.
০৯. পবিত্র আত্মা
পবিত্র আত্মা মানুষকে উন্নতির পথে পরিচালিত করে। ন্যায়-অন্যায় কী তা বুঝিয়ে দেন। গুরুর মতো অন্যায় কার্যে মানুষকে অন্তর হতে ভর্ৎসনা করেন। যে পবিত্র আত্মাতে বিশ্বাসী নয়, সে মনুষ্য নামের যোগ্য নয়। পবিত্র আত্মার অবিশ্বাসী নর-নারীকে ধর্মহীন বলা যায়। পবিত্র আত্মাকে কোরানে রুহে কুদ্স’ বলা হয়েছে। মুসলমান সাধুরা অন্যত্র উহাকে ‘মানবাত্মায় ঈশ্বরের আসন’ এই নামে অভিহিত করেন।
পবিত্র আত্মা মানুষের বুকের ভিতর সদা বিরাজ করেন। মানুষ যে যে কথা বলে এবং যে কাজ করে, তার আগে সেই কাজ করা উচিত কিনা, এবং সেই কথা বলা ঠিক কিনা তা বলে দেন। যে পবিত্র আত্মার আদেশ পালন করে, তার অশেষ মঙ্গল হয়। সে ঈশ্বরের পথের সন্ধান পায়। পবিত্র আত্মা মানুষের পরম বন্ধু। পবিত্র আত্মার সহায় যে অনুভব করে, তার কাছ থেকে কোনো মঙ্গলের আশা করা যায় না। তার সংশ্রব ও সহবাস অশেষ দুঃখের কারণ। ঈশ্বর মনুষ্য ভাষায় তাঁর ভক্তের সঙ্গে কথা বলেন না। তার কাব্য পরম সত্যনিষ্ঠ ভক্ত আপন পবিত্র আত্মায় অনুভব করেন এবং তিনি সেই প্রভুর বাক্য মানবীয় জনসমাজে প্রচার করেন। যে মানুষের মধ্যে মিথ্যা আছে, ঈশ্বরের মহামহিমা ও মাহাত্ম্যকে যে ভক্তি ও পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখে না; সে ঈশ্বরের বাক্য বহন করবার যোগ্য নয়। সাধারণভাবে ধর্মপরায়ণ নরনারী মাত্রই আত্মার সর্বদা ঈশ্বরের আদেশ লাভ করেন এবং তদানুসারে কার্য করেন। মোটামুটিভাবে সাধারণ শ্রেণীর মানুষ আপন আপন বিবেকের আদেশকে ঈশ্বরের আদেশ বলে গ্রহণ করতে পারেন। বিবেকের বাণী পালন করতে অভ্যস্ত হয়ে ক্রমে ক্রমে নির্ভুল পরম সত্য ঈশ্বরবাণী আত্মায় প্রতিভাত হবে। ইহাই মানবাত্মার সম্পূর্ণ অবস্থা। ঈশ্বরবাণীরূপে কখনো কখনো শয়তান মনুষ্যকে ছলনা করে। একটু অসতর্ক হলে শয়তানের হাতে মানবাত্মার চরম দুর্গতি হবে। হয়ত ঈশ্বরবাক্য পালনের ভ্রান্ত ধারণায় সে নরকের পথে যাত্রা করবে। ঈশ্বরবাক্য সর্বদা সাহসী, বিদ্যুতের মতো, দিনের আলোর মতো সত্য–সে ধ্বনিতে বিন্দুমাত্র সংশয় বা সন্দেই থাকে না। যথার্থ ভক্ত ঈশ্বরবাক্য গম্ভীর বজ্রনিনাদে আপন কর্ণে শ্রবণ করেন। অনন্ত সৃষ্টি জুড়ে সে বাণী ধ্বনিত হয়, যার কান আছে সেই শোনে।
তোমাদের কাছে অনুরোধ নিজের সত্তা অনুভব করতে শেখ, নিজেকে বোধ করতে শেখ, নিজেকে বিচার করতে শেখ। মৃত হয়ো না। মৃতের আবার ধর্ম কী? নারী হও, পুরুষ হও–স্বামী, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, বন্ধু, পিতা-মাতা, সংসার, ধনসম্পত্তি হতে হাত তুলে, জায়নামাজে বসে নিজেকে চেন।
যদি প্রভুকে জীবনে না পাইয়া থাক, তবে জীবনে তোমার কিছুই পাওয়া হয় নাই। যার আত্মায় ঈশ্বর ধরা দিয়েছেন তার কোনো জাতিভেদ নাই, ভক্তমাত্রেই এক জাতি। আনন্দকে বর্জন করে প্রভুর পরিচয় হয়তো সহ্য করতে পারবে না।
ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, ধর্ম-অধর্ম সকল মানুষই বুঝতে পারে। তার মানে তার ভিতরে ঈশ্বর আছেন। মানুষের কাছে কোনো ধর্মগ্রন্থ না এলেও সে আপন আত্মায় তার প্রকৃত ধর্ম অনুভব করতে পারে। গায়ের জোরে অনেক সময় মানুষ অন্ধ হয়ে থাকে। বুঝেও বুঝে না। হিন্দু মুসলমান বলে দায় দিলে কী হবে? যে পতিত, সে পতিত, যে দুষ্ট,, সে দুষ্টু, যে অধার্মিক সে অধার্মিক মুসলমান হলেও। হে মনুষ্য, তোমার গায়ের জোরে মন্দ কাজ করো না। তোমার ভিতরের প্রভুকে জিজ্ঞেস কর তিনি তোমার সম্বন্ধে কী বলেন। তোমরা যদি নীচ, মন্দ, অধার্মিক, হারামখোর ও অত্যাচারী হও, তবে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দিলে কী হবে?’
.
১০. ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তার
ভক্তের জন্যে ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তারই ধর্মকার্য। প্রত্যেক মুসলমান ঈশ্বরের সৈনিক। সে প্রভুর পতাকা বহন করবে এবং তার রাজ্য বিস্তার করবে।
ঈশ্বর রাজ্যের ভাব কী? ঈশ্বর রাজ্যে অশান্তি, দুঃখ এবং কোনো শয়তানী ভাব কর্তৃত্ব করবে না। ঈশ্বর রাজ্য অর্থ স্বর্গ। এই জগৎকে স্বর্গে পরিণত করতে হবে। ইহাই ধার্মিকের কাজ। এই জগৎ হবে পরম শান্তি ও আনন্দের স্থান। এখানে পাপ থাকবে না–দুঃখ, দীর্ঘশ্বাস, নিরানন্দ, বেদনা, অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন, অন্ধকার থাকবে না, এরই নাম ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপন। জগৎ যতই পাপ মুক্ত হবে, ঈশ্বরের রাজ্য ততই বিস্তার লাভ করবে, প্রভুর এই কার্যে জীবন দান কর–এরই নাম ঈশ্বরের নামে কোরবানি। হে প্রভুর সৈনিকেরা, এই জন্যেই প্রভুর কাছে জীবন্ত প্রার্থনা করতে হবে। মৃতের ন্যায় মৃত প্রার্থনা করো না।
নারী ক্রন্দন যেন আকাশকে ব্যথিত না করে। সাবধান! তাকে স্বামী, চক্ষু এবং স্বাধীনতা দাও। তার বংশ তুলে গালি দিও না। এতে ব্যভিচার হয়–মহাপাপ হয়।
ঈশ্বরের রাজ্য মধ্যে যার অন্তরে বেদনা জাগে না, পৃথিবীতে শয়তানের কর্তৃত্ব সম্মানে যার মন দুঃখিত হয় না–সে ঈশ্বরের কেউ নয়। সংগ্রাম অর্থ শরীরের বল, তরবারি জ্ঞান, বক্তৃতা, সাহিত্য, উপন্যাস, কাব্য ও অভিনয় দ্বারা পাপের বিরুদ্ধে, শয়তানের বিরুদ্ধে, নর নারীর প্রাণে ঘৃণা সৃষ্টি করা–কুৎসিতের বিরুদ্ধে মানুষকে বিদ্রোহী করে তোলা। মানুষ সুন্দর, কল্যাণ, সত্য এবং মঙ্গলের উপাসক হোক, এই-ই ধর্ম।