ইউ মিন সাধনবাবু?
হ্যাঁ। তবে আমি যতদূর জানি তাঁর বিজনেসের অবস্থা ক্রমশঃ ভালর দিকেই উত্তরোত্তর যাচ্ছিল।
আচ্ছা, এই সাধনবাবু লোকটিকে আপনার কেমন মনে হয় মিস মণ্ডল?
খুব ভদ্র, অমায়িক।
আপনার সঙ্গে আলাপ কেমন?
এক বাড়িতে থাকি, সর্বদা দেখাশোনা হয়, সেদিক দিয়ে আলাপ তো একটু বেশী হবারই
কথা।
তা অবিশ্যি ঠিক। আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম লোকটিকে কেমন মনে হয় আপনার? কিরীটীই প্রশ্ন করে।
খুব ইনটেলিজেন্ট আর অ্যামবিশাস।
ইউ লাইক হিম?
কি বলতে চান আপনি?
সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নটা করে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় মিস রেবেকা মণ্ডল কিরীটীর দিকে।
একটু যেন অসন্তুষ্ট হয়েছে বলেও সে মনে হয় কারণ ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে ওঠে রেবেকার।
না। এই বলছিলাম আর কি, ভদ্রলোকটিকে আপনার ভাল লাগে কিনা?
সত্যিকারের কোন ভদ্রলোককে না ভাল লাগবার তো কোন কারণ থাকতে পারে না।
তা অবিশ্যি ঠিক। আচ্ছা ভাল কথা মিস মণ্ডল, কাল দুপুরে কে একজন সাহেব আত্মীয় আপনার শুনলাম দেখা করতে এসেছিলেন? আপনার সেই মামা নাকি?
মামা? কই না!
তবে কে এসেছিলেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে কাল দুপুরে?
কাল দুপুরে?
হ্যাঁ।
ও হ্যাঁ, মনে পড়ছে। মিঃ আথার মুর, সিংগাপুর থেকে এসেছিলেন মিঃ সাহার সঙ্গে দেখা করতে, এজেন্সীর ব্যাপারে।
কিন্তু তিনি জীবনকে বলেছিলেন তিনি নাকি আপনার আত্মীয়!
ননসেন্স! একথা বলতেই পারে না। জীবন বলেছে ঐ কথা?
হ্যাঁ।
ওর কথায় কান দেবেন না আপনারা।
কেন বলুন তো?
লোকটা একের নম্বরের মিথ্যাবাদী। লায়ার!
তাই বুঝি?
হ্যাঁ, ডাইনে-বাঁয়ে অকারণ মিথ্যে কথা বলে লোকটা।
তা কি করে জানলেন যে লোকটা মিথ্যাবাদী?
বহুবার বহু প্রমাণ পেয়েছি।
মিঃ সাহা জানতেন কথাটা?
জানতেন বৈকি। আর সেই জন্যই পুরনো বিশ্বাসী লোক হলেও ওকে তেমন পছন্দ করতেন না।
লোকটা তাহলে বিশ্বাসী?
অন্ততঃ মিঃ সাহার তাই ধারণা ছিল।
আপনার?
বিশ্বাসী বলেই মনে হয়।
ঐ সময়কার মত জবানবন্দি শেষ করে থানার ও সি সুখময় মল্লিক উঠে দাঁড়ান।
কিরীটীও বিদায় নেয় অতঃপর।
০৯. পাটনা থেকে ফিরে এল সাধন মিত্র
ঐদিনই সন্ধ্যার দিকে পাটনা থেকে ফিরে এল সাধন মিত্র। এবং বাড়িতে পৌঁছে ব্রজদুলালের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তো একেবারে স্তম্ভিত।
কিরীটী সুখময় মল্লিককে পূর্বেই বলে রেখেছিল সাধন মিত্র ফিরলেই যেন তাকে একটা সংবাদ দেওয়া হয়।
যে পুলিস অফিসারটিকে কিরীটীর নির্দেশেই সুখময় মল্লিক গচা লেনের বাড়িতে প্রহরায় রেখে গিয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকে ফোনে সাধন মিত্রের পৌঁছানো সংবাদ পেয়েই সুখময় কিরীটীকে সংবাদটা দেন। এবং সাধন মিত্র গচা লেনের বাড়িতে এসে পৌঁছবার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কিরীটী সুখময়কে সঙ্গে নিয়ে গচা লেনের বাড়িতে এসে হাজির হল।
.
সন্ধ্যার অন্ধকার তখন চারিদিকে ঘনিয়ে এসেছে।
বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই ভৃত্য জীবন এগিয়ে এল।
জীবন!
আজ্ঞে?
সাধনবাবু আছেন বাড়িতে? সুখময় মল্লিকই প্রশ্ন করেন।
আজ্ঞে হ্যাঁ, উপরে আছেন তাঁর ঘরে।
তাঁকে একবার খবর দাও, বল আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই।
বসুন, আমি খবর দিচ্ছি।
জীবন ওঁদের পারলারে বসিয়ে খবর দিতে গেল।
বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাধন মিত্র এসে পারলারে প্রবেশ করল।
সাধন মিত্রের চেহারাটা সত্যিই দেখবার মত।
বেশ পরিষ্কার গায়ের রঙ। সুন্দরই বলা চলে। মুখে কয়েকটা বসন্তের ক্ষতচিহ্ন। চক্ষু দুটি বুদ্ধিদীপ্ত। ছুরির ফলার মত যেন ধারাল চোখের দৃষ্টি।
সাধন মিত্রের দিকে তাকিয়ে সুখময় মল্লিকই প্রশ্ন করেন, সাধন মিত্র আপনার নাম?
হ্যাঁ।
বসুন।
কিরীটী একদৃষ্টে চেয়ে চেয়ে দেখছিল সাধন মিত্রকে, মুখের মধ্যে কোথাও কোন সেরকম বেদনা বা দুশ্চিন্তার চিহ্ন নেই।
বেশভূষাও পরিপাটি। এবং পোশাক দেখে মনে হয় বোধ হয় কোথাও বেরুচ্ছিল। পরিধানে দামী লংস, ডবল কপের শার্ট, গলায় দামী একটি আমেরিকান টাই।
সুখময় মল্লিক বসবার জন্য অনুরোধ করা সত্ত্বেও সাধন মিত্র কিন্তু বসে না। যেমন দাঁড়িয়ে ছিল তেমনিই থাকে।
সুখময় মল্লিক আবার বলেন, ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আপনি শুনেছেন সাধনবাবু?
হ্যাঁ। মৃদু শান্তকণ্ঠে প্রত্যুত্তর দেয় সাধন মিত্র।
এখানে এসেই খবরটা পেলেন বোধ হয়? সুখময় আবার জিজ্ঞাসা করেন।
হ্যাঁ, terribly shocking! তাছাড়া রেবেকা বলছিল—
কি বলছিলেন মিস মণ্ডল? কিরীটীই এবার প্রশ্নটা করে।
বলছিল, আপনাদের ধারণা নাকি ব্যাপারটা হত্যা, homicide!
হ্যাঁ। জবাব দেন সুখময় মল্লিক।
কিন্তু–
হ্যাঁ, কারণ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট যদিও এখনও আমরা পাইনি—সুখময়ই কথা বলেন, তবু ব্যাপারটা যে আত্মহত্যা নয়—হত্যা, সেটাই আমাদের ধারণা।
সাধন মিত্র চোখ তুলে তাকাল সুখময়ের দিকে, হত্যাই তাহলে আপনাদের স্থির ধারণা?
হ্যাঁ।
কিন্তু হঠাৎ কে তাঁকে হত্যা করতে যাবে আর কেনই বা করবে, এটা তো আমি বুঝতে পারছি না মিঃ মল্লিক! সাধন মিত্র বলে।
Why and why অর্থাৎ কে করতে পারে আর কেন করল সেটুকু জানতে পারলে তো আমাদের যাবতীয় মুশকিল আসানই হয়ে যেত সাধনবাবু। কিন্তু আপনার কি ধারণা, ব্যাপারটা তা নয়? সুখময় মল্লিক শুধান।
To tell you frankly, আমার অন্ততঃ তা মনে হয় না। কারণ আপনারা জানেন না, কিন্তু আমি তাঁকে অনেকদিন ধরে জানতাম। তাঁর কোন শত্রু থাকতে পারে আমি বিশ্বাসই করতে পারি না। তাছাড়া–