নির্বাণীতোষের নিজের শিখেন্দুর প্রতি ভালবাসা, স্নেহ ও বিশ্বাস এবং সর্বোপরি এ-বাড়ির প্রত্যেকের তার প্রতি ভালবাসা ও বিশ্বাসের সুদৃঢ় বর্মটা গায়ে দিয়ে অনায়াসেই সে সকলের সন্দেহ থেকে দূরে যেতে পারত, ঘটনাচক্রে সে-রাত্রে আমি এখানে শিবতোষবাবুর আহ্বানে না এসে পড়লে হয়ত নির্বাণীতোষের হত্যাকারী চিরদিন অন্ধকারেই থেকে যেত।
বীরেন মুখার্জী বললেন, কিন্তু দীপিকাদেবী জ্ঞান ফিরে পাবার পর?
তখনো তিনি বলতেন কিনা সন্দেহ। এবং আজ যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাঁর ঘুমোননা মনের ওপরে একটা শক-এর আলোর ঝাপটা ফেলার, সেরকম কিছু না ঘটলে কবে যে তাঁর অহল্যার ঘুম ভাঙত তাই বা কে জানে! অবিশ্যি জেগে উঠে সব যখন তিনি জানতে পারবেন, নতুন করে আঘাত পাবেন এবং প্রচণ্ড আঘাতই পাবেন। সে কথা জেনেও আমি এই ব্যবস্থা করেছি, কারণ যতই আঘাত লাগুক তিনি তাঁর স্বামীর হত্যাকারীকে তো অন্তত চিনতে পারবেন।
ঐ ঘরে এসে কাহিনীর শেষাংশ শুরু করবার আগে কিরীটী নীচের তলা থেকে শিবতোষবাবুকে ডাকিয়ে আনিয়েছিল। তিনি সব শুনে যেন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। কিরীটীর বলা শেষ হবার পর মৃদু কণ্ঠে কেবল বললেন, আশ্চর্য, শিখেন্দু–!
শিবতোষবাবুর চোখে জল।
কারো মুখেই কোন কথা নেই। ভোরের আলো জানলাপথে তখন ঘরে এসে পড়েছে। কিন্তু পাশের ঘরে শয্যায় তখনো ওষুধের প্রভাবে দীপিকা আঘোরে ঘুমোচ্ছ। পরম নিশ্চিন্তেই যেন ঘুমোচ্ছে।