সুবিনয় ও সুবীর দুজনের কারো মুখেই কোন কথাই নেই। দুজনেই যেন একেবারে বোবা।
কিরীটী ওদের দিকে তাকিয়ে আবার বলে, আপনারা কেউ চিনতে পারছেন এ জুতোজোড়া, সুবিনয়বাবু?
না।
সুবীরবাবু, আপনি?
না।
বাহাদুর! তুমি চিনতে পারছ?
জী সাব।
কার এ জুতো?
সাহেবের।
গগনবাবুর?
জী হাঁ।
অরূপ, এবার কোটটা বের কর।
অরূপ ঝোলা থেকে একটা কালো টেরিউলের প্রিন্স কোট বের করল।
বাহাদুর, এ কোটটা কার জান?
জী।
কার?
সাহেবের।
সুবীরবাবু, সুবিনয়বাবু–এটাও বাগানে পাওয়া গিয়েছে এবং আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, এই কোটের গায়ে ও হাতায় রক্ত শুকিয়ে ছিল। সে রক্ত কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে গগনবিহারীর রক্ত বলে।
এতক্ষণে সুবিনয়ই কথা বলে, আপনি এসব কথা আমাদের বলছেন কেন মিঃ রায়? আপনার কি ধারণা আমাদেরই মধ্যে কেউ মামাকে হত্যা করেছি?
না। সেজন্য নয়।
তবে?
আচ্ছা আপনারা সেরাত্রে এ ব্যাপারে কোন চিৎকার বা চেঁচামেচি শোনেননি?
না। তাছাড়া সেরকম কিছু হলে জ্যাকি কি ডাকত না? চুপ করে থাকত?
পুয়োর জ্যাকি ওয়াজ ড্রাগড়! তাকে খাদ্যবস্তুর সঙ্গে কোন ওষুধ খাইয়ে আগে থাকতেই নিস্তেজ করে ফেলা হয়েছিল।
কিন্তু সে তো কারে হাতে খায় না। সুবিনয় বলে, জ্যাকি তো মামা ও রামদেওর হাতে ছাড়া আর কারো হাতেই খেত না।
খেত না ঠিকই। আর সেই যুক্তিতেই হয়ত হত্যাকারী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবার সুযোগ খুঁজবে। কিন্তু একটা কুকুরকে কোন কৌশলে একটা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নিস্তেজ করা এমন কিছুই কষ্ট নয় সুবিনয়বাবু।
আমার মনে হয়—
কি বলুন?
আপনার কথাই যদি সত্যি হয় তো রামদেওই সে কাজ করেছিল। তার পক্ষেই সেটা বেশী সম্ভব ছিল।
তা ঠিক।
এবং নিশ্চয়ই এখনও তার কোন পাত্তা পাওয়া যায়নি?
না। তাহলেও তাকে খুঁজে বের করতে পুলিসের অসম্ভব হবে না।
তাই তো আমি ভাবছি, রামদেও নামক রংয়ের তাসটি যখন হঠাৎ টেবিলের উপর এসে পড়বে তখন সত্যিকারের হত্যাকারীর যে বাঁচার আর কোন সম্ভাবনাই থাকবে না।
১৪. সুবীর বলে ওঠে ঐ সময়
সুবীর বলে ওঠে ঐ সময়, আমি হলপ করে বলতে পারি মিঃ রায়, রামদেও-ই কাকাকে সেরাত্রে হত্যা করেছে। আপনারও কি তাই মনে হয় না!
হোয়াই ইউ আর সো সার্টেন সুবীরবাবু? কিরীটী মৃদু হেসে পালটা প্রশ্ন করে।
কারণ কাকার সঙ্গে রামদেওর যুবতী স্ত্রীর ইল্লিসিটু কনেকশন ছিল।
সেই কারণেই আপনাদের মনে হয় সে হত্যা করেছে তার মনিবকে?
নিশ্চয়! কে সহ্য করতে পারে–মানে কোন্ পুরুষ সহ্য করতে পারে বলুন নিজের স্ত্রীকে অন্যের শয্যাসঙ্গিনী হতে দেখলে রাতের পর রাত?
আপনার ভুলও তো হতে পারে সুবীরবাবু?
ভুল! না, ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক। অন্ততঃ আমি রামদেও হলে তো পারতাম না।
খুন করতেন, তাই না?
খুন? সুবীর যেন চমকে ওঠে।
হ্যাঁ–খুন। সুবিনয়বাবু, আপনি?
জানি না।
যাক সে কথা। আপনারও কি সুবীরবাবুর মতই মনে হয় কাজটা রামদেওরই?
সুবীরদা যা বলেছে তাই যদি হয়—
সুবীরদার কথা থাক। আমি আপনার কথা জানতে চাইছি।
মানুষ মনের ঐ অবস্থায়—
হত্যাও করতে পারে। আচ্ছা শমিতা দেবী সম্পর্কে আপনার কি ধারণা সুবিনয়বাবু?
তাঁকে তো আমি চিনি না। মানে তাঁর সঙ্গে আমার তো কোন আলাপ–পরিচয় নেই।
চেনেন না–মানে তাঁর সঙ্গে হয়ত আপনার কোন আলাপ–পরিচয় নেই সত্যি, কিন্তু দেখেছেন তো তাঁকে বহুবার। তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছেনও।
এখানে তিনি প্রায়ই আসতেন। কখনও-সখনও দেখেছি।
আপনার মামার সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল?
ছিল বলেই শুনেছি।
শোনেননি তাঁকে আপনার মামা বিবাহ করবেন বলে স্থির করেছিলেন?
না।
কিন্তু তাঁর সঙ্গে যে গগনবিহারীবাবুর রীতিমত ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে, কথাটা কার কাছ থেকে শুনেছিলেন?
সুবীরদাই বলেছে।
আর কারো মুখে কথাটা শোনেননি?
রামদেওর মুখেও শুনেছি।
রামদেওর সঙ্গে তাহলে আপনার ঐ সব আলোচনাও হত?
কি বললেন?
বলছি হঠাৎ রামদেও সেকথা আপনাকে বলতে গে, কেন? আপনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন কখনও?
ঐ–মানে কথায় কথায় হঠাৎ একদিন বলেছিল রামদেও।
হুঁ। রামদেও তাহলে আপনাদের ঘরে আসত?
তা মধ্যে মধ্যে আসত বৈকি।
রামদেওর স্ত্রী রুক্মিণী আসত না?
না।
ভাল কথা সুবিনয়বাবু, আপনি আমার প্রশ্নের জবাবে পুলিসের কাছে জবানবন্দীতে বলেছেন–সেরাত্রে শমিতা দেবী নাকি রাত সাড়ে নটা পৌনে দশটা নাগাদ এ বাড়িতে এসেছিলেন!
হ্যাঁ।
আপনি তাঁকে আসতে দেখেছিলেন, না কারো মুখে শোনা কথা?
দেখেছি।
কেমন করে দেখলেন? কোথায় দেখেছিলেন?
আমি সেদিন অফিস থেকে ফিরে এসে মাথার যন্ত্রণার জন্য শুয়ে ছিলাম, তারপর রাত সোয়া নটা নাগাদ প্রিয়লাল ডাকতে আসে খাবার জন্য
রাত্রে বুঝি খাওয়াদাওয়া তাড়াতাড়ি সারতেন?
না। সেদিন বিকেলে এসে কোন জলখাবার খাইনি, তাই ঠাকুর আমাকে একটু আগেই খাবার জন্য ডাকতে এসেছিল।
তারপর?
খাওয়দাওয়া সেরে ঘরে ঢুকে জানলার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম, সেই সময়ই শমিতা দেবীকে একটা ট্যাক্সিতে এসে গেটের সামনে নামতে দেখি।
সেরাত্রে কোন জ্যোৎস্না ছিল না, অন্ধকার রাত্রি–আপনার এ ঘর থেকেও গেটটা বেশ দূর, ঠিক কি করে চিনলেন যে তিনি শমিতা দেবীই?
মনে হল। তাছাড়া অত রাত্রে তিনি ছাড়া আর স্ত্রীলোক কে মামার কাছে আসতে পারে?
যুক্তির মধ্যে আপনার কোন ফাঁক নেই দেখতে পাচ্ছি। কিরীটী মৃদু হেসে কথাটা বলে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেল। আচ্ছা সুবিনয়বাবু, আপনি মরালী সঙ্ঘের নাম শুনেছেন?