মিঃ নাগ!
বলুন।
সেরাত্রে বাথরুমের দুটো দরজাই খোলা ছিল বোধ হয়?
হ্যাঁ, যদি কারো প্রয়োজন হয়—
তা তো বটেই। আচ্ছা মিঃ নাগ, আপনার বান্ধবী বিশাখা দেবী আপনার এ বাড়িতে পূর্বে কখন এসেছেন?
বহুবার।
আচ্ছা মনে পড়ে আপনার, বাথরুমটা কখনো তিনি ব্যবহার করেছেন কিনা?
তা বোধ হয় করেছে।
সুনন্দা চ্যাটার্জী?
সেও এসেছে এবং বাথরুমও সে ব্যবহার করেছে।
তাহলে দেখছি, এ বাথরুমটা কারোরই অপরিচিত ছিল না!
না, তা ছিল না।
কথা বলতে বলতে কিরীটী বাথরুমটার চারিদিকে ইতস্তত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল।
আবার একসময় কিরীটী বলে, মিঃ নাগ, সেরাত্রের পর এ কদিন এই বাথরুমটা কি ব্যবহৃত হয়েছে?
না মিঃ রায়, সেই দুর্ঘটনার পর এই হলঘরের দিকে কেউ আসে নি।
কিন্তু এই বাথরুমটাও কি ব্যবহৃত হয় নি?
না, বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল। তা ছাড়া–
সুসীমের শেষের কথায় কিরীটী যেন একটু আগ্রহ সহকারেই ফিরে তাকালো সুসীমের দিকে।
সুসীম এবারে যেন ইতস্তত করেই বলে, সেই দুর্ঘটনার রাত্রের পর থেকে এদিকটায় বড় একটা কেউই আসে নি–
কেন?
আমি অবিশ্যি শুনি নি, তবে অনেকেই নাকি এদিকটায় রাত্রে কিসের শব্দ শুনেছে—
সহসা ঐ সময় কিরীটী এগিয়ে গিয়ে ঘরের কোণে মেঝে থেকে একটা কর্কশূন্য এক ড্রাম সাইজের হোমিওপ্যাথিক ঔষধের শিশি পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে সেই রুমালটা দিয়ে সন্তর্পণে চেপে ধরে তুলে নিল।
মৃণাল এগিয়ে আসে, বলে, কি?
একটা হোমিওপ্যাথিক ঔষধের শিশি। গায়ে দেখছি লেবেল আঁটা আছে—থুজা টু হাড়ে! শিশিটা দেখছি ফেটে গিয়েছে। এ বাড়িতে রিসেন্টলি কেউ থুজা ব্যবহার করেছিল বলে জানেন নাকি মিঃ নাগ?
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তো এ বাড়িতে কেউ ব্যবহার করে না মিঃ রায়!
তবে শিশিটা আপনার বাড়ির বাথরুমের মধ্যে এলো কি করে?
কি জানি! বলতে পারছি না তো!
কিরীটী এবারে মৃণালের মুখের দিকে ফিরে তাকালো, ডাক্তার, তোমার হোমিওপ্যাথিক সম্পর্কে কোন জ্ঞান আছে?
শুনে শুনে কিছু জানি। মৃণাল জবাব দেয়।
হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রে থুজার ইনডিকেশন কি জান? Undesirable and unwanted growth নাকি রিমুভ করা হয় থুজার সাহায্যে! মৃদু হেসে শিশিটা রুমাল সমেতই জড়িয়ে পকেটে রাখতে রাখতে কথাটা বলে কিরীটী।
তারপর পুনরায় কিরীটী সুসীমের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, এই বাথরুমের চাবি কার কাছে সেরাত্রে ছিল?
বললাম তো এইমাত্র আপনাকে মিঃ রায়, চাবি সেরাত্রে খুলেই রাখা হয়েছিল। তবে পাশেই ক্লোক্রমের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে চাবিটা রেখে দিয়েছিলাম।
চাবিটা একবার নিয়ে আসুন তো!
এখুনি নিয়ে আসছি—সুসীম বাথরুমের অন্য দ্বারপথে বের হয়ে গেল।
সুসীম বাথরুম থেকে বের হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই কিরীটী পার্শ্বেই দণ্ডায়মান মৃণালের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ডাক্তার, তুমি এ ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ কর?
মৃণাল একটু অন্যমনস্ক ছিল। তাই একটু চমকেই কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে শুধায়, কোন্ ব্যাপারে?
তোমাদের বান্ধবী সুনন্দা দেবীর হত্যার ব্যাপারে?