যা উন্নত, মহৎ, দোষশূন্য ব্যবহার–তার সম্মুখে অতি দূরাচার ব্যক্তিও লজ্জায় মাথা নত করে। উন্নত মহৎ ব্যবহার সর্বদা ক্ষমাশীল প্রতিহিংসা বর্জিত, এবং পিতার স্নেহের মতো গভীর, সহিষ্ণু এবং …। বিবাহের রাত্রে এক যুবক অন্যায় করে এক যুবতী নারীকে অসতী বলে বিবাহ ভেঙ্গে দিলেন। বিবাহ মজলিস ভেঙ্গে গেল। এ জীবনে আর তার বিবাহ হল না। একবার এই যুবকের নিউমোনিয়া হল। এই যুবতী নারী যুবকের বিছানা পার্শ্বে তিন মাস বসে থেকে, তার সেবা করে তাকে রোগ মুক্ত করলেন। ভালো হয়ে যুবক চেয়ে দেখলেন, যে নারী–জীবনকে তিনি অন্ধকার করে দিয়েছেন, সেই তাকে বাঁচিয়েছে। যুবক মা বলে প্রৌঢ়ার (এখন তিনি প্রৌঢ়া) পা ধরে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন। নারী বল্লেন–আমি সেকথা ভুলে গেছি ভাই, অনেক দিন।
এক পীড়িত ভ্রাতাকে তার দুই কনিষ্ঠ ভ্রাতা সর্বস্ব বঞ্চিত করেছিলো। পীড়াকালের অনেক সময় অনেকদিন পীড়িত ভ্রাতার পরিবারবর্গ উপবাস করে থাকতেন, দুই কনিষ্ঠ ভ্রাতা স্বচ্ছল অবস্থায় থেকে সে দিকে ফিরেও তাকাতো না। ভ্রাতা যখন সুস্থ হয়ে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হলেন, সেই সময় দুই কনিষ্ঠ ভ্রাতার দুর্গতির সীমা রইল না, তখন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা উভয় ভ্রাতার ছেলেমেয়েদের ভার গ্রহণ করলেন। গত জীবনের কথা একটিবারও উচ্চারণ করলেন না। এরই নাম নিষ্কলঙ্ক, দোষশূন্য, মহৎ ব্যবহার–যা রাজার মুকুটের মতো গৌরবের ভূষণ।
কোনো এক জমিদার মৃত্যুকালে তার দ্বিতীয় পত্নীর প্ররোচনায় পূর্ব স্বামী-জাত ও প্রবাসী তার পুত্রকে সমস্ত সম্পত্তি দান করে যান। তার মৃত্যুর পর তাঁর প্রথমা পত্নীর জ্যেষ্ঠ পুত্র কিছু সন্দেহ না করে পিতার বিশাল সম্পত্তি যেন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থেকে পিতার সম্পত্তি চালাতে লাগলেন! তিন বৎসর পরে হঠাৎ বিমাতার পুত্র এসে বললো–এ সম্পত্তিতে আপনার কোনো অধিকার নেই। ভদ্রলোক কোনো প্রকার রোষ প্রকাশ না করে। তৎক্ষণাৎ হাসিমুখে জমিদারি ত্যাগ করে দরিদ্রের জীবন যাপন করতে লাগলেন। বিমাতার। পুত্র কিছুমাত্র বিবেচনা করলেন না। সে জন্য তিনি কোনো দিন অনুযোগ করেন না।
বহু বছর পর হঠাৎ বিমাতার পুত্র এই যুবক মারা গেলেন। তার ছোট যিনি তিনিও সুন্দরবনে ব্যাগ্র শিকার করতে যেয়ে মারা গেলেন। তখন বাধ্য হয়ে পিতার প্রথম জ্যেষষ্ঠপুত্র আবার স্ব-সম্পত্তির গদিতে বসলেন। সুখ-দুঃখে, সৌজন্যে দারিদ্র্যে তাঁর সমান ভাব। মুখে অহঙ্কার, আস্ফালন, দারিদ্র-দুঃখে দীর্ঘনিশ্বাস, অনুযোগ, মারামারি, কুৎসা রটনা কিছুই নেই। এরাই honourable motive-এর লোক।
.
২০. যুবকদের পড়াশুনা
সারা বৎসর বসে থেকে পরীক্ষার পূর্বে চোখে অন্ধকার দেখা, কোনো কোনো সময় পড়া ছেড়ে দেওয়া, পালিয়ে যাওয়া, আত্মহত্যা করা কোনো কোনো যুবকের স্বভাব। যুবক, হতাশ হয়ো না! বিশ্বাস করো, সহিষ্ণু হয়ে পড়তে শুরু করো। পাহাড় বলে যা মনে হচ্ছে তা মিষ্টি হালুয়া বলে মনে হবে। যা ভুল হয়েছে, তা হয়েছে–যে সময়ই থাক সহিষ্ণু হয়ে। পড়া শুরু কর–দেখতে পাবে কয়েকদিনেই অনেকটা এগিয়ে গেছ। বসে বসে ভাবলে, কিছু লাভ হবে না–ওতে যা পারতে তাও পারবে না। যে তোমার চাইতে ভালো জানে, সে আপন সহপাঠী হলেও অহঙ্কার ত্যাগ করে, তার কাছে বুঝে নাও তাতে কোনো লজ্জা নেই। অহঙ্কার করলেই ঠকবে। যে বেশি জানে, তার কাছে যেয়ে নত হয়ে পড়াশুনা নেওয়া খুব ভালো। মেধাবী ছেলে শিক্ষকের মতো সহপাঠীকে পড়িয়ে দিতে পারে। অহঙ্কার করে আজ তার কাছে যাচ্ছ না, কাল সে তোমাকে ছেড়ে উচ্চ শ্রেণীতে চলে যাবে। তুমি প্রকাশ্যভাবে যেখানে আছ সেখানেই পড়ে থেকে অর্থ সম্মান দুই হারাবে।
অনেক যুবক ভাবে, আমি খুব জানি। এই ধারণাও সর্বনাশের মূল। কুকুর বেশি দৌড়াতে পারলেও অনেক সময় কচ্ছপের কাছে হেরে যায়।
বৎসরের প্রথম থেকেই প্রত্যেক দিনকার পড়া প্রত্যেকদিন করবে-কখনও আলস্য করে ফেলে রেখো না। তাতে মাথায় পাহাড় চাপবে। একদা হযরত মুছা আদিষ্ট হলেন, কাল প্রাতে প্রথমেই মাঠে যা দেখতে পাবে তাই আহার করবে। প্রাতঃকালে মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখলেন–একটা বিরাট পাহাড়। পাহাড় দেখে মুছা ভীত হলেন, কিন্তু খোদার আদেশ অমান্য করা চলে না, তিনি অগ্রসর হতে লাগলেন। যতই নিকটবর্তী হতে লাগলেন। ততই বৃহৎদর্শন পাহাড় ছোট হতে লাগলো। নিকটে যেয়ে দেখলেন–পাহাড় নয়, এক টুকরা হালুয়া। পরম আনন্দে মুখে ফেলে দিয়ে সুস্বাদু হালুয়াটুকু খেয়ে ফেল্লেন।–এর। শিক্ষা হচ্ছে দূর থেকে কাজকে কঠিন বলে মনে হয়–চেষ্টা করলে কাজ অতি সহজ হয়ে ওঠে। কাজ দেখে কখনও ভয় পেয়ো না–একটু একটু করে চেষ্টা কর।
যেসব যুবক অনর্থ অত্যধিক শুক্র ব্যয় করে, তারা পাঠে মন সংযোগ করতে পারে। পড়াও তাদের হয় না। অতএব ছাত্রাবস্থায় ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করবে, মন্দ সংস্পর্শ ত্যাগ করবে। মন্দ গান, মন্দ পুস্তক, অশ্লীল আলাপ, নারী সংশ্রব ত্যাগ করবে। নইলে কখনও লেখাপড়া হবে না।
২১-২৫. যুবকদের স্বাস্থ্য ক্ষয়
২১. যুবকদের স্বাস্থ্য ক্ষয়
যুবকেরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সোনার শরীর ধ্বংস করে ফেলে। ও! কি যে সর্বনাশ করে, তা আর বলবার নয়। অস্বাভাবিকভাবে শুক্র ক্ষয় করে নিজের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলে। সেই ভগ্ন শরীরে বিবাহ করে দীর্ঘদিন অত্যাচার করে একেবারে মুষড়ে পড়ে। বড়লোক হলে অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেগ সামলে নিতে পারে। গরিব লোক হলে সে বিবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারায়। অত্যধিক শুক্র ক্ষয়ের ফল–পুরুষত্ব হীনতা, মেহ; প্রমেহ, জ্বর, কাশি, হাঁপানী, অজীর্ণ, শিঃরপীড়া, যক্ষ্মা, আলস্য এবং আরও বড় ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হয়।