থিয়েটারে যাওয়া, ছায়াচিত্র দেখা, Style বজায় রাখা, এইসব ব্যাপারেই যুবকেরা বাহুল্য খরচ করে।
.
১৫. যুবকের মুখে অশ্লীল ভাষা
কোনো কোনো যুবক এত ইতর (Vulgar) যে তারা কথায় কথায় অতি অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে। অতি মাত্রায় মূঢ় ও হীন না হলে যুবক কখনও ইতর হতে পারে না। বলতে কী এই শ্রেণীর যুবককে সমাজ থেকে বের করে দেওয়া উচিত, তবে সবাই যদি নীচ ও ইতর হয় তবে আর কে কাকে বের করে?
যুবকদের মনে করা উচিত, মনুষ্য এমন কি লম্পট, বেশ্যা পর্যন্ত যা দেখাতে লজ্জা বোধ করে,–তা প্রকাশ্যভাবে এক প্রকার মুক্ত করেই দেখানো কতখানি ভালো কাজ! নিতান্ত পশু না হলে কে কাকে উলঙ্গ করতে চায় এবং উলঙ্গ হতে চায়? নীচ শ্রেণীর যুবকেরা কথায়, ভাষায়, ব্যবহারে যেন সর্বদাই মানব সমাজে উলঙ্গ হয়ে তাদের কুৎসিত, উলঙ্গ বীভৎস মূর্তি দেখাতে চায়! ধিক! এইসব নরপিশাচ যুবকদেরকে, যারা অশ্লীল কথা বলতে লজ্জাবোধ করে না, যারা বৃথাই বস্ত্র পরিধান করে। ধিক! এদের পিতামাতাকে–এদের আত্মীয়-স্বজন ভ্রাতা-ভগ্নিকে!
এরূপ ছেলেকে সংসারের এবং সমাজের সকলেরই ঘৃণা করা উচিত। খোদা যা গোপন করতে বলেছেন, তা কথায় প্রকাশ করা ঘোর অধর্ম। যুবকেরা ধর্মের কোনো ধার ধারে না–তাদের মনে খোদার ভয় এক প্রকার নাই বল্লেই চলে।
সমাজের যে-সব লোক ইতর শ্রেণীর অন্তর্গত, তাদেরকেই অশ্লীল কথা বলতে শোনা যায়। তারা সাধারণত অশিক্ষিত অমার্জিত রুচির। তাই বলে শিক্ষিত ঘরে বা ভদ্রঘরের ছেলে বলে যদি কেউ দাবি করে, তারা যদি ইতরের মতো অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে, কথায় কথায় যেখানে সেখানে পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়ির ভিতরে, গুরুজনের সম্মুখে কুভাষা ব্যবহার করে, তবে সে বড়ই ঘৃণার কথা। সমাজের কেউ যদি জোর করে অন্যায় করতে থাকে, অন্যায় পথে চলে তবে প্রথমে তাকে সাবধান করে, তার সংশ্রব ত্যাগ করাই ভালো।
কোনো কোনো জননী বলে থাকেন–শিশুদের কুস্বভাব বড় হলে সেরে যাবে। কিন্তু সব সময় তা হয় না। বাল্যকালে অত্যধিক প্রশ্রয় পাওয়াতেই ছেলেদের স্বভাব মন্দ হতে থাকে, ততই তারা বেশি করে মন্দতায় দৃঢ় হতে থাকে–জীবনে আর সংশোধন হয় না।
খালি গোয়াল ভালো, তবু দুষ্ট এড়ে ভালো নয়। সংসারে যদি একটি ছেলে দুষ্ট, ইতর, অশ্লীল ভাষাসক্ত হয়ে ওঠে তবে তার দেখাদেখি বাড়ির সব ছেলে খারাপ হয়। পাড়া গাঁয়ের লোকদের মাঝে, সৎ কথার আলোচনা এক প্রকার নেই বললেই হয়। কোনো লোকের কোনো মন্দ ব্যবহার বা মন্দ স্বভাব দেখলে তাতে ঘৃণা প্রকাশ না করে, লোকে বরং উৎসাহই প্রদান করে–কারণ সকল মানুষই মন্দ! মন্দতায় কে কাকে কতখানি ছাড়িয়ে যেতে পারে, তাই যেন হয় সবার প্রতিযোগিতার বিষয়।
একটা ছেলে, একটা যুবক, একটা মানুষ, একটি বালিকা যখন ধ্বংসের পথে যেতে থাকে, তখন তার জন্য প্রত্যেক জ্ঞানবান মানুষের মনে কঠিন দুঃখ উপস্থিত হয়। শরীরের ধ্বংস অপেক্ষা আত্মিক ধ্বংসই অধিকতর আক্ষেপের বিষয়। হায়, মনুষ্য যেন বিনাশের জন্যই প্রস্তুত! জীবন যে চারু না!
১৬-২০. যুবকদের ধর্মজীবন
১৬. যুবকদের ধর্মজীবন
যুবকদের ধর্মজীবন বলে কিছু নেই। যখন যৌবনের উত্তেজনা তার শিরায় শিরায় নৃত্য করে, তখন উচ্ছৃঙ্খলতা, সৎ নিয়মের অবমাননাই হয় তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বিষয়। যে। যৌবন ঈশ্বরের আরাধনায় নিবেদিত হল না, বৃথাই সে যৌবন। যা কিছু শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর সাধনা–তার শ্রেষ্ঠ সময়ই যৌবনকাল। এই সময় যদি কদর্য শয়তানী প্রভাবে আত্মা অধঃপতিত হয়, তবে আর সে জীবনের উদ্ধারের আশা নেই। যৌবনের রক্তই আল্লাহ্ চান। আল্লাহর পূজা জানে, না করতে পারে?
সমস্ত রিপুকে দমন করে, যৌবনের তাবৎ সৌন্দর্য প্রভুর পাদপদ্মে নিবেদন কর। কে কবে ছিন্ন কুসুম দিয়ে দেবতার পূজা করে? যে জীবন দুর্বল, বার্ধক্যভারগ্রস্ত, জরাজীর্ণ, বলহীন সে জীবন কি আল্লাহর আরাধনার যোগ্য? তপস্যার প্রকৃষ্ট সময়ই যৌবন–হায়, এই যৌবনকালে যে প্রভুর এবাদত ত্যাগ করে বিফলে কাটিয়ে দিল–আক্ষেপ তার জন্যে!
বুড়াকালে আপনাআপনি খোদার নাম পড়বে। বুড়াকালে বেশ্যাও ধার্মিক হয়। যদি যৌবনে আল্লাহর ফকির হতে পার, সেই হয় শ্লাঘার বিষয়।
মহিলা ঋষি রাবেয়া তার যৌবনই নিবেদন করেছিলেন আল্লাহর পায়ে। যৌবনেই তার ফকিরি হাসেল হয়েছিল, তার নির্মল শুভ্র, প্রেমময় আত্মার ভক্তি বাণীর তুলনা কোথায়? যৌবনের অমন মহৎ আত্মোৎসর্গ কোথায় দেখা যায়? কী সুন্দর! কী সুন্দর! তিনি আজীবন অবিবাহিতা ছিলেন। যে প্রেমের স্বাদ পেয়েছে বিবাহ সংসার বন্ধন কি তার আর ভালো লাগে? সংসার কী?–এ কেবল ভস্ম মাটি আর আবর্জনা। যুবকেরা একেই পরম উপাদেয়, পরম সুন্দর পদার্থ বলে জানে। যার চোখের ঘুম ভেঙ্গেছে–সেই বুঝেছে, প্রভু কী?–সংসার কী?
কি নিয়ে মানুষ ডুবে থাকে সংসারে? সংসারের কি দেখে ছেলেরা সংসারের জন্যে এতো পাগল হয়। প্রভুর মহিমাময় প্রেমময় আহ্বান নিত্য যৌবনের কাছে থাকে, সে তা উপেক্ষা করে ছোটে বিপরীত দিকে কীসের লোভে, কিসের মায়ায়, কিসের আকর্ষণে?
একটি যুবক একদিন বলেছিল, নারীই অমর ঈশ্বর! পাঁচ বছর পরে তার ভিতর আর সে ভক্তি দেখা গেল না। কোথায় গেল তার মাদকতা, এত আকর্ষণ নারীর জন্যে?