রোজা-নামাজের অন্তরালে জীবনকে মিথ্যামুক্ত করতে চেষ্টা কর। জেনেশুনে অন্যায় ও মিথ্যা করে সর্বদা মসজিদ ঘরে যেয়ো না–ও মিথ্যা ভণ্ডামী ঈশ্বর সহ্য করতে পারে না। যে চোর, ঘুষখোর, প্রতারক, পরনিন্দুক, আহম্মক, অশিক্ষিত, পরস্বার্থহারী, বিশ্বাসঘাতকতার আবার রোজা-নামাজ কী? তোমার লম্বা জামা, দীর্ঘ নামাজ এবং লম্বিত শুশ্রুতে তুমি কিছুতেই বেহেস্তে যাবে না। রে ঘুষখোর–দুর্মতি, রে হারাম (অবৈধ অন্ন) খোর, বেশ্যা তোমরা কি জন্য কপালে তিলক কাটলে, তীর্থে যাত্রা করলে?
এক ব্যক্তি আপন ভ্রাতার পিতৃ-মাতৃহীন সন্তানের সম্পত্তি আত্মসাৎ করবার লোভ করেছে। যেদিন সে এই পিতৃ-মাতৃহীনের সম্পত্তির কেশাগ্র নষ্ট করতে ইচ্ছা করছে, সেদিন হতে তার জীবনের সমস্ত এবাদত, সমস্ত তীর্থ যাত্রার পুণ্য নষ্ট হয়েছে। রে অন্ধ, মানুষ ঠকাচ্ছ–আল্লাহকে কী করে ঠকাবে!
জীবনে সুন্দর হও–জীবনকে মিথ্যা হতে রক্ষা কর। হায় বিধর্মীরা তোমরা ঈশ্বরকে ধর্ম রক্ষার নামে এমনভাবে অপমান করলে? হে শুদ্ধাচারী তাপসগণ, হে ঈশ্বর। মনোনীতেরা, তোমরা ভণ্ড অধীকারীদের সর্পবৎ ভয় কর এবং তাদের সংশ্রব হতে দূরে থাক। অন্ধকার লোকচক্ষুর অগোচরে নিজেকে পরীক্ষা কর–দিবসে কয়টি মিথ্যা, কয়টি অন্যায় করেছ। তারপর নামাজে বসে সে জন্য অনুশোচনা কর–প্রতিজ্ঞা কর, দ্বিতীয় দিন আর পুনরায় তোমার দ্বারা তেমন অন্যায় হবে না।
দোহাই তোমাদের জীবনে সুন্দর ন্যায়বান এবং সত্যময় হও–আমাকে বিশ্বাস। কর। আমি হযরত মহম্মদের (সঃ) প্রতিনিধিরূপে তোমাদ্রে সাবধান করি। আমাকে। অসম্মান করো না।
পাপ করে করে নিত্যই ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর মনে করবে ক্ষমা হয়েছে। কোন্ পাগলে বলেছে, তোমাদের নামাজের পূণ্য আলাদা আর পাপের শাস্তি আলাদা। তোমরা মনে কর খোদার হাতে বণিকদের খাতা আছে–যেখানে প্রত্যেক মানুষের হিসাব জমা খরচ লেখা হবে! ওরে পাগল। জগতের আবর্জনা! তোমাদের নামাজে পুণ্য হয়, কে বলেছে? ও নামাজে এক রতি পুণ্য নাই। নামাজ অর্থ সালাত। সালাত অর্থ প্রার্থনা। প্রার্থনা।
অর্থ খোদার কাছে পাপের অনুশোচনা, কাদাকাটা করা। তুমি যা চাও, তাই পাও কিনা, সেই কথা ভাব। প্রার্থনা করলে, নামাজ পড়লে ঝুড়ি ঝুড়ি সোয়াব হবে অজ্ঞানদের মাঝে। এ বক্তৃতা দেওয়া চলে–একথা কি সজ্ঞান মানুষকে বলা যায়?
তোমার সম্মুখে পথ দুইটি–একটি বিনাশের পথ, আর একটি (জীবনের এহসান দেয়) মুক্তির।
একদিকে ঈশ্বর, অন্য দিকে শয়তান। একদিকে নূর, অন্যদিকে জুলমাত বা অন্ধকার।
প্রতিদিন ধীরে ধীরে চেষ্টা করে জীবনের পথে ঈশ্বরের দিকে অগ্রসর হতে হবে, দিন দিন সাধনা, অনুশোচনা, চিন্তা, অন্বেষণ ও প্রার্থনা দ্বারা ঈশ্বরের পথে অগ্রসর হবে অথবা। দিন দিন অবহেলা, পাপ, মন্দতার-পতন ও বিনাশের পথে ধাবিত হবে। দুই দিকেই।
অগ্রগতি কী করে হবে? পাপও করবে আলাদা, পূণ্যও করবে আলাদা–সে কি হয়!
সত্যের জন্য ন্যায়ের জন্য দুঃখ সহ্য কর। ইহাই এরাদত। ইহারই নাম ঈশ্বর। উপাসনা। ওষ্ঠের আবৃত্তিতে কি ঈশ্বর-অর্চনা হয়?
.
০৩. ঈশ্বরের অপমান
আমি দেখতে পাচ্ছি বর্তমানে নামাজকে একটা প্রতিমারূপে খাড়া করা হয়েছে। ওরই পূজা মুসলমানেরা করে।
প্রতিদিন মানুষ যে কীভাবে কতবার ঈশ্বরের অপমান করে তা সে বুঝতে পারে না। ঈশ্বর মানে তার কাছে একটা মানুষের মতো বাদশাহ। আকাশের সিংহাসনে বসে আছেন। আমি কি করি না করি কিছু ঠিক পান না। ভালো করে শেষকালে তোষামোদ করলে–তিনি স্বর্গে যেতে দেবেন। হায়, পুত্র-কন্যা এবং বিবির গলায় পুষ্পহারের জন্য মানুষ অর্থ লালসায় কীভাবে ঈশ্বরকে অপমান করে!
এক সরকারি ডাক্তার, তিনি সমাজ প্রেমে হাবুডুবু খেতেন। কাগজে প্রবন্ধও লিখতেন। বড় বড় বিজ্ঞানের কথা বলতেন। কোট-প্যান্ট পরতেন। যে সমস্ত লোক তার কাছে আসত তারা গোপনে তাকে এক কোনায় ডেকে নিয়ে যেতো আর ফিসফিস করে কিছু টাকা নিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট ম্যাজিষ্ট্রেটকে দিতে অনুরোধ করতো। ডাক্তার সাহেব মোটা রকম ঘুষ নিয়ে সত্যকে মিথ্যা করতেন মিথ্যাকে সত্য করতেন। এই কাজের দ্বারা তিনি কীভাবে কতবার সত্যকে অপমান করেছেন–সে জ্ঞান তার ছিল না। এতো ঈশ্বরকে অপমান করা। ঈশ্বর আর সত্য কী দুই? মুসলমান আর হিন্দুর ঈশ্বর কী দুই? ইসলাম ধর্ম! এর মতো মহৎ শ্রেষ্ঠ ধর্ম আর নাই।–এই ছিল সেই অর্থলোভী ডাক্তারের বড়াই। ইসলাম ধর্ম কি ঈশ্বরবর্জিত? যদি তা না হয়, তবে ঈশ্বরকে অপমান করে কি করে ইসলাম ধর্মকে ভালবাসা যায়? হায় ধর্ম! কে তোমাকে চায়? ঈশ্বর, আমি তো দেখতে পাই–যেখানে মিথ্যা কাজ-অন্যায়ের প্রাধান্য, সেখানেই তোমার অপমান। সর্বত্রই তোমার অপমান হচ্ছে! যেন তুমি কিছুই দেখতে পাচ্ছ না, বুঝতে পাচ্ছ না, এমনিভাবে তোমার সৃষ্টি মানুষ তোমার সঙ্গে ব্যবহার করে।
০৪. ধর্মের ব্যাখ্যা
বাংলা ১৩৮৪ সালে বৈশাখ সংখ্যায় মাসিক সাহিত্যিক’ পত্রিকায় গোলাম মকসুদ এম, এ, ‘মানব ধর্ম’ শীর্ষক প্রবন্ধে হযরত মহম্মদ-এর দুইটি বাক্য উদ্ধৃত করেছিলেন;
“ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত হও।”
“সমস্ত জগৎ আল্লাহতায়ালার নিকট পরিবার। যিনি তাঁহার পরিবারের যত অধিক উপকার করেন, তিনি তাঁহার নিকট তত অধিক প্রিয়।”