কার কাছে আবার—আজ অফিসে গিয়েই তো শুনলাম।
আজ কখন অফিসে গিয়েছিলেন আপনি? কিরীটী এবারে প্রশ্নটা করল।
কেন, দুপুরবেলা।
আপনার দাদা কোন সংবাদ পাননি?
গড নোস!
আপনি দেননি?
নো স্যার।
কেন?
কেন আবার কি? ইট ইজ দেয়ার হেডেক, নট মাইন। কথাটা বলে সুশান্ত সাহা ঘর থেকে। বের হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু কিরীটীর ইঙ্গিতে সুখময় তাকে ডাকল, সুশান্তবাবু, কোথায় যাচ্ছেন?
উপরে।
কিরীটী বলে, এখন যাবেন না।
যাব না? বাট হোয়াই? কেন যাব না বলুন তো? তাছাড়া who are you?
আমি থানার ও সি—সুখময় বললেন।
O.C.–I see! তা আমি উপরে যাব না কেন—শুনতে পারি কি?
জীবিত থাকতে তিনি আপনার এবাড়িতে আসা যখন পছন্দ করতেন না তখন তাঁর উইল না জানা পর্যন্ত আপনাকে তো আমরা এ বাড়ির উপরে যেতে দিতে পারি না!
পারেন না! বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাল সুশান্ত সুখময়ের দিকে।
না।
ননসেন্স! আমার নিজের কাকার বাড়ি এটা—আর আমরাই তাঁর সব।
তা আমরাও জানি সুশান্তবাবু-তবু সেটা এখনও প্রমাণসাপেক্ষ। কিরীটী শান্তকণ্ঠে বলে।
মানে! কি আবার প্রমাণসাপেক্ষ—আমরা তাঁর ভাইপো কিনা?
না। তাঁর মৃত্যুর পর আপনাদের এ বাড়িতে প্রবেশের কোন সত্যিকারের আইনত অধিকার আছে কিনা সেইটাই প্রামণসাপেক্ষ।
প্রমাণসাপেক্ষ। তা আমাদের নেই তো কার আছে শুনি? আইনত তাঁর যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী আমরা ছাড়া আর কারা?
কথাটা আপনার যেমন মিথ্যা নয় সুশান্তবাবু তেমনি এও মিথ্যা নয় যে জীবিত থাকাকালীন কোনদিন আপনাদের এখানে তিনি প্রবেশ করতে দেননি।
কে বললে?
যেই বলুক কথাটা যে সত্যি, আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন?
নিশ্চয়ই করি। নিশ্চয়ই ঐসব আজগুবী কথা সাধন মিত্তির বলেছে আপনাদের! ও কে? দেখে নেব সাধন মিত্তির, আমিও সুশান্ত সাহা–
কথাটা বলে সাধনের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বোধ হয় ঘর থেকে পুনরায় বেরিয়ে যাবার জন্য পা বাড়ায় দরজার দিকে সুশান্ত।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কিরীটী আবার বাধা দেয়, যাবেন না সুশান্তবাবু, আপনার সঙ্গে আরও কিছু আমাদের কথা আছে।
ঘুরে দাঁড়াল সুশান্ত সাহা দরজার মাঝবরাবর গিয়ে এবং জ্ব-দুটো কুঁচকে কিরীটীর দিকে তাকিয়ে বলে, কথা আছে—আমার সঙ্গে?
হ্যাঁ।
কিন্তু আমার আপনার সঙ্গে কোন কথা নেই। বলে আবার পা বাড়াবার চেষ্টা করে সুশান্ত।
বাধা দিলেন এবারে সুখময় মল্লিক, আপনার না থাকলেও আমাদের আছে। দাঁড়ান।
আমি যদি না শুনি আপনাদের কথা, আমাকে জোর করে শোনাবেন নাকি?
শান্ত কণ্ঠে এবার কিরীটীই বলে, প্রয়োজন হলে শোনাতে হবে বৈকি। শুধু আপনি কেন, তাঁর আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতদের মধ্যে প্রত্যেকেই যাঁরা তাঁর সম্পত্তির ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড তাঁদের প্রত্যেককেই আমাদের প্রয়োজন। কারণ—
কারণ?
কারণ—ব্রজদুলালবাবু আত্মহত্যা করেন নি, তিনি নিহত হয়েছেন।
কি—কি বললেন?
বললাম কেউ তাঁকে হত্যা করেছে এবং তাদেরই কারও পক্ষে সেটা সম্ভব বেশী যারা তাঁর সম্পত্তির ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড ছিল।
সুশান্ত অতঃপর কিছুক্ষণ যেন কিরীটীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে, তারপর শান্ত কণ্ঠে বলে, আই সি! তাহলে আপনার ধারণা আমাদের মধ্যেই কেউ-না-কেউ তাঁকে হত্যা করেছি তাঁর সম্পত্তির লোভেই?
আপাততঃ সেটাই কি স্বাভাবিক ভাবে মনে হয় না সুশান্তবাবু?
চমৎকার। তাহলে এই ধরে নেব যে আপনারা আমাকে কাকার সম্ভাব্য হত্যাকারী হিসাবে অ্যারেস্ট করবেন?
না, অ্যারেস্ট করছি না।
তবে? যতক্ষণ না আপনাদের প্রত্যেকের উপর থেকে পুলিসের সন্দেহ সম্পূর্ণভাবে দূর হয়, আপনারা প্রত্যেকেই সন্দেহের তালিকার মধ্যে থাকবেন। বললে আবার কিরীটী।
হুঁ। তাহলে এখন আমাকে কি করতে হবে সেটা জানতে পারি কি?
হ্যাঁ, যতক্ষণ না এই ব্যাপারের সম্পূর্ণ মীমাংসা হয় আপনি এ বাড়িতে যেমন ঢুকতে পারবেন না তেমনি আপনার বর্তমান কলকাতার রেসিডেন্স থেকে কোথাও যেতে পারবেন না পুলিসের পারমিশন ব্যতীত।
বেশ তাই হবে।
আপনি এবারে যেতে পারেন।
সুশান্ত সাহা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
১১. পরের দিন ময়না তদন্তের রিপোর্ট
পরের দিন ময়না তদন্তের রিপোর্ট ও কাচের গ্লাস ও সঙ্গের বোতলের কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের রিপোর্ট পাওয়া গেল।
গ্লাসে বা বোতলের মধ্যে কোন রকম বিষ যেমন পাওয়া যায় নি তেমনি মৃতদেহেও কোন রকম বিষের সন্ধান মেলেনি। ময়না তদন্তকারী ডাক্তার রিপোর্ট দিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ হাই। ভোল্টের ইলেকট্রিক কারেন্ট।
তালুকদারই রিপোর্টটা নিয়ে এসেছিল কিরীটীর এখানে।
তিনি বলেন, ব্যাপারটা কেমন হল কিরীটী, এ যে কেমন গোলমাল হয়ে গেল!
রিপোর্টগুলো দেখবার পরই কিরীটী যেন কেমন আত্মচিন্তায় সমাহিত হয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণের। জন্য। হাতের ধরা পাইপটা নিভে গিয়েছিল।
সেটায় পুনরায় অগ্নিসংযোগ করে কিরীটী বলে, যদিও হত্যাকারী নিঃসন্দেহে খুব চতুর এবং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে হত্যার ব্যাপারে তবু বলব সেদিনকার একটা ব্যাপার তাকে—যাকে বলে সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছিল।
বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন করেন তালুকদার, সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছিল একটা ব্যাপার?
হ্যাঁ।
কি বল তো?
কারোরই তো ব্যাপারটা অজানা থাকবার কথা নয় তালুকদার, কারণ ঐদিন সকালেই কাগজে ঘোষণা করা হয়েছিল কলকাতা শহরে কোন কোন এলাকায় সেদিন রাত্রে কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।