কেন পারব না? অরূপ বললে।
হ্যাঁ দেখাও, আমার মনে হয় কুকরটাকে খাবারের সঙ্গে কোন তীব্র ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আর একটা কথা, কুকুরটার উপরে যেন কস্টান্টু ওয়াচ রাখা হয়।
অরূপকে নির্দেশ দিয়ে কিরীটী ফোনটা রেখে দিল।
সারাটা দুপুর কিরীটী কোথাও বের হল না। নিজস্ব লাইব্রেরী থেকে অ্যালসেসিয়ান কুকুর সম্পর্কে এক বিশেষজ্ঞের বই নিয়ে তারই মধ্যে ডুবে রইল।
বিকেলের দিকে যোগজীবনের ওখানে যাবে বলেছিল কিন্তু বেরুতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
সুব্রতকে কিরীটী বলে দিয়েছিল বিকেলে তার ওখানে চলে আসতে। দুজনে একসঙ্গে যোগজীবনের ওখানে যাবে।
সুব্রত যথাসময়েই এসে হাজির হয়েছিল।
কিন্তু সুব্রত এসে দেখল কিরীটী কি একটা বই নিয়ে তার মধ্যে ডুবে আছে, কাজেই তাকে আর বিরক্ত করেনি।
বইটা শেষ করে কিরীটী যখন উঠে দাঁড়াল বেলা তখন গড়িয়ে গিয়েছে–বাইরের আলো ম্লান হয়ে গিয়েছে।
সন্ধ্যার ধূসর ছায়া নামছে ধীরে ধীরে।
কি রে, বেরুবি না? সুব্রত শুধাল।
হ্যাঁ, চল।
সুব্রত তার গাড়ি এনেছিল। সেই গাড়িতেই চেপে দুজনে যোগজীবনের গৃহের দিকে রওনা হল।
গাড়িতে উঠে কিরীটী বললে, চল একবার থানায় ঘুরে যাই। রামদেওর কোন পাত্তা পাওয়া গেল কিনা জেনে যাই। আর অরূপ যদি থাকে তো তাকেও সঙ্গে নিয়ে যাব।
থানার সামনে এসে ওদের গাড়ি যখন থামল সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তখন। রাস্তার আলো জ্বলে উঠেছে। অরূপ থানাতেই ছিল।
অরূপের অফিস–ঘরে ঢুকেই কিরীটী জিজ্ঞাসা করল, রামদেওর কোন খবর পেলে অরূপ?
না।
খবরটা যে চাই।
প্রতাপগড়ে ওর দেশে খোঁজ নেবার জন্য ইউ, পি-র ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চে ফোন করে টেলিজেন্স ব্রাঞ্চে ফোন করে দিয়েছি। বেটার একটা ফটো পেলে সুবিধা হত।
রুক্মিণীর কাছে খোঁজ করে দেখো–পেতে পার।
দেখি, কাল একবার যাব। হ্যাঁ ভাল কথা, সুবীর চৌধুরী ফোন করেছিল।
কেন?
সে বাইরে বেরুতে চায়। আমি বলে দিয়েছি, আপাত চার–পাঁচদিন ঐ বাড়ির বাইরে কোথাও তার যাওয়া চলবে না।
তারপর?
চেঁচামেচি করেছিল ফোনে। আমরা কি তাকেই গগনবিহারীর হত্যাকারী বলে সন্দেহ করছি নাকি ইত্যাদি।
কিরীটী মৃদু হাসে।
আমার কিন্তু মনে হয় মিঃ রায়–অরূপ বলে।
কি?
ঐ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সুবীর চৌধুরী জড়িয়ে আছে।
কেন?
আমার মনে হয় ঐ বরযাত্রী যাওয়ার ব্যাপারটা একটা তার অ্যালিবি মাত্র।
হওয়া অসম্ভব নয়, কিন্তু হত্যা সে করবে কেন তার কাকাকে? কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
কি আবার, গগনবিহারীর সমস্ত সম্পত্তির সেই-ই তো প্রকৃতপক্ষে লিগ্যাল উত্তরাধিকার!
তা তো নাও হতে পারে অরূপ।
কিন্তু—
কিরীটী বলে, এমনও তো হতে পারে গগনবিহারী উইলে তাকে কিছুই দিয়ে যাননি। না অরূপ, গগনবিহারীর হত্যার সঙ্গে আর যাই থাক অর্থের কোন সম্পর্ক আছে বলে আপাতত আমার মনে হচ্ছে না।
তবে কি–
অবিশ্যি আমি নিজেও এখনো কোন স্থিরসিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারনি। তবে আমার মনে হয়, গগনবিহারীর হত্যার মূলে আছে অন্য কিছু–অর্থ নয়।
আপনি কি বলতে চান মিঃ রায়!
ঐ হত্যাকাণ্ডের আশেপাশে যারা ছিল–তাদের মধ্যে ভেবে দেখছ কি, শমিতা আর রুক্মিণী যে দুটি মেয়ে গগনবিহারীর জীবনে এসেছিল–মনে করে দেখ তাদের দুজনেরই রূপ ও যৌবনের কথা। গগনবিহারী দুজনের প্রতিই আকৃষ্ট ছিল।
তাহলে?
সে–সব পরে বিচার করা যাবে। আপাতত তোমার হাতে যদি কোন জরুরী কাজ না থাকে তো চল, এক জায়গা থেকে ঘুরে আসি।
কোথায়?
যোগজীবনবাবুর ওখানে।
সেখানে কেন?
শমিতা দেবীর সঙ্গে একটু আলাপ করে আসি, চল না!
বেশ তো, চলুন।
অরূপ উঠে পড়ল।
০৮. যোগজীবনবাবু বাইরের ঘরেই বসেছিলেন
যোগজীবনবাবু তাঁর বাইরের ঘরেই বসেছিলেন একাকী।
কিরীটী আসবে বলেছিল তাই আর তিনি বেরোননি ঐ দিন বিকালে। কিরীটীরা যখন এসে পৌঁছল তখন সাতটা বেজে গিয়েছে।
আসুন রায় সাহেব। দেরী হল যে? আপনি–
কথাটা যোগজীবন আর শেষ করেন না। কিরীটীর সঙ্গে সুব্রত আর থানা-অফিসার অরূপ মুখাজীকে দেখে থেমে গেলেন।
কিরীটী বসতে বসতে বললে, অরূপকে সঙ্গেই নিয়ে এলাম সান্যাল মশাই, আইন মেনে চলাই ভাল।
সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন যোগজীবন কিরীটীর মুখের দিকে।
বুঝতেই তো পারছেন, ব্যাপারটা খুব delicate হলেও শমিতা দেবীর সঙ্গে যখন গগনবাবুর পরিচয় ছিল এবং তাঁর গগনবাবুর গৃহে যাতায়াত ছিল, পুলিস তাঁকে নিয়েও টানাটানি করতে ছাড়বে না। সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা যদি একটা ঘরোয়া পরিবেশে শেষ করে ফেলা যায়, সব দিক দিয়েই ভাল হয়।
যোগজীবন কোন জবাব দেন না।
তাঁর সমস্ত মুখে যেন একটা দুশ্চিন্তার কালো ছায়া।
কিরীটী বললে, তাই অরূপকে সঙ্গে করেই নিয়ে এলাম।
উনিও–মানে মিঃ মুখাজীও কি শমিকে প্রশ্ন করতে চান? যোগজীবন ক্ষীণ গলায় প্রশ্ন করেন।
না, না–উনি কেবল উপস্থিত থাকবেন। যা জিজ্ঞাসা করবার আমিই করব। আপনার ভগ্নী বাড়িতেই আছেন তো?
আছে।
গগনবাবুর ব্যাপারটা নিশ্চয়ই শুনেছেন?
শুনেছে।
কে বলল? আপনি?
না–আমি বলিনি।
তবে?
সুবীর তাকে ফোনে জানিয়েছে।
কিরীটী যেন একটু চমকেই ওঠে কথাটা শুনে। বলে, কে? সুবীরবাবু?
হ্যাঁ।
কখন ফোন করেছিলেন তিনি?
সকালেই।
সকালে? কখন?
আমি ফোন পেয়ে চলে যাবার পরই।
কিরীটী যেন একটু অন্যমনস্ক। মনে হয় যেন কি ভাবছে সে। কিরীটী যোগজীবনের কথার পর আর কোন কথা বলে না।