তার বীণাটি নিয়ে আসতে পারেন?
বীণাটি কেন?
নিয়ে আসুন না। যাঁরা সত্যিকারের বাজিয়ে তাঁরা কখনও তাদের নিজেদের ব্যবহৃত ভাঙা বাদ্যযন্ত্র আপনার ভাইয়ের মত অত যত্নসহকারে সঙ্গে করে বয়ে নিয়ে বেড়ান না। আর একটা কথা, আপনি কোনদিন গল্পচ্ছলে নিশ্চয়ই আপনার ভাইয়ের কাছে আপনার বহু মূল্যবান সিংহাসনটির কথা বলেছিলেন!
হ্যাঁ!
এরপর রাণীসাহেবা গুপ্তদ্বারপথ দিয়ে তার ভাইয়ের বীণাযন্ত্রটি নিয়ে এলেন।
কিরীটী ইতিমধ্যে জামাকাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে ছিল।
ও কি, আপনি জামাকাপড় পরেছেন যে?
আমি এবার বিদায় নেব রাণীসাহেবা। আপনাদের পারিবারিক এ কলঙ্কের মধ্যে আর না থাকাই মঙ্গল। আপনি নিজে থেকে আজ রাত্রে আমার কাছে এভাবে না এলে ভেবেছিলাম চিঠিতেই আপনার কাছে সব লিখে রেখে ভোররাত্রের ট্রেনে চলে যাব।
কিন্তু স্টেশন তো এখান থেকে অনেক দূরের পথ!
শেষরাত্রের দিকে চাঁদ উঠবে। চাঁদের আলোয় হেঁটে চলে যাব, খুড়োমশাইকে বলে গেট খুলে রাখবার ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছি। ঐ বীণার খোলের মধ্যেই খুব সম্ভব আপনার সিংহাসনটি আছে!
হঠাৎ রাণীসাহেবার হাত থেকে বীণাটি মাটিতে পড়ে গেল এবং বীণার খোলটি ভেঙে দুটুকরো হয়ে গেল। রাণীসাহেবা বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখে দেখলেন, সেই দ্বিখণ্ডিত বীণার খোলের মধ্যে বত্রিশ সিংহাসনটি মোমবাতির আলোয় ঝলমল করছে।
কিরীটী মৃদু হাসল।
হাতের ঘড়ি দেখে বললে, এবার না বের হলে রাত্রি পাঁচটার ট্রেন আমি ধরতে পারব না, রাণীসাহেবা। আপনার স্বামীকে আমার নমস্কার দেবেন। আপনাদের হৃত জিনিস আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে আমি বিদায় নিলাম।
নমস্কার।
নিঃশব্দ পদসঞ্চারে কিরীটী ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।