প্রভুর অপমানে, সত্যের পরাজয়ে, শয়তানের প্রতাপে যদি প্রাণে বেদনার সঞ্চার না হয়–তোমার তীর্থ ভ্রমণ, নামাজ, কোরান পাঠ, কোরবানি কোনো ধর্মক্রিয়ায় ফল হবে না।
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তার কর্ণকুহরে এই মহামন্ত্র দাও ‘আল্লাহু আকবর’। আল্লাহ্ই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ যা সত্য ও ন্যায়, যা সুন্দর এবং মঙ্গল, তাই মুসলমানের একমাত্র আরাধনার বস্তু। জীবনে তার একমাত্র উপাস্য ন্যায় ও সত্য। যা উত্তম, সত্য, মঙ্গল, শৃঙ্খলা প্রেমময় শক্তি ভাব, সীমার অতীত মহাজীবন, পরম শান্ত, পরম আনন্দ তাই পূজিত। ঈশ্বর জগতের জীবন। শয়তান পরম দুঃখের সর্ববিধ অনুষ্ঠাতা। সে ঈশ্বরের রাজ্য ধ্বংস করে, ঈশ্বরের প্রিয়তম সৃষ্টি মনুষ্য হৃদয়ে পাপের বিষ ঢালে, তাকে প্রলোভনে মুগ্ধ করে সমস্ত দুঃখ ও নরকের পথে আহ্বান করে–প্রভুর রাজ্যে সর্বনাশ সাধন, তার সৃষ্টিকে ধ্বংস করাই তার কাজ। সে মানুষকে, মনুষ্য সমাজকে প্রতি মুহূর্তে কুমন্ত্রণা দিয়ে উদভ্রান্ত করে। মনুষ্য মধ্যে যারা তার অনুগামী, কার্যে যারা তার ভক্ত, যারা কদাচারী, হীনচিত্ত, মূঢ়, মানুষকে যারা দুঃখ দেয়, মুখে আনুগত্য স্বীকার করলেও কার্যে যারা শয়তানকে সেজদা করে, সেই বিধর্মী দুরাচার মানুষের দল শয়তানেরই অনুচর। ধীবর যেমন মৎস্য ধরে, ঈশ্বরের সৈনিকেরা, যাবতীয় বিশ্বাসীরা যারা ঈশ্বরের গৌরব করেন–তারা শয়তান ও তার অনুচরদের বিরুদ্ধে চিরজীবন যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে জয়ী হয়ে সৈনিকেরা প্রভুর শান্তির রাজ্য বিস্তার করেন। শয়তানের মাথা নত হোক। পরাজয়ের গ্লানিতে তার মুখ মলিন হোক। এস, আমরা প্রভুকে এবং তার রাজত্বে উল্লাসিত হই এবং আনন্দ করি। প্রভুর জন্যে যুদ্ধে যদি আমরা মরি, সে আমাদের শহীদের মৃত্যু হবে। আমাদের যে সব ভ্রাতা ও ভগ্নি শয়তান এবং তার সেনাপতি ও সেনাদলের কাছে বন্দি হয়েছেন, তাদের উদ্ধার করি। এই তো আমাদের কাজ শয়তানের সঙ্গে ঈশ্বরের এবং তার সৈনিকদের সন্ধি অসম্ভব।
১১-১৫. প্রভুর সংবাদ বহন
১১. প্রভুর সংবাদ বহন
চল যারা পথহারা, পতিত, অশিক্ষিত, ঈশ্বরবর্জিত, পাপের অন্ধকারে ডুবে আছে; যেখানে আল্লাহর নাম কেউ লয় না–যেখানে আল্লাহর কথা কেউ ভাবে না–সেখানে যাই এবং আল্লাহর মহাবাণী শুনাই। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, এই-ই ধর্ম। এছাড়া কোনো উচ্চতর ধর্ম নাই। শুধু রোজা, নামাজ, কোরবানি কোনো ধর্ম নয়। ওরে পাগল, ভ্রান্ত, কীভাবে জীবন নষ্ট করলে?
নব যুগের, নব জাতির এই নূতন ধর্ম গ্রহণ কর। যদি গ্রহণ না কর তোমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মিথ্যা ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে আপন ধর্ম জীবনের সর্বনাশ সাধন করো না। পশুর ধর্ম পালন করো না, বর্বর, মূর্খের ধর্ম পালন করো না–মানুষের ধর্ম পালন কর।
সত্য ও সুন্দরের পূজারী হও।–সত্যের বাক্যের অন্ত নেই–প্রভুর বাক্য সত্যের বাক্যরূপে অনন্তকাল ধরে মানব জাতির কাছে থাকবে, সময় ও কালের উপযোগী হয়ে তাকে অশ্রদ্ধা করো না–প্রভুর বাণী গ্রহণ কর।
প্রভু বলেছেন, পতিত, মূর্খ, অবোধ, পৌত্তলিক, জ্ঞানহীন, পথহারা, ধর্মহীন, পাপ ব্যবসায়িনী নারীকুল, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভ্রান্ত নর-নারীর কাছে যাও। তাদের ভিতরে যেয়ে নামাজ পড় এবং প্রভুর শুভ ইচ্ছা জ্ঞাপন কর–মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পূজারী হতে বল–তাদের মধ্যে বিদ্যালয় স্থাপন কর, তাদের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার কর। পতিত মানুষের জন্য তুমি দায়ী।
বাংলার সহস্র সহস্র নারী বেশ্যাবৃত্তি করছে–এ মহাপাপ যে দেশে হচ্ছে সেখানে কি আল্লাহর এবাদত সিদ্ধ হয়? হায়! নারীর অনুষ্ঠিত এই পাপ ব্যবসা কি চোখে দেখা যায় বা কানে শোনা যায়? এ যে একে বারে অসহ্য ব্যাপার। এদের সাবধান করবার জন্যে কি মুসলিম সন্তানদের কিছু করবার নেই? নিশ্চয়ই আছে।
পতিত ভ্রান্ত মানুষ চন্দ্র, সূর্য, প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তি, বৃক্ষ, পাহাড়, সর্প, বরাহকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করছে। এদের উদ্ধারের জন্যে কী তোমার কিছু করবার নেই? দেশের শত শত মানুষ ধর্মহীন জীবন যাপন করছে, ঈশ্বর-হীন জীবন কাটাচ্ছে–এদের কাছে কিছু বলবার নেই আমাদের?
নিজের উন্নতির চেষ্টায় সারা জীবন ব্যয় করলে। নিজের পুত্রের জন্য টাকা রেখে যাচ্ছ। হয়তো ভবিষ্যতে তোমার টাকা তারা মদ খেয়ে উড়াবে। প্রভুর প্রচারের পথে তোমার অর্থ ব্যয় কর–এইভাবে তোমার সঞ্চিত ধন পবিত্র কর। হায়, জীবন শেষ হয়ে গেল, তবু ধর্ম কী তা বুঝতে পারলে না।
যাও, সর্বত্র–অন্ধকারে, অলিতে গলিতে প্রভুর আলো জ্বালো।–দিকে দিকে প্রভুর বাণী বহন কর।
হে সাহিত্যিক, হে কবি, হে লেখক, তোমাদের অমর লেখনীতে প্রভুর মহিমা ও আলো জ্বলে উঠুক। হে বক্তা প্রভুর বাণী তোমাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হোক। পৃথিবীতে যতগুলি মসজিদ আছে, প্রত্যেক মসজিদ ঘরের ইমাম যিনি–তিনি হবেন শিক্ষিত, সাধু, মসজিদের অন্তর্গত পল্লীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ধার্মিক ব্যক্তি। সেই পল্লীর সকল মানুষের ভার তার উপর দাও। তোমরা তার সাংসারিক অভাব পূর্ণ কর। প্রভুর প্রচার কার্যে তোমরা প্রত্যেকে কিছু কিছু দান কর–প্রভুর পথে দান ব্যতীত তোমাদের নামাজ কখনও সিদ্ধ হবে না। প্রভুর বাণী প্রচারে, দরিদ্রদের সাহায্যে, শিক্ষা বিস্তারে, হাসপাতাল প্রভৃতি মহৎ প্রতিষ্ঠানে যে দান করা হয়, তা প্রভুর পথে দান। দানবর্জিত শুষ্ক রোজা-নামাজের কোনো মূল্য নাই। তা লবণহীন ব্যঞ্জনের ন্যায় অপ্রিয়।