জবাব দিল এবারে তালুকদার পাশ থেকে, ওঁকে না চিনলেও নাম নিশ্চয়ই ওঁর শুনেছেন, উনি সত্যসন্ধানী শ্রীযুক্ত কিরীটী রায়।
কিরীটী রায়! কথাটা যেন কিছুটা আত্মগত ভাবেই উচ্চারণ করে প্রশান্ত।
প্রশান্তবাবু, আপনি তো য়ালেন ইলেকট্রিক্যালস কোম্পানীতে চাকরি করেন, তাই না? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ।
সেখানে কি কাজ করেন?
সেখানে আমি ওদের ওয়ার্কশপে ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক।
কিছু মনে করবেন না, কত মাইনে পান?
তিনশো টাকা।
বিয়ে করেননি তো এখনও?
না।
কেন বলুন তো এখনও বিয়ে করেননি?
কেন আবার কি, তিনশো টাকা আবার একটা টাকা নাকি! একজন মানুষেরই ভদ্রভাবে জীবন ওই টাকাতে কাটে না তায় আবার পরিবার! ক্ষমা করবেন মশাই, এতবড় নিরেট গদত আমি নই।
তা তো সত্যিই, আজকালকার দিনে তিনশো টাকা আবার কি! কিন্তু এবারে বোধ হয় বিয়ে করবেন—কি বলেন, কাকার সম্পত্তি যখন পাচ্ছেন?
কি বললেন? কাকার সম্পত্তি? তাহলেই হয়েছে! ব্রজদুলাল সাহাটি যে কি একখানা চিজ ছিল আপনারা তো আর জানতেন না। মশাই, ও আশা আমি করি না। যাক গে, লোকটার নামও আমার সহ্য হয় না। জীবনে এ বাড়িতে কখনও এর আগে আমি পা দিইনি। দিতামও না, আজ যদি আপনারা আমাকে এখানে ডেকে না আননে। কেন ডেকেছেন এবারে বলুন?
কেন ডেকেছি? তার কারণ আছে—
কি কারণ?
এক্ষুনি জানতে পারবেন, একটু অপেক্ষা করুন।
না মশাই, ক্ষমা করুন আমাকে। আমার কাজ আছে, এখুনি আমাকে যেতে হবে।
প্রশান্ত সাহার কথাটা শেষ হল না, দরজার বাইরে ভারী গলায় শোনা গেল, ভিতরে আসতে পারি মিঃ মল্লিক?
কে? সুখময় মল্লিক শুধান।
আমি রূপচাঁদ চ্যাটার্জী।
আসুন, আসুন—ভেতরে আসুন।
ব্রজদুলাল সাহার সলিসিটার মিঃ রূপচাঁদ চ্যাটার্জী এসে ঘরে ঢুকলেন।
ভদ্রলোকের বয়েস হয়েছে, অন্ততঃ পঞ্চাশের নীচে নয়। বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা।
পরিধানে দামী সুট। হাতে একটা চামড়ার ফোলিও।
রূপচাঁদ চ্যাটার্জী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে পরপর সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে শেষে তাকালেন প্রশান্ত সাহার মুখের দিকে, প্রশান্তবাবু, আপনিও আছেন দেখছি! কিন্তু মিঃ মল্লিক কে?
সুখময় মল্লিক তখন বললেন, আমারই নাম সুখময় মল্লিক। উনি ডি.সি, মিঃ তালুকদার আর উনি–
ওঁর আর পরিচয় দিতে হবে না মিঃ মল্লিক, কিরীটী রায়কে আমি চিনি। যদিও আমাদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয়ের সৌভাগ্য আজও হয়নি।
একটু থেমে রূপচাঁদ চ্যাটাজী আবার বলেন, আপনি যখন আমার অফিসে ফোন করেন তখন আমি অফিসে ছিলাম না। বাইরে বারলো সাহেবের চেম্বারে একটা কনসালটেশনে গিয়েছিলাম। ফিরে আসতেই আমার জুনিয়ার বললে, আমাকে নাকি আপনি চেম্বারে ফোন করে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই এখানে চলে আসতে বলেছেন। কিন্তু কি ব্যাপার বলুন তো?
১৫. কথা বলে এবারে কিরীটী
কথা বলে এবারে কিরীটী, আমিই সুখময়বাবুকে বলেছিলাম ফোনে আপনাকে আজ একবার এখানে আসবার জন্য খবর দিতে মিঃ চ্যাটার্জী। ব্রজদুলাল সাহা, আপনার ক্লায়েন্টের উইল সম্পর্কে কয়েকটা ইনফরমেশান আমার দরকার।
উইল সম্পর্কে?
হ্যাঁ।
কিন্তু কিরীটীবাবু, আমার ক্লায়েন্ট তো কোন উইল শেষ পর্যন্ত করে যেতে পারেন নি? কেন, প্রশান্তবাবু তো জানেন সেকথা। ওঁকে তো আজই বলেছি।
রূপচাঁদ চ্যাটার্জী কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে কিরীটী প্রশান্ত সাহার দিকে তাকাল। কিন্তু সে মুহূর্তের জন্য।
পরক্ষণেই তাকাল আবার রূপচাঁদ চ্যাটার্জীর দিকে, আপনার ক্লায়েন্টের কোন উইল নেই?
না। মাদ্রাজ যাবার আগে সর্বপ্রথম তিনি উইলের কথা আমাকে জানান।
তার আগে কখনও উইলের প্রশ্ন ওঠেনি?
না। সেই প্রথম উইলের কথা আমাকে বলেন এবং কি ভাবে উইল হবে মুখে সেটা বলে আমাকে একটা ড্রাফট তৈরী করে রাখতে বলেন, মাদ্রাজ থেকে ফিরে এসে সেটা পাকাপাকি করবেন বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো সব ভেস্তে গেল। মাদ্রাজ থেকে যেদিন ফিরলেন সেই রাত্রেই আত্মহত্যা করলেন।
আত্মহত্যা তো তিনি করেননি মিঃ চ্যাটার্জী! গম্ভীর কণ্ঠে কিরীটী এবার বলে।
সে কি, আত্মহত্যা করেননি?
না। স্থির কণ্ঠে কিরীটী পুনরায় প্রতিবাদ জানাল।
কিন্তু আমি যে শুনেছিলাম—
ভুল শুনেছিলেন। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। কিরীটী আবার বলে।
হত্যা করা হয়েছে?
হ্যাঁ।
বাট হাউ!
হাই ভোলটেজ ইলেকট্রিক কারেন্ট তাঁর দেহে পাস করিয়ে তাঁকে সেরাত্রে হত্যা করা হয়েছে মিঃ চ্যাটার্জী।
এতক্ষণে প্রশান্ত সাহা কথা বললে, সরি বলছেন কিরীটীবাবু, কাকাকে হত্যা করা হয়েছে?
হ্যাঁ প্রশান্তবাবু। তাঁকে সত্যিই হত্যা করা হয়েছে।
কিন্তু কে-কে তাঁকে হত্যা করবে?
যার স্বার্থ ছিল সে-ই। যাক সেকথা প্রশান্তবাবু, আপনাকে আমার যেজন্য প্রয়োজন এবং যেজন্য ডেকেছিলাম—অনুগ্রহ করে আমার সঙ্গে একবার ওপরে যাবেন কি?
ওপরে? কেন বলুন তো?
এক্সপার্ট ওপিনিয়ন নেব।
এক্সপার্ট ওপিনিয়ন কি ব্যাপারে?
আপনি তো একজন ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক, ইলেকট্রিকের ব্যাপারেই আপনার ওপিনিয়ন আমার চাই। চলুন।
ওরা ঘর থেকে বের হয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে এগুচ্ছে, এমন সময় সাধন আর রেবেকাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেখা গেল।
রেবেকা আর সাধন মিত্র যেন হঠাৎ ওই সময় ওদের ওখানে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে যায়।
কিরীটী কিন্তু ওদের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলে, যাক, আপনারা দুজনও এসে গিয়েছেন ভালই হল। বাকী রইলেন শুধু সুশান্তবাবু।