কেন, ভালই! হি লাইক মি ভেরি মাচ!
সুবীরবাবু, এবার আর একটা প্রশ্নের আমার জবাব দিন।
বলুন?
আপনার কাকার হত্যার ব্যাপারে কাউকে আপনার সন্দেহ হয়?
কাকে সন্দেহ করব!
কেন, রামদেওকে?
রামদেও!
হ্যাঁ, আপনিই তো একটু আগে বলছিলেন তার যুবতী স্ত্রীর প্রতি আপনার কাকার দুর্বলতা ছিল, রামদেও হয়ত সে কথা জানতে পেরে আক্রোশের বশে আপনার কাকাকে ছোরা মেরে পালিয়েছে!
বিচিত্র নয় কিছু।
বলছেন?
আপনিই তো তাই বলছেন!
আমি আপনার ওপিনিয়নটা নিচ্ছিলাম!
সুবীর যেন কেমন একটু বিব্রত বোধ করে।
অরূপ, তুমি আর ওঁকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাও নাকি? কিরীটী বলে।
না, আপনি যেতে পারেন। বাহাদুরকে পাঠিয়ে দিন।
বাহাদুর ঘরে এসে ঢুকল। কেঁদে কেঁদে বাহাদুরেরও চোখ দুটো ফুলে গিয়েছে।
বাহাদুর, কতদিন তুমি সাহেবের কাছে আছ? অরূপ প্রশ্ন করে।
কমসে কম দশ সাল।
কাফি বরষ।
জী সাব।
তোম বাংলা বাত সমঝতে?
জী। ঘোড়ী ঘোড়ী বলনে ভি সেকতা।
তোমার বাবুর কাছে এ বাড়িতে আসার পর কে কে আসত বলতে পার? অরূপই প্রশ্ন করে।
ঐ বাবুজী আসতেন, আর—
আর?
দিদিমণি আসতেন, ঐ বাবুর বহিন।
প্রায়ই আসতেন?
হ্যাঁ।
কতক্ষণ থাকতেন?
তা দেড় ঘণ্টা দু’ঘণ্টা। কখনও তিন ঘণ্টাও থাকতেন।
কখন আসতেন?
রাতের বেলাতেই বেশী।
কালও এসেছিলেন?
হ্যাঁ।
কখন?
রাত তখন সোয়া নটা হবে।
তুমি জানলে কি করে?
আমি রামদেওর মুখে শুনি। সে নীচে এসে আমায় বলে, আবার আজ সেই দিদিমণি এসেছে সাত রোজ বাদে!
সাত রোজ! তার আগে বুঝি আসেননি দিদিমণি?
না।
কি করে জানলে?
রামদেওই বলেছিল, দিদিমণির সঙ্গে নাকি কি কথা–কাটাকাটি হয়েছিল খুব সাহেবের। তারপর সাত বোজ দিদিমণিও আসেননি, সাহেবও ক্লাবে যাননি।
হঠাৎ কিরীটী ঐ সময় যোগজীবনের দিকে ফিরে বললে, সান্যাল মশাই, আপনি কিছু জানেন?
যোগজীবন মাথাটা নীচু করলেন।
অবিশ্যি আপনার বলতে আপত্তি থাকলে
না, রায় সাহেব। একটু আগেও সুবীর যা বলছিল গগন সম্পর্কে আমিও ঐ ধরনেরই একটা রিপোর্ট পেয়েছিলাম।
কার কাছে?
শমিতাই বলছিল।
কি বলেছিলেন তিনি?
বিশেষ কিছু বলেনি, কেবল বলেছিল, তোমার বন্ধুটি যে দাদা এমন একটা ব্রুট, ফিদি ক্যারাকটারের জানতাম না আমি!
আপনি কি বললেন?
ইট ওয়াজ র্যাদার শকিং টু মি! বুঝতেই পারছেন রায় সাহেব, তবু আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ব্যাপার কি? কিন্তু শমি কিছু ভেঙে স্পষ্ট করে বলেনি আর।
আপনি বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেননি কিছু?
না।
কেন?
আপনিই বলুন কেমন করে জিজ্ঞাসা করি!
আপনি আপনার বোনকে কিছু বলেননি ঐ কথাটা শোনার পর?
হ্যাঁ, বলেছিলাম একটা কথা!
কি?
গগনের বাসায় আর না যাওয়ার জন্য। তবে ঐ ঘটনার কিছুদিন আগে কথায় কথায় ও একদিন আমাকে বলেছিল, শীঘ্রই হয়ত ও আবার বিয়ে করতে পারে!
তাই নাকি? কাকে?
বলেছিল সময় হলেই জানাবে, তাই আমি জিজ্ঞাসা করিনি কিছু আর।
তারপর বিয়ের কথায় কিছু বলেননি আপনি?
হ্যাঁ, বলেছিলাম।
কি বলেছিলেন?
বলেছিলাম, ইফ ইউ রিয়েলি হ্যাঁভ সেটলড–ব্যাপারটা শেষ করে ফেল!
কি জবাব দিলেন তিনি?
কোন জবাব দেয়নি।
তাহলে শমিতা দেবী গগনবাবুর ওপরে ঐ ধরনের remark pass করার ব্যাপারটা আর বেশী কিছু খুলে বলেননি আপনাকে স্পষ্ট করে?
না।
কিরীটী এবার বাহাদুরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, বাহাদুর, রামদেওর জেনানা সব সময় তোমার সাহেবের ঘরে থাকত শুনলাম, জান কিছু তুমি?
আমিও দেখেছি বাবুজী।
আর কিছু দেখনি?
হাসিমস্করা হত, কিন্তু ব্যাপারটা আমার একটুও ভাল লাগত না বাবুজী!
কেন?
রামদেও ভীষণ রাগী লোক। সেরকম কিছু হলে ও সাহেবকে হয়ত খুনই করে দেবে!
আচ্ছা বাহাদুর–
জী!
তোমার সাহেবকে কে খুন করতে পারে বলে তোমার মনে হয়?
কেমন করে জানব বাবুজী! একমাত্র পশুপতিনাথই জানেন।
কিরীটী এবারে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল।
জ্যাকিকে কে খাবার দিত বাহাদুর? কিরীটী জিজ্ঞাসা করে।
জ্যাকি সাহেব ও রামদেওর হাতে ছাড়া কারও হাতে খেত না। সাহেবকে ও বড় ভালবাসত বাবুজী, খুব চোট লেগেছে ওর দিলে।
রামদেও কতদিন ছিল তোমার সাহেবের কাছে?
কমসে কম চোদ্দ সাল। মিলিটারিতে বরাবর সাহেবের ব্যাটম্যান ছিল শুনেছি। তারপর সাহেব যখন ছুটি নিয়ে আসেন, ওকেও ছুটি করিয়ে নিয়ে আসেন।
ঠাকুর প্রিয়লাল আর ভৃত্য রতন ওপরে আসত না?
না বাবুজী, ওদের ওপরে আসবার কোন হুকুম ছিল না।
দাদাবাবুরা?
দাদাবাবুরা আসত না ওপরে বড় একটা সাহেব না ডাকলে।
সাহেব ডাকতেন না?
এক-আধদিন হয়ত ডাকতেন।
তোমার সাহেব খুব মদ খেতেন?
হ্যাঁ। এক বোতল সাধারণতঃ দেড়দিন কি বড়জোর দু’দিনের বেশী কখনও যেত না।
যে দিদিমণি আসতেন, তিনি?
রামদেওর মুখে শুনেছি তিনিও নাকি খুব খেতেন সরাব।
আর রামদেওর স্ত্রী?
কে, রুক্মিণী?
হ্যাঁ!
হ্যাঁ বাবুজী, ওরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খেত।
সুবিনয়বাবু, সুবীরবাবু?
বলতে পারি না।
ঠিক আছে, তুমি এবারে রুক্মিণীকে এ ঘরে পাঠিয়ে দাও গে।
বাহাদুর চলে গেল।
অরূপ কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, একটা কথা আপনাকে কিন্তু আমি বলতে ভুলে গেছি মিঃ রায়–
কি বল তো।
ঐ ছোরাটার কথা—
মানে ঐ যে সাদা বাঁটের ছোরাটা যা দিয়ে গগনবাবুকে হত্যা করা হয়েছে?
হ্যাঁ, ছোরাটা নাকি ওঁরই মানে গগনবাবুরই।
কে বললে?
বাহাদুরই বলছিল। ছোরাটা ওঁরই শোবার ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকত।