কার কাছে শুনলেন স্যার কথাটা?
শুনেছি। সত্যি নাকি কথাটা?
সত্যি। তেমন খেয়েছিলও মাধবীদির কাছে পটাপট!
কি খেয়েছিল?
কেন, ছাতার বাড়ি!
তাই নাকি? সুদর্শন হেসে ফেলে। যাঃ, আপনি বাড়িয়ে বলছেন!
হ্যাঁ, স্যার। সত্যি বলছি, গড় প্রমিস।
কিন্তু আমি তো শুনেছি, আপনার মামার সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতাই ছিল মাধবী দেবীর। যাতায়াত ছিল তার ওই দোকানে।
কার কাছে কথাটা শুনলেন স্যার?
শুনেছি আমি।
না স্যার, যে বলেছে স্রেফ গুল দিয়েছে। এক-আধবার মাধবীদি হয়ত গিয়ে থাকবে রাধেশ্যামের দোকানে গয়না-টয়না গড়াতে। রাধেশ্যামকে তো জানি, ওই সময়েই হয়ত হাতটাত ধরবার চেষ্টা করেছিল মাধবীদির, সঙ্গে সঙ্গে পটাপট ছাতার বাড়ি!
আচ্ছা জয়ন্তবাবু?
বলুন স্যার।
আপনার মামা বন্ধকী কারবারও করেন, তাই না?
রাধেশ্যাম যে কি করে আর কি না করে ভগবানও জানেন না। বললাম তো স্যার, ও একটি বাস্তুঘুঘু। কিন্তু এবারে আমি উঠতে পারি স্যার?
উঠবেন?
হ্যাঁ স্যার, প্রেসে যেতে হবে।
আচ্ছা আপনি আসুন।
জয়ন্ত যাবার জন্য উঠে দাঁড়ায় এবং যাবার আগে আবার বলে, দেখবেন স্যার, রাধেশ্যামের কানে যেন এসব কথা না যায়।
না না, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
জয়ন্তকে সুদর্শন বিদায় দিল।
.
২৫.
বাইরে জীপের শব্দ শোনা গেল ঐসময়।
তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে সুদর্শন।
লালবাজার থেকে বোধ হয় হোমিসাইডাল স্কোয়াডের কেউ এল।
সুদর্শনের অনুমান মিথ্যা নয়। হোমিসাইডাল স্কোয়াডের রাজেন বোস ইন্সপেক্টার জীপ থেকে নামলেন।
নমস্কার মিস্টার মল্লিক।
আসুন মিস্টার বোস।
চলুন, একবার স্পটটা ঘুরে আসি তাহলে?
চলুন।
রাজেন বোসের জীপেই উঠে বসে সুদর্শন। জীপে যেতে যেতে দুজনের মধ্যে। কথা হয়।
আপনার কি মনে হয় মিস্টার মল্লিক? রাজেন বোস প্রশ্ন করেন।
খুনটা এই তল্লাটেই গতরাত্রে কোথাও কোন এক সময় হয়েছে, তারপর হয়ত ডেড বডিটা ওইখানে নিয়ে গিয়ে ফেলে এসেছে হত্যাকারী ও তার দলবল। সুদর্শন বললে।
আপনার তাহলে মনে হয় এর পিছনে একটা গ্যাং আছে?
আমার তো অন্তত ধারণা তাই। সুদর্শন বলে।
ডি. এস. ও. সব শুনে তাই বলছিলেন। তিন বছরের মধ্যে এই তল্লাটে এতগুলো খুন, অথচ আজ পর্যন্ত খুনগুলোর কোন একটা হদিস পাওয়া গেল না।
আমার মনে হয় মিস্টার বোস, খুনগুলো সব একই সূত্রে গাঁথা–
কি রকম?
ওই ওয়াগন ভেঙে ইয়ার্ড থেকে মাল সরাবার ব্যাপারে সে গ্যাংটা কাজ করছে, এ তাদেরই কীর্তি।
আশ্চর্য নয় কিছু। তাছাড়া দেখুন না, ইয়ার্ডে এত পুলিস-প্রহরা রেখেও আজ পর্যন্ত ওই ওয়াগন থেকে মাল সরাবার ব্যাপারের কোন হদিস পাওয়া গেল না। বেটারা যে কি করে আগে থাকতেই টের পায়! চটপট হাওয়া হয়ে যায়!
সুদর্শন প্রত্যুত্তরে বললে, হয়ত যারা মাল খালাস করে বা মাল লোড করে, তাদেরই কেউ সন্ধান দেয় ওদের কিংবা রেলওয়ের কোন অফিসার বা ক্লার্ক। দলের মধ্যে হয়ত তারাও আছে।
সে সন্দেহ যে আমাদেরও মনে আসেনি মিস্টার মল্লিক, তাও নয়। যথেষ্ট সাবধানতাও নেওয়া হয়েছে সেজন্য।
ইতিমধ্যে জীপ মাঠের মধ্যে এসে গেল।
বটতলায় গাড়িটা রেখে ওরা হেঁটে এগিয়ে গেল স্পটে। যে সেপাইটা প্রহরা দিচ্ছিল সে সেলাম করল।
সুদর্শন আঙুল দিয়ে একটা জায়গা দেখিয়ে বললে, there you are, exactly এইখানেই ছিল ডেড বডি পড়ে।
রাজেন বোস সুদর্শন-প্রদর্শিত জায়গাটির দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ধরে জায়গাটার চারপাশে ঘুরে ঘুরে কি সব দেখলেন।
তারপর বললেন, আগের বারে সেই মেয়েটির ডেড বডিটা ওই বটগাছতলাতেই পড়েছিল মিস্টার মল্লিক, তাই না?
হ্যাঁ।
আচ্ছা এমনও তো হতে পারে মিস্টার মল্লিক, এখানেই গুলজার সিংহকে হত্যা করা হয়েছিল?
পিস্তলের গুলিতে যখন মারা হয়েছে তখন কি আশেপাশে তাহলে রক্তচিহ্ন থাকত না?
কিন্তু ডেড বডি টেনেহিঁচড়ে এখানে আনার তো কোন চিহ্ন চোখে পড়ছে না আশেপাশের মাটিতে! রাজেন বোস বলেন।
কিন্তু একটা কথা ভুল করছেন কেন মিঃ বোস, ডেড বডি ক্যারি করে এখানে নিয়ে আসা হলে সেরকম কোন চিহ্ন কি থাকত না? আর তাই আমার মনে হয়, ওই হত্যার ব্যাপারে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি নিশ্চয়ই জড়িত ছিল। সুদর্শন বলে।
তা অবিশ্যি হতে পারে। কিন্তু একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না, ডেড বডিটা রাস্তায় কোথাও না ফেলে এই মাঠের মধ্যেই বা হত্যাকারীরা বয়ে আনতে গেল কেন?
সেটা হয়ত যেখানে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক তার আশেপাশে কোথাও ডেড বডিটা পড়ে থাকলে পুলিসের ওই জায়গাটার ওপর নজর পড়তে পারে বলেই হত্যার পর বেশ কিছুটা দূরে ডেড বডিটা এনে ফেলে দিয়েছে যাতে করে অকুস্থান সম্পর্কে আমরা সচেতন হতে না পারি।
অস্বীকার করছি না, কিন্তু এই মাঠেই বা কেন ফেলা হল? যাকগে, চলুন ফেরা যাক।
ওরা আবার জীপে গিয়ে উঠল।
.
পরের দিন বিকেলের দিকে।
কিরীটী সুদর্শনকে ফোনে ডেকে পাঠিয়েছিল। সুদর্শন হাওড়ায় এসে একটা বালিগঞ্জ অভিমুখী বাসে উঠতেই সাবিত্রীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সাবিত্রী একটা সীটে বসেছিল।
সুদর্শনই প্রথমে সাবিত্রীকে দেখতে পেয়ে বলে, সাবিত্রী, তুমি!
সাবিত্রী সুদর্শনের মুখের দিকে চেয়ে মৃদু হাসে।
সুদর্শনের বসবার জায়গা ছিল না। কিন্তু সাবিত্রীর পাশের সিটটা তখনও খালিই ছিল।