.
১৯. পাপীর প্রতি ক্ষমাশীলতা
ধার্মিকের পক্ষে অহঙ্কার করা বড়ই অন্যায়। যে ধার্মিক মনে মনে অহঙ্কার করে, অধার্মিক, বেনামাজি বা পাপী অবোধকে ঘৃণা করে–তাকে ধার্মিক বলা যায় না। ধার্মিকের প্রাণে পাপীর জন্যে দরদ থাকা চাই।
.
২০. আত্মমর্যাদা জ্ঞান
ধার্মিক ব্যক্তির আত্মমর্যাদা জ্ঞান থাকা চাই। আত্মমর্যাদা জ্ঞানকে অহঙ্কার বলা যায় না। জীবনে সূক্ষ্ম অনুভূতি চাই। যেন আত্মমর্যাদা জ্ঞান অহঙ্কাররূপে প্রকাশ না পায়। ছোটর কাছে যা মহত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব তা ভয়ে নত হওয়া উচিত নয়–এই-ই আত্মমর্যাদা জ্ঞানের ভাব।
.
২১. ক্রোধ এবং অহঙ্কার
যতক্ষণ মনে ক্রোধ এবং অহঙ্কার আছে ততক্ষণ স্বর্গের আশা করো না। ক্রোধ মাটি করে ফেল। নিজে মাটি হও তবেই স্বর্গের যোগ্য হবে। তার একটু আগে নয়। যুদ্ধকালে জনৈক কাফের হযরত আলীর মুখ ভরে থুতু নিক্ষেপ করলো। তৎক্ষণাৎ আলী তাকে ত্যাগ করলেন। কাফের কারণ জিজ্ঞাসা করলে আলী বললেন–বন্ধু যদি হত্যা করতে হয়, কর্তব্যের খাতিরে তা করতে হবে। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে নয়! তোমার। ব্যবহারে আমি ক্রুদ্ধ হয়েছি, তাই তোমায় ত্যাগ করলুম। কাফের তৎক্ষণাৎ আলীর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলো। সে বললো, যে ধর্মে এমন কথা বলে, সে ধর্ম নিশ্চয় সত্য। জনৈক সাধুকে পরীক্ষার জন্যে ৮০ বার ডাকা হল। ৮০ বার তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। সাধু কিছুমাত্র ক্রুদ্ধ বা উত্তেজিত হলেন না।
নবী করিম বলেছেন–যার ভিতর এক বিন্দু অহঙ্কার আছে সে স্বর্গের যোগ্য নয়। ক্রোধ আর অহঙ্কার একই জিনিস। যিনি ক্রোধ জয় করতে পেরেছেন, তিনি অহঙ্কারও জয় করেছেন।
নামাজ পড়তে পড়তে শিশুদের কলরব শুনে ক্রোধে তাদের উপর মুখভঙ্গি করে ওঠ। এখনও ঠিক পাও নাই, ধর্ম কি জিনিস? নামাজের ঘরেই শুধু যাওয়া-আসা কর।
নিজের ভিতরকার পশুগুলিকে চূর্ণ কর–তা হলেই তোমার ধার্মিকতা সিদ্ধ হবে।
.
২২. প্রতিহিংসা
যদি পার মহতের কল্যাণ কর নিষ্ঠুরাচারীর অকর্মের প্রতিশোধ নিও। সেই তো ধার্মিকের প্রকৃতি। যেমন পশুর আচরণ পেয়েছ, ঠিক তেমনি করে তুমিও কি করবে? না, না, না, কখনও না।
যে তোমায় আঘাত করেছে, হৃদয়ে বেদনা দিয়েছে, হত্যা করতে এসেছে, তাকে প্রেম করে ভালবেসে, জীবন দিয়ে প্রতিশোধ নাও। সেই হচ্ছে ধার্মিকের কাজ। স্বামীকে বিষ দিয়ে জায়দা নারী-ধর্ম পালন করেছেন। এমাম মরণকালে বললেন, জায়েদার সমস্ত পাপ আমি ক্ষমা করেছি। যাবৎ না তিনি স্বর্গে প্রবেশ করেন, তাবৎ স্বর্গ আমার জন্যে হারাম।
জনৈক স্পেনিস্ ভদ্রলোকের একমাত্র পুত্রকে হত্যা করে জনৈক খ্রিষ্টান যুবক তারই গৃহে আশ্রয় নিয়েছে। ভদ্রলোক যুবককে একটি অশ্ব আর একখানি তরবারি দিয়ে বললেন, যুবক রাত্রি, প্রভাত না হতেই পালিয়ে যাও, কী জানি পিতার মন, দুর্বল হয়ে তোমাকে আঘাত করতে পারি। এই হচ্ছে হত্যার উত্তম প্রতিশোধ!
জনৈক লম্পট হিন্দু নরপতি দরিদ্র ব্রাহ্মণ বধূর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে হরণ করবার জন্যে সহস্র সুবর্ণ মুদ্রাসহ লোক পাঠিয়েছেন। ব্রাহ্মণবধূ স্বহস্তে আপন গোপন পুষ্পবৎ স্তনযুগল কেটে রক্তমাখা করে একখানি থালায় স্থাপন করে নিজ হস্তে দূতের হাতে দিয়ে বললেন–এই নাও তোমার রাজ্য। যে জিনিসের লোভ করেছেন, তাই নিয়ে তাকে দাও, নির্লজ্জ লম্পটের নির্লজ্জ ব্যবহারের এই-ই উত্তম প্রতিশোধ!