.
বেলা দুটো নাগাদ অমলেন্দু ফিরে এল।
ঘরে ঢুকে দেখে শমিতা তার শয্যায় শুয়ে গভীর নিদ্রাভিভূত। স্নান করে অন্য একটা সাধারণ তাঁতের শাড়ি পরেছে। ভিজে চুলের রাশ বালিশে ছড়িয়ে আছে।
ঘর থেকে বের হয়ে এসে অমলেন্দু বুধনকে ডাকল।
বুধন, মাইজী খেয়েছে?
না।
খায়নি?
না। দুবার তিনবার ডাকতে এসে দেখি মাইজী ঘুমাচ্ছেন। আপনার খানা দেব টেবিলে?
হ্যাঁ, দে।
বুধন চলে যাচ্ছিল, তাকে আবার ডাকল অমলেন্দু, শোন। দুজনের খানাই দে টেবিলে।
বুধন ঘাড় হেলিয়ে চলে গেল।
অমলেন্দু এসে শয্যার পাশে দাঁড়াল। ডাকল, শমিতা!
কোন সাড়া নেই শমিতার।
শমিতা, ওঠ। খাবে না?
শমিতার ঘুম ভাঙে না।
অমলেন্দু একটু ইতস্তত করে, তারপর শিয়রের ধারে বসে ওর ভিজে চুলের উপরে হাত রেখে ডাকে মৃদুকণ্ঠে, শমিতা, শমিতা ওঠ।
উঁ!
ওঠ। চল–টেবিলে খাবার দিয়েছে।
শমিতা এবারে উঠে বসে, তুমি? কখন এলে?
এই আসছি–চল টেবিলে খাবার দিয়েছে। যাও বাথরুম থেকে চোখে-মুখে জল দিয়ে এসো।
শমিতা শয্যা থেকে উঠে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায়।
খাবার টেবিলে বসে শমিতা বলে, একটা কথা বলব ভাবছিলাম অমল—
বল।
আমি যদি কটা দিন তোমার এখানে থাকি, তোমার কি খুব অসুবিধা হবে?
অমলেন্দু কোন জবাব দেয় না।
অবিশ্যি বেশী দিন নয়, একটা থাকবার ব্যবস্থা হলেই—
যতদিন খুশি এখানে থাকতে পার শমিতা। অমলেন্দু মৃদু গলায় জবাব দেয়।
না, না, বেশী দিন তোমাকে বিরক্ত করব না।
বিরক্তির তো কিছু নেই
তোমার তো অসুবিধে হতে পারে!
অসুবিধা আবার কি?
হবে না?
কেন, অসুবিধা হবে কেন? হয়ত তোমারই অসুবিধা হতে পারে।
আমার?
হ্যাঁ–এখানে থাকতে
না, অমলেন্দু তা নয়—
তবে কি?
আমি ভাবছিলাম অন্য কথা।
কি?
না, কিছু না। তারপর একটু থেমে বলে, বুধন–তোমার চাকর কি ভাববে!
ও কেন ভাবতে যাবে?
ভাববে না বলছ?
না। তাছাড়া এর মধ্যে ভাবাভাবির কি আছে?
তবুও হয়ত ভাববে–কে আমি কোথা থেকে হঠাৎ এলাম—
ওকে বললেই হবে—
কি বলবে?
তুমি আমার চেনা বন্ধু।
বন্ধু!
হ্যাঁ–কলকাতায় এসে আমার এখানে উঠেছ। তাছাড়া ও কি ভাববে-না-ভাববে সে কথা ভেবে তুমি এত সংকুচিতই বা হচ্ছ কেন? তোমার কোন অসুবিধা না হলে তুমি থাকতে পার। কিন্তু তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না!
খিদে নেই–
তবে জোর করে খেও না।
আচ্ছা অমলেন্দু!
কি?
তুমি তো একবারও জিজ্ঞাসা করলে না, আমি হঠাৎ কেন এলাম এতদিন পরে?
তুমি যখন বলনি, নিশ্চয়ই বলবার মত কিছু নেই–তাই জিজ্ঞাসাও করিনি।
না অমলেন্দু, আছে।
কি?
বলবার অনেক কথা আছে, কিন্তু ভাবছি কি বলব? কেমন করে বলব?
এখন ওসব কথা থাক শমিতা।
তুমি জান কিনা জানি না–দাদার বন্ধু গগনবিহারী চৌধুরী নিহত হয়েছেন—
জানি আমি।
জান?
হ্যাঁ।
কেমন করে জানলে?
আজ খবরের কাগজে সংবাদটা প্রকাশিত হয়েছে।
কি–কি লিখেছে তাতে?
লিখেছে–কোন সন্ধান করা যায়নি এখনও হত্যাকারীর–পুলিস হত্যাকারীর অনুসন্ধান করছে–আর বিখ্যাত সত্যান্বেষী কিরীটী রায় পুলিসকে ঐ ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন। পুলিস পারলেও ঐ ভদ্রলোক যখন ব্যাপারটার মধ্যে মাথা গলিয়েছেন, খুনী ধরা পড়বেই!
পড়বেই!
হ্যাঁ, দেখে নিও। অসাধ্যসাধন করতে পারেন ঐ ভদ্রলোক। ওঁর অনুসন্ধানী দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়।
শমিতার বুকটার মধ্যে থেকে একটা ভয়ের স্রোত তার মেরুদণ্ড বেয়ে শিরশির করে যেন নামতে থাকে। গলাটা শুকিয়ে ওঠে।
হঠাৎ শমিতা উঠে দাঁড়ায়। বলে, আমি চলি।
কোথায়? বিস্ময়ে অমলেন্দু শমিতার মুখের দিকে তাকায়, সত্যিই তুমি চলে যাচ্ছ নাকি?
হ্যাঁ।
বস বস শমিতা, মনে হচ্ছে তুমি যেন অত্যন্ত এক্সাইটেড হয়ে পড়েছ–সকাল থেকেই দেখছি তুমি অত্যন্ত চিন্তিত!
আমি যাই—
কি হয়েছে শমিতা, আমাকে সব খুলে বল।
কি–কি বলব?
তোমার যদি কোন চিন্তার কারণ থাকে তো বল। আমি হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
কি সাহায্য তুমি আমাকে করবে?
ব্যাপারটা না জানলে কি করে বলি! বস–হোয়াই ইউ আর সো মাচ ডিস্টার্বড! অমলেন্দু একপ্রকার যেন জোর করেই শমিতাকে বসিয়ে দিল আবার চেয়ারটায়।
অমলেন্দু!
বল।
একটা কথা তুমি জান না—
কি? গগনবিহারীর সঙ্গে আমার একসময় যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল।
আমি জানি।
জান?
হ্যাঁ।
কেমন করে জানলে?
জেনেছি।
১৩. সুবীর যেন হাঁপিয়ে ওঠে
সুবীর যেন হাঁপিয়ে ওঠে।
থানার ওসি’র কড়া নির্দেশ, আপাতত তারা কেউ বাড়ি থেকে পুলিসের বিনানুমতিতে বের হতে পারবে না।
পরের দিন দুপুরের দিকে সুবীর সুবিনয়ের ঘরে এসে বলে, দিস ইজ সিমপ্লি টরচার সুবিনয়!
সুবিনয় চেয়ারে বসে একটা বই পড়ছিল। সুবীরের দিকে মুখ তুলে তাকাল।
সুবীর আবার বলে, এভাবে আমাদের এখানে বাড়ির মধ্যে নজরবন্দি করে রাখার মানেটা কি? কাকার মৃত্যুর ব্যাপারে কি ওরা আমাদের সন্দেহ করেছে নাকি? ডু দে সাসপেক্ট আস!
কিছু তো সেটা অস্বাভাবিক নয় সুবীরদা! মৃদু কণ্ঠে সুবিনয় জবাব দেয়।
হোয়াট ডু উই মিন?
ভেবে দেখ না।
কি ভাবব?
আমরা কজন ছাড়া তো এ বাড়িতে কেউ পরশু রাত্রে ছিলাম না! কাজেই আমাদের ওপরে যদি পুলিসের সন্দেহ পড়েই–
আমরা আমাদের কাকাকে হত্যা করেছি! হাউ ফ্যান্টাস্টিক! বাট হোয়াই? কেন–আমরা তাকে হত্যা করতে যাব কেন!
আজ সকালে মিঃ সেন–মামার সলিসিটার এসে কি বললেন শুনেছ তো তুমি! মামার
সম্পত্তি ও টাকাকড়ি নেহাৎ কম নয়!