বলুন, থামলেন কেন?
না। কিছু না। আই সিমপ্লি ডোন্ট বিলিভ ইট, রাদার আই কান্ট বিলিভ ইট, আমি বিশ্বাস করতে পারি না।
সহসা ঐ সময় কিরীটী শান্তকণ্ঠে সাধন মিত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, তাহলে কি আপনার ধারণা মিঃ মিত্র, উনি আত্মহত্যাই করেছেন?
সত্যি কথা বলতে কি, সেরকম কিছুও আমি ভাবতে পারছি না। কেনই বা আত্মহত্যা তিনি করতে যাবেন? সাধন মিত্র বলে।
কেন?
মিঃ সাহা সত্যিকারের বুদ্ধিমান, বিবেচক ও স্থিতধী লোক ছিলেন। আত্মহত্যা করবার মত টেম্পারামেন্ট কোনদিনই তাঁর ছিল না। তাছাড়া–
তাছাড়া?
তাছাড়া মান যশ অর্থ প্রতিপত্তি সবই তো বেশি পেয়েছিলেন এবং যতদূর জানি খুশিই ছিলেন। সেক্ষেত্রে হঠাৎ কেন আত্মহত্যা করতে যাবেন?
আচ্ছা মিঃ মিত্র—কিরীটীই আবার কথা বলে।
বলুন?
অফিস-সংক্রান্ত কাজেই শুনলাম আপনি মিঃ সাহাকে নাকি মাদ্রাজ থেকে আকস্মিক ভাবে ট্রাঙ্ক কল করে ডেকে এনেছিলেন?
হ্যাঁ, এনেছিলাম। পাটনার ব্রাঞ্চ অফিস সংক্রান্ত একটা জরুরী ব্যাপারে তাঁর উপস্থিতির প্রয়োজন হয়েছিল বলে তাঁকে ডেকে আনতে বাধ্য হয়েছিলাম।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো তিনি পাটনা যাননি?
না। আমাকেই পাঠিয়েছিলেন।
আচ্ছা মিঃ মিত্র, আপনি তাঁর পাসোন্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন এবং আপনাকে তিনি যেমন স্নেহ করতেন তেমনি বিশ্বাসও করতেন শুনেছি।
ঠিক শুনেছেন।
তাঁর জীবনের অনেক কথাই আশা করতে পারি আপনি জানেন?
কি জানতে চান বলুন স্পষ্ট করে, জানা থাকলে নিশ্চয়ই বলব।
মিঃ মিত্র?
বলুন।
তাঁর সম্পর্কে অনেক কথাই বললেন কিন্তু একটা কথা বলেননি।
কি বলিনি?
বলছিলাম তাঁর চরিত্র কেমন ছিল? বহুদিন ধরে তিনি বিপত্নীক ছিলেন শুনেছি—
সেরকম একটু-আধটু দুর্বলতা মানুষ মাত্রেরই থাকে, বিশেষ করে ঐরকম বয়েসে উইডোয়ার হলে।
তাহলে খুলেই বলি মিঃ মিত্র—কিরীটী বলে, আমি জানতে চাইছিলাম তাঁর সঙ্গে রেবেকা মণ্ডলের সম্পর্কের কথাটা।
মুহূর্তকাল সাধন মিত্র চুপ করে থাকে, তারপর মৃদু একটা হাসি তার ওষ্ঠপ্রান্তে দেখা দেয়।
কই, জবাব দিলেন না তো আমার প্রশ্নের? কিরীটী আবার বলে।
বোধ হয় একটু দুর্বলতা ছিল ঐ দিকে তাঁর।
শুধু দুর্বলতাই।
হ্যাঁ। আর কি বলব বলুন!
আর কিছু জানেন না আপনি?
দেখুন, তাঁকে আমি অত্যন্ত ভক্তি করতাম, শ্রদ্ধা করতাম। এবং আপনারা শুনেছেন কিনা জানি না, তাঁর স্নেহ ও সাহায্য না পেলে আজ আমি যা হয়েছি তা হতে পারতাম না। আর বেশী কিছু তাঁর সম্পর্কে আমার পক্ষে বলা সম্ভবপর নয়। আমাকে ক্ষমা করবেন।
১০. কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না
অতঃপর উভয় পক্ষই কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না।
সুখময় মল্লিক বোধ হয় ভাবছিলেন, আর কি প্রশ্ন তাঁদের থাকতে পারে সাধন মিত্রকে।
কিরীটীর মুখের দিকে তাকান সুখময় মল্লিক।
কিরীটী একটা সিগারে অগ্নিসংযোগ করছিল একটা জ্বলন্ত কাঠি দিয়ে, সিগারটা ধরে উঠলে কাঠিটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে ফেলে দিয়ে তাকাল আবার সাধন মিত্রের মুখের দিকে।
আচ্ছা মিঃ মিত্র, মিঃ সাহার আত্মীয়স্বজন কে কোথায় আছে জানেন কিছু?
তাঁর বড় ভাইয়ের দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে জানি।
দুই ছেলে, এক মেয়ে?
হ্যাঁ। এবং তাঁদের সম্পর্কে যতটুকু জানি—একজন প্রশান্ত সাহা, বেশীদূর লেখাপড়া শেখেননি, এই কলকাতা শহরেই অ্যালান ইলেকট্রিক্যালস কোম্পানীতে চাকরী করেন। বিয়ে-থা শুনেছি করেননি। দ্বিতীয় সুশান্ত সাহা আই. এ. পর্যন্ত পড়েছিলেন, শেয়ার মার্কেটের দালাল, ভালই বোধ হয় উপায় করেন। তবে নেশা ও রেসের মাঠে শুনেছি পকেট সর্বদাই খালি থাকে। ভাইঝি শ্রীমতী দেবী, হাসপাতালের নার্স। বিয়ে-থা করেননি।
তাঁরা এ বাড়িতে যাতায়াত করেন না?
শ্ৰীমতী দেবী দু-একবার মনে পড়ে এসেছেন। তবে ভাইপোদের কখনও তিনি বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না। তবু অবিশ্যি মধ্যে মধ্যে সুশান্ত ঝড়ের মত তাঁর অফিসে গিয়ে হাজির হতেন।
কেন?
টাকার জন্য।
টাকা দিতেন মিঃ সাহা ভাইপোকে?
দিতেন। ভীষণ চটে রাগারাগি করতেন, কিন্তু দিতেন। কারণ আমার মনে হয়েছে বরাবর, ঐ জুয়াড়ী, নেশাখোর উচ্ছৃঙ্খল লোকটাকে মুখে রাগারাগি করলেও উনি ভালই বোধ হয় সত্যি বাসতেন তাঁকে ভাইপো-ভাইঝিদের মধ্যে।
আচ্ছা, প্রশান্তবাবু আসতেন না কখনও তাঁর কাকার কাছে?
না। আসতে তাঁকে কখনও দেখিনি।
আচ্ছা সাধনবাবু, কোন উইল মিঃ সাহা করে গিয়েছেন বলে জানেন?
করেছেন বলেই জানি।
নিশ্চয় করে জানেন না কিছু।
না। তবে আপনি সাহা কোম্পানীর সলিসিটার রূপচাঁদ চ্যাটার্জীকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। তিনি সব জানেন।
সাধন মিত্রের কথাটা শেষ হল না, ঘরের মধ্যে সুট-পরিহিত সাতাশ-আঠাশ বৎসরের একটি সুশ্রী যুবক এসে ঢুকল।
আগন্তুক কারোর দিকে না তাকিয়ে একেবারে সোজাসুজি সাধনের দিকেই তাকিয়ে বলে, এই যে সাধন মিত্তির, হোয়াট অল দিস? কাকা নাকি সুইসাইড করেছে?
সাধন মিত্র কোন জবাব দেয় না। তার আগেই সুখময় মল্লিক আগন্তুকের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, কে আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারি কি?
সুখময়ের প্রশ্নে আগন্তুক ফিরে তাকাল সুখময়ের দিকে, কে আমি? ইয়েস পুলিস অফিসার,
অফ কোর্স ইউ ক্যান আস্ক দ্যাট। আমার নাম সুশান্ত সাহা।
আপনি কার কাছে শুনলেন সুশান্তবাবু যে আপনার কাকা সুইসাইড করেছেন?