মুসলমান সমাজে কুসঙ্গের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। সৎ কথা, সদালাপ, সৎ উপদেশ যেন . একেবারেই সমাজ হতে উঠে গিয়েছে।
পরমুখাপেক্ষী না হয়ে, স্বাধীনভাবে পরিশ্রম করে যৌবনকে সার্থক কর। যৌবন যদি বৃথা নষ্ট করে ফেল–হঠকারিতা, প্রগলভতা, বাচালতা, বিলাসিতা, চরিত্রহীনতা প্রভৃতি দ্বারা জীবন নষ্ট করে ফেল, তা হলে শেষকালে অনুতাপ করেও কোনো ফল হবে না।
০৭. যুবকদের কর্কশ কণ্ঠ ও অন্ধবুদ্ধি
যুবকেরা যৌবনকালে সাধারণত অসহিষ্ণু হয়ে কর্কশ ঝাঝালো কথা বলে। ভদ্রতা, বিনয়, ধীরতার মূল্য তারা আদৌ অনুভব করে না। কি গৃহে, কি বাহিরে সর্বদাই অপেক্ষাকৃত হীন পদস্থ বা দুর্বল-শক্তি নর-নারীকে, এমন কি স্নেহ রসাÉ গুরুজনকেও কঠিন কণ্ঠে কথা বলে। সময়ে সময়ে এজন্য তারা যথেষ্ট অপদস্থ হয়। সময়ে শিক্ষা হয়, সময়ে শিক্ষা হয় না–উত্তরোত্তর রূঢ়তা ও স্বভাবের উগ্রতা বাড়তে থাকে।
অযথা আস্ফালন করাও তাদের স্বভাব। আত্ম-গৌরব, বংশগৌরব করে অপরকে হীন ও ছোট প্রতিপন্ন করতে তারা কোনো লজ্জাবোধ করে না। নিজের সম্বন্ধে অযথা একটা উচ্চ ধারণা পোষণ করে। ফলে বহুস্থানে, জীবনের অনেক কাজে ঠকতে হয়।
বৌকে প্রহার করাও তাদের এ বয়সের একটি রোগ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষকে উপহাস করা, পেছনে দাঁড়িয়ে বিদ্রূপ করা, মানুষের গ্লানি করা, দুই চারজন যুবক এক জায়গায় বসে–লাটকে ফকির করা, ফকিরকে লাট বাহাদুর করা, মানুষের চরিত্র সমালোচনা করা পথে পথে ঘুরে বেড়ান, নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনা ভুলে যাওয়া, দুর্বল মাকে উপেক্ষা করা, তাস, পাশা খেলা, সর্বত্র হঠকারিতার পরিচয় দেওয়া, বিচারশূন্য হয়ে মানুষকে মারা এবং অপদস্থ করা, তাদের দৈনিক স্বভাব হয়ে দাঁড়ায়। যুবকদের নিয়ে কাজ করা, বড়ই বিপদ। অসংযত চরিত্র, উদ্ধত স্বভাব, নিয়ম-বিদ্রোহী যুবকদের নিয়ে চলা এক সমস্যার বিষয়।
জায়গার বলে আস্ফালন করা, অগোচরে প্রতাপের পরিচয় দেওয়া, কোনো বিষয় ডিক্রি দেওয়া, ডিসমিস করা, তিন তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়া, অন্তসারশূন্য পদ গরিমা এবং শক্তিমত্তার পরিচয় দেওয়া যুবক জীবনের মস্ত বড় বোকামি। লাট সাহেবের চাইতে বেশি নবাবি চাল মারা কোনো কোনো যুবকের প্রকৃতি। ঘরের মধ্যে তেজস্বিতার পরিচয় দেওয়া, আপন স্ত্রীর কাছে মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, দাম্ভিকতা প্রকাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অগোচরে মানুষকে সম্মানের সঙ্গে লোক সমক্ষে ধরাই ভদ্রতা এবং মনুষ্যত্ব। কোনো কোনো লজ্জাহীন যুবক সারাজীবনেও এই অযথা আস্ফালন বর্জন করে না। জীবনে যতই তারা ছোট হতে থাকে; ততই দাম্ভিকতার পরিচয় দেয়। যে যত হীন সেই অগোচরে মানুষকে তত অসম ও তাচ্ছিল্য করে কথা বলে। তাদের নিজ পুত্রকেও এইভাবে কথা বলতে শিক্ষা দেয়। উচ্চ গরিমাব্যঞ্জক হাসিও এই বয়সের স্বভাব। কোনো কোনো যুবক অন্তরকে সুন্দর করার ইচ্ছা বর্জন করে এই বয়সে বাইরের সাজ-সজ্জা নিয়ে অতি মাত্রায় ব্যস্ত হয়। শেষকালে হয়তো তাদের মাথায় তেল জুটে না। নিজের সম্বন্ধে অযথা মিথ্যা গর্বিত ধারণা, অতিরিক্ত শঠতা ও বাচালতা যুবকদের সর্বনাশ করে।
.
০৮. পরের বুদ্ধি
যে যুবক পরের বুদ্ধি গ্রহণ করে, সে মরে। অথচ এই বয়সে যুবকদের অসংখ্য পরমার্শদাতা, যদিও হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু জুটে না। যার যা ইচ্ছা তাই বলুক–নিজে মুক্তি ও জয়ের পথ ভেবে নিয়ে অবিচলিতভাবে সে পথে চলা উচিত। কেউ কারো জীবনের গুপ্ত রহস্য অনুভব করে না। জীবনের কল্যাণ-সন্ধানের পথে এদেশে প্রজ্ঞাবান স্নেহের গুরু, পিতা ছাড়া কাউকে গ্রাহ্য করা উচিত নয়। পিতার কাছে জ্ঞানে না হলেও, স্নেহ ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতায় নত হতে হয়। তাতে ক্ষতি হলেও। আত্মশক্তি নিজের ব্যক্তিত্ব এবং নিজের স্বাধীন বিবেকবুদ্ধিতে বিশ্বাস চাই–বহু মত বহু সমালোচনায় জীবনের সমস্ত কার্যে সর্বনাশও হয়। নিজের গলায় ফাঁসি দিয়ে কোনো ব্যক্তিবিশেষের হাতে, তিনি যতই মহৎ হউক না কেন, তুলে দেওয়া আদৌ ঠিক নয়। ওতে যুবকের মনুষ্যত্ব একেবারে পশু হয়। বয়োজ্যেষ্ঠ, সম্মানী, ধনী, শিক্ষিত সাধু এবং গুরুজনকে সম্মান করা অন্যায় নয়। দেশের ও সমাজের রীতি অনুযায়ী তাদের আনুগত্য স্বীকার করা উচিত–ওতে মানুষ কখনও ছোট হয় না। ভিতরে যদি গুণ গরিমা থাকে–তবে মানুষ তোমাকে আপনাআপনি উচ্চস্তরে টেনে নেবে। মানুষের কাছে নত ও বিনয়ী হলে, কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। দুবৃত্ত, শয়তান কদাচারী মানুষকে অন্তর দিয়ে কখনও শ্রদ্ধা করা উচিত নয়। এইখানে যুবকের সত্য-সন্ধানী বিদ্রোহী-চিত্তের আরও বিদ্রোহী হওয়া উচিত। অযথা ভয়ে যুবক যেন অস্থির না হয়। তার নমস্য ও উপাস্য একমাত্র আল্লাহ্ সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের ভাবব্যঞ্জনা, অক্ষর দু’টিতে মিলিত হয়েছে। আলাদাভাবে ঐ অক্ষর দু’টির কোনো মূল্য নেই–ঐ শব্দেরও কোনো সম্মান নেই। তা যেন যুবকের মনে থাকে।
মনের সংকল্প কাউকে বলতে নেই। সংকল্প ঠিক করে কাজে লেগে যাও। ঘরকুণোর কখনও জীবনে উন্নতি হয় না। অত্যধিক গৃহপ্রীতি, বিদেশে যেতে ভয় করা–বড়ই দোষের। অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। মানুষের জন্য সাহায্য এবং বিপদ সব জায়গাতেই আছে। শরীরে যতদিন শক্তি সামর্থ্য আছে ততদিন বিদেশ করতে ভয় করতে নেই। মানুষের জন্যে চিরদিন বাঁধা পথ থাকে না।