কি?
সুবোধা—
বল, বল!
সুবোধা দিদিকে দুহাতে বুকে জাপটে ধরে–, সাবিত্রী আর বলতে পারে না, থেমে গেল। একটু থেমে আবার সাবিত্রী বলতে শুরু করে, আর এক রাত্রে–
কি?
অমনি জেগে ছিলাম, হঠাৎ দিদি আর সুবোধদার গলা শোনা গেল। শুনলাম দিদিকে সুবোধা বলছে, কাল একবার রাত্রে রাধেশ্যামের সঙ্গে দেখা করো, গতবারের মালের টাকা এখনও দেয়নি।
এবারে কি মাল ও পাচার করেছে? দিদি শুধায়।
সুবোধদা জবাব দেয়, দশ পেটি টেরিলিন ও সিল্ক–বেশ মোটা দাঁও—
ব্যাপারটা কিন্তু খুব risky সুবোধ—
ধ্যাৎ, no risk–no gain! বেঁচে থাক্ railway yeard যাক যা বললাম মনে থাকে যেন, বিশ-পঁচিশ হাজার টাকার মাল হবে—অনেক টাকা পাব শালার কাছে
দিদি তারপরই বললে, যাই বল সুবোধ, আমার বড় কেন যেন ভয় করে ওর কাছে যেতে রাত্রে–
কেন?
ও এমন শকুনের মত আমার দিকে তাকায়।
দোব হারামজাদার চোখ দুটো একদিন লোহার শলা দিয়ে গেলে। দিতামও—কেবল লোকটা বিশ্বাসী, তাই চুপ করে আছি।
তারপরই দিদি বললে, গতবার তুমি আমাকে কিছুই দাওনি—
দোব। এবারে এক থেকে দুহাজার দোব। সুবোধদা হাসতে হাসতে দিদিকে বললে।
শুনতে শুনতে আমি তখন যেন পাথর হয়ে গেছি। বলতে লাগল সাবিত্রী।
তারপর?
ঐ ঘটনারই দিন দুই বাদে হঠাৎ একদিন দিদির ব্যাগে দেখি দুটো সোনার বার আর আশিটা গিনি। আমার কিছুই আর তখন জানতে বাকি থাকে না।
আশ্চর্য! সুদর্শন বলে।
কি?
কিরীটীদা কিন্তু একেবারে ঠিক ঠিক অনুমান করেছিলেন!
কিরীটী কে?
আমার দাদা—কিরীটী রায়, বিখ্যাত সত্যসন্ধানী। সেদিন রাত্রে সুবোধের বাড়ি রেড করবার সময় যাকে আমার পাশে দেখছিলে—লম্বা, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা–
হঠাৎ সাবিত্রী বলে, একটা কথা বলব?
কি?
আমাকেও বোধ হয় বিচারের সময় আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিতে হবে?
কেন?
আমারই তো ভাই-বোন ছিল তারা। তাছাড়া—
তা কেন হবে?
সুবোধদা যদি আদালতে দিদির কথা তোলে!
মনে হয় তুলবে না। তবে যদি তোলেই, তোমাকে যাতে না যেতে হয় সেই চেষ্টাই করা হবে। তাছাড়া তোমার নাম রিপোর্টে কোথাও নেই—থাকবেও না।
সত্যি?
হ্যাঁ।
সত্যি বলছ? আদালতে আমাকে যেতে হবে না?
না।
কিন্তু
বল!
মা-বাবা—
না, তাঁদেরও যাতে না যেতে হয় সেই ব্যবস্থাই করা হবে। তবে—
তবে কি?
তোমার ছোড়দাকে হয়ত একবার যেতে হতে পারে।
সাবিত্রী হাত বাড়িয়ে সুদর্শনের একটা হাত চেপে ধরে।–আঃ, তুমি আমায় বাঁচালে। আদালতের কথা ভাবতে ভাবতে আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল এ কদিন।
এখন আর ভয় নেই তো? সুদর্শন মৃদু হেসে সাবিত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
না।
সত্যি বলছ?
সত্যি।
একটু পরে আবার সুদর্শন মৃদু গলায় ডাকে, সাবিত্রী!
সাবিত্রীর একটা হাত তখনও সুদর্শনর হাতের মধ্যে ধরা।
সাবিত্রী!
বল।
এবারে তাহলে আমি উঠি আজকের মত?
যাবে?
হ্যাঁ।
কাল আসবে না?
আসব বৈকি।
কখন?
বিকেলে।
.
৪০.
হাসপাতাল থেকে যখন বের হল সুদর্শন, বিকেলের আলো মিলিয়ে গিয়েছে। বুকের মধ্যে তার যেন একটা খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছিল।
সাবিত্রী—তার সাবিত্রী-আজ বুঝতে কষ্ট হয়নি, তার সাবিত্রী তার প্রতি আসক্ত। তাই কেবল নয়—এক-একবার মনে হয় সুদর্শনের, কিরীটীর ওখানে আজ আর যাবে না, এখানে-ওখানে খানিকটা ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।
তারপরেই আবার মনে হয়, কিরীটী তাকে যেতে বলেছেন—না গেলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন।
মনের মধ্যে যেন একটা সুর গুনগুনিয়ে চলেছে।
কিরীটীর গৃহ পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল সুদর্শনের।
সুদর্শন কিরীটীর মেজোনিন ফ্লোরের ঘরের কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে পা দিতেই স্মিতকণ্ঠে কিরীটী আহ্বান জানাল, এস, এস ভায়া! তারপর সংবাদ সব শুভ তো?
কীসের সংবাদ দাদা?
যে সংবাদের জন্য অধীর প্রতীক্ষ্ণয় আছি! কিরীটী বলে হাসতে হাসতে।
তা না বললে বুঝব কি করে?
বুঝতে পারছ না? কোন্ সংবাদের জন্য অধীর হয়ে আছি?
না।
কৃষ্ণা!
কিরীটী কৃষ্ণার মুখের দিকে এবারে তাকাল।
তুমিই তাহলে সংবাদটা নাও!
কৃষ্ণাও ঘরে ছিল। সে বললে, হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুদর্শনবাবু?
হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। অসতর্ক ভাবেই যেন কথাটা বলে ফেলে সুদর্শন।
কিরীটী হো হো করে হেসে ওঠে।
এবারে কৃষ্ণাই বলে, সাবিত্রী কেমন আছে?
ভাল।
কিরীটী ঐ সময় বলে ওঠে, তাহলে ভায়া, এক প্রজাপতি তার রঙের খেলায় তোমার চোখ ধাঁধিয়ে দিলেও অন্য প্রজাপতি সত্যিই তোমার জীবনে রঙ নিয়ে এল।
দাদা, আপনি যদি কেবলই ওই সব কথা বলেন তো আমি উঠে যাব!
আরে না না-বসো। আরও একটা সুখবর আছে হে।
সুখবর!
হ্যাঁ। কিরীটী বললে, তোমার কর্তার সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল আজই দুপুরে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, বললেন, তোমার প্রমোশনের জন্য তিনি রেকমেন্ড করবেন।
কৃষ্ণা বললে, বসো তোমরা, আমি চা নিয়ে আসি।
কিরীটী বলল, সুদর্শনের জন্য মিষ্টিও এনো কৃষ্ণা।
কৃষ্ণা হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
তারপর? সাবিত্রী কি বললে? কিরীটী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শুধায়।
আপনার ধারণাই ঠিক দাদা।
সুদর্শন বলতে শুরু করে সাবিত্রীর মুখ থেকে শোনা কাহিনী।