১০. যুবকদের নীতিহীনতা
যুবকেরা ধর্মের ধারও ধারে না। ঈশ্বর-ভক্তি, ঈশ্বর-ভীতি, ধর্ম-ভাব যদি যৌবনকালে না থাকে, তবে সে জীবনের কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। সততা, নীতিনিষ্ঠা, সত্যনিষ্ঠা, ঈশ্বর প্রেম এসব যদি যৌবনকালে না হয় তবে কি আর বুড়াকালে হবে?
যৌবনকালে যুবকেরা অন্যায়, অধর্ম, জুয়াচুরি, প্রতারণা করতে যেন বাহাদুরী বোধ করে। ঈশ্বর কী, ধর্ম জিনিসটা কী, ভুলেও ভেবে দেখে না। গায়ের জোরে গর্জে বেড়ায়–এ যে কতবড় অন্যায়, তা বলবার নয়। যেন যুবকদের ধর্ম-কর্ম এবং ঈশ্বরের কোনো সংশ্রব নেই–যেন ওটা বুড়োকালের জিনিস।
সততা, বিনয়, সত্যনিষ্ঠা, ঈশ্বর-ভক্তি, ঈশ্বর-ভীতি এই-ই ধর্ম জীবনের সার বিষয়। রোজা-নামাজেই ধর্ম পালন হয় না। সারা জীবন অসম্ভবে যাপন করে বুড়াকালে রোজা নামাজ করে ক্ষতি পূরণ করে দেব–এইরূপ ইচ্ছাই অধিকাংশ যুবক পোষণ করেন। এরা
যে কত বড় নিকৃষ্ট শ্রেণীর লোক তা বলবার নয়। যে অভ্যাস যৌবনে হয় নাই। বার্ধক্যে তা হবে না। যার জীবন একবার কদর্য হয়েছে, সে কি আর বুড়াকালে ভালো হয়? বুড়াকালে সে আরও পাকা শয়তান হয়। তার জীবন ও স্বভাবে শয়তানী ভাব পাষাণের দাগের মতো বসে যায়–তার জীবনের আর পরিবর্তন হয় না–হাজার বার নামাজ পড়লেও না। সততাই মনুষ্য জীবনের ধর্ম–নামাজ তার বাহ্যিক পরিচয়–একটি সামাজিক ধর্ম। আসল ধর্মের সঙ্গে ওর কোনো সংশ্রব নাই। যুবক জীবনে বিচার চাই, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় জ্ঞান চাই। স্বভাবে বিনয় চাই। গুরুজনের প্রতি ভক্তি চাই। নীতি, নিষ্ঠা, সততা, সাধুতা, ন্যায়নিষ্ঠা আমাদের দেশে স্বপ্নের বিষয়। কি হিন্দু, কি মুসলমান এদের ধর্মের যেন নীচতা, মিথ্যা, ছলনা, প্রতারণা করতে লজ্জা বোধ করে না। জীবনের সংস্কারের সঙ্গে যেন ধর্ম জীবনের কোনো সংশ্রব নেই। এদের ধর্ম হচ্ছে নতুন কাপড়, ঢাক-ঢোল, মুখস্থ পড়া এবং উঠা-বসা করা। আত্মার সঙ্গে ধর্ম জীবনের কোনো সংশ্রব নেই। লেখাপড়া শিখেই ছেলেরা কোনো ফাঁকে চুরি করে, বাটপাড়ি করে দুপয়সা অর্জন করবে–সেই হয় এদের শ্রেষ্ঠ চিন্তা। বিচার, বিবেক, মিথ্যার সঙ্গে জীবনের সংগ্রাম–এদের ধর্মে লেখে না। এদেরকে সুসভ্য জাতিরা বর্বর ছাড়া আর কী বলবে! ছিল সবই, আছেও সব–দেশের নিকৃষ্ট শ্রেণীর হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সংখ্যা বাড়িয়েছে মাত্র। ইসলাম ধর্ম অনুভব করে নাই। ইসলাম ধর্মের প্রথম বিশ্বাস মন্ত্রের অর্থ প্রভাব এদের আত্মায় কাজ করে নাই। ফলে এরা জোর অধর্মের নরককুণ্ডে পড়ে মানব সমাজকে দূষিত করছে। নিজেরা তো সুখী নয়ই–পরিবার, গ্রাম, সমাজ সকলকে দূষিত করে চলেছে। যে জাতি বা যে মানুষের পাপ ও মিথ্যার সঙ্গে বিরোধ নেই, তার কোনো ধর্ম কর্ম নেই। তার ধর্ম কর্ম একটা তামাসা মাত্র। এক নামাজি নারীকে ডিম চুরি করতে দেখেছি, হুবহু মিথ্যা কথা বলতে শুনেছি–অথচ এই নারী জীবনাবধি কোনোদিন নামাজ অর্থাৎ উপাসনা ত্যাগ করে নাই। ঈশ্বর অর্থাৎ আল্লা কি, কোরান কি, কোরানে কি লেখা আছে, পরকাল কি–এ-সব এরা কিচ্ছু জানে না। এরা জীবন একভাবে যাপন করতে যায়। বুড়া কালে বার্ধক্যে নামাজ-রোজা করে। অর্থ হলে হজ্ব করে, কোরবানি করে, ছেলেদের খাত্তা দেয়–এই হচ্ছে এদের ধর্ম। জগতের উন্নতি, দশজনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করা, বাড়িতে দালান-কোঠা তোলা, পুকুর কাটা–এই হল এদের জল্পনা-কল্পনা। অবস্থাশালী হলে মুসলমানেরা প্রায়ই অত্যাচারী হয়। মনুষ্য জীবনের কর্তব্য কি, তা এরা জানে না। কেউ যদি খুব বেশি ধার্মিক হয়, সে কোনো পীরের কাছে মুরিদ হয়। পীরের কাছে পরকালের মুক্তির চাবি আছে, এই বিশ্বাসে এরা মাঝেমাঝে পীরকে টাকা দেয় এবং আশ্বস্ত হয়ে বসে থাকে। কি নর কি নারী আত্মার দিক দিয়ে এরা একেবারে মৃত। অতি হীন আলাপই হচ্ছে এদের প্রাত্যহিক কথার বিষয়। ‘ যৌবনকালে কি বিবাহিত কি অবিবাহিত, পাঁচজন একস্থানে জমা হয়ে অতি জঘন্য অতি কুৎসিত আলাপ করা যুবকদের বড়ই প্রিয় অভ্যাস। নারীর অঙ্গ নিয়ে এরা যে জঘন্য আলাপ করে, তা প্রকৃত মনুষ্য সন্তান শুনলে তাদেরকে একপাল বিষ্ঠাভোগী কুকুর বলবেন। কতভাবে, কত রকমে যে এরা নারী অঙ্গের সমালোচনা করে তার ইয়ত্তা নাই। হায়, নারীদেহে কী আছে? মূত্র–বিষ্ঠাপূর্ণ, কুৎসিত দর্শন মূত্রস্থান নিয়ে কী উৎসাহপূর্ণ গবেষণা। হায়, মনুষ্য! তুমি না দেবতার পুত্র? তুমি কি কুকুর-শাবক? তোমার এই প্রবৃত্তি? কী জিনিসে তুমি এত মুগ্ধ? ওরে অন্ধ যুবক! তুই এত পাগল? ইন্দ্রিয় লালসা তৃপ্তিতে কতটুকু সুখ! এই তুচ্ছ সুখের জন্যে তোর সোনার যৌবনকে কীভাবে মাটি করে দিস! হায়, পাগল! একবার ভালো করে বুঝে দেখ। ঐ পাপ আলোচনা করে জীবনের সর্বনাশ করিস নে। দেহস্থ পবিত্র শক্তির আধার বীর্যকে নষ্ট করে জীবনের সুখ শান্তি নষ্ট করিস নে। ঐ বীর্যের মতো মূল্যবান জিনিস আর নাই-ওর মূল্য রাজার রাজত্ব থেকে অনেক বেশি। তুই কি অবোধ পাগল দলের একজন হবি? শয়তানের প্রলোভনে পড়ে তোর চোখে-মুখে দুর্গন্ধ পুরীষ মাখাস নে। আঃ ছিঃ ছিঃ।
১১-১৫. যুবকের ভ্ৰম-প্রমাদপূর্ণ আত্মবিশ্বাস, দাম্ভিকতা এবং অহঙ্কার
১১. যুবকের ভ্ৰম-প্রমাদপূর্ণ আত্মবিশ্বাস, দাম্ভিকতা এবং অহঙ্কার