যে ধার্মিক হতে চাও, আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে চাও–সে প্রতিবেশীর সঙ্গে আত্মীয়তা কর। প্রতিবেশী আত্মীয়ের চাইতেও আপন। যে প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব রাখে না–তার ঘরের পার্শ্বে চলাচল বন্ধ করবার জন্যে বেড়া তোলে–তার পক্ষে উচিত নয়, নামাজ ও কোরান পাঠ করা। প্রতিবেশীর জন্য অন্তরে যার সত্যের আলো জ্বলে না–কলবে (হৃদয়ে) যে ঈশ্বরের বাণীর ধ্বনি শুনতে পায় না–তার আবার রোজা-নামাজ কী? তার আবার ধর্ম কী?
প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখের সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখ মিলিত কর। তার সহস্র অপরাধ ক্ষমা। কর। তাকে আপনজন বলে গ্রহণ কর। তোমরা কি শহরবাসী সে প্রতিবেশীকে চেন না–যে প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে না? সে দস্যু, বিধর্মী এবং ব্যাভিচারী, সে তোমার প্রতিবেশী হলেও তাকে বেগানা অর্থাৎ তাকে বিদেশী মনে করবে।
আল্লাহর আদেশ–কারো অনিষ্ট করো না। মানব জীবনের কাছে আল্লাহর এই-ই অন্যতম শ্রেষ্ঠ আদেশ। যে ব্যাক্তি দ্বারা মানুষ দুঃখ পায় না, সেই তো ধার্মিক। ফকিররা পথে কাউকে বেদনা দেন না, আর তুমি নরাধম, গায়ের জোরে নিত্য মানুষকে কত দুঃখ দিচ্ছ! অপেক্ষা কর আল্লাহর শাস্তি তোমার চক্ষুকে অন্ধ করবে, তোমার বাহু শক্তিহীন হবে, তোমার পা অবশ হয়ে যাবে–তোমার নিকট আত্মীয় বিনষ্ট হবে। হে অবোধ, সাবধান হও। আল্লাহর শাস্তি নিকটবর্তী।
আল্লাহর আদেশ-ব্যভিচার করো না।
হায় কী সর্বনাশের কথা! বাংলার পথ-ঘাট ব্যভিচারের পাশে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে–ব্যভিচারের উৎসব চলছে। আল্লাহর গজব এসে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীকে নিশ্চয় ধ্বংস করবে। কেন ব্যভিচার কর? আল্লাহ্ কি তোমাদের বিবাহিত হতে নিষেধ করেছেন? বাংলার ব্যভিচারের জন্য হিন্দু সমাজই দায়ী বেশি–হায় এ মহা পাপের ভার ধরণী সহ্য করতে। পারে না। ওগো মা, ওগো জননী! তোমাদের পায়ে ধরি, ব্যভিচার করো না যদি অন্নের কাঙাল হয়ে বস্ত্রহীন হয়ে তোমরা ব্যভিচার করতে বাধ্য হয়ে থাক, তবে হে মুসলমান সমাজ, নামাজ বন্ধ করে ব্যভিচারিণী পাপ ব্যবসায়িনী নারী সমাজকে অন্ন, বস্ত্র এবং আশ্রয় দাও। এ পাপ যত দিন বন্ধ না হবে ততদিন তোমাদের নামাজ হবে না। কিছুতেই না। মুসলমান তুমি কি মরে গিয়েছ? তোমরা বেঁচে থাকতে আল্লাহর এত অপমান? এ পাপ কি চোখে দেখা যায়! হায়! হায়! কী হল। নারীদেহের কী দুর্গতি!
হায়, বাংলার যুবক সমাজ, হে কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ধনী, তোমরা ব্যভিচারের পাপকে প্রশ্রয় দিও না। এর মতো মহাপাপ আর নাই। এর ফল ইহকালেও অতি সাংঘাতিক।
ওগো! বাংলার পিতা-মাতা, তোমরা আপন আপন কন্যাকে শিক্ষিতা কর, তা হলে এ। মহাপাপ নারী কর্তৃক অনুষ্ঠিত হবে না। তোমরা বিধবাকে ঘরে রেখ না–তাদের বিবাহিত করাও।
বেশ্যাকে বল, সে যেন তার মহাপাপের জীবন ছেড়ে দেয়!–সে জীবিকার জন্যে অন্য কোনো ব্যবসা করুক। দোকান দিক। এমন কুকার্য কি মানুষে করে? এমন ঘৃণিত কাজ কি নারীর দ্বারা অনুষ্ঠিত হবে? অভাবে, দুর্গতিতে, সমাজ তাড়িত হয়ে নারীকে যেন বেশ্যাবৃত্তি না করতে হয় তা হলে দেশের সকল লোককেই এ মহাপাপের অংশগ্রহণ করতে হবে। হে দেশের সাহিত্যিকগণ, হে সমাজ-সংস্কারক, হে দেশ-সেবক, হে সম্পাদক তোমরা দেশে ব্যভিচারের বিরুদ্ধে তোমাদের আপন আপন শক্তি প্রয়োগ কর। এই কাজের জন্য একদল নারী মুক্তিসেনা প্রয়োজন। পতিত নারী বিষ এবং আগুনস্বরূপ–ওদের কাছে পুরুষ মানুষের যেতে নেই। গেলেই কলঙ্কিত হবে, পা ফসকে যাবে। কাজ করবার ওদের বাঁচবার শক্তি থাকবে না। নিজেরাই পতিত হবে।
পাপের চিত্ত দেখতে হলে, বেশ্যাদের কাছে যেও–এ মহাপাপ ক্ষেত্র, এমন মহাশ্মশান আর নাই।
আল্লাহর আদেশ–পরের কুৎসা রটনা করো না।
পরের নিন্দা করবার কী উৎকট ইচ্ছা সকলের! নিজের মধ্যে কত কদ, কত পাপ, সেদিকে একটি লোকও তাকায় না, শুধু পরের কথাই বলে।
যে যত ছোট সে তত পরের দোষ দেখে। নিজের দোষ-ত্রুটির কথা ভাবলে, সারা জীবন কেটে যায়। তুমি আবার অপরের ত্রুটি আলোচনা করছো? আল্লাহ্ যা নিষেধ করেছেন, কোন্ সাহসে তা কর? আবার নামাজ পড় শুধু নামাজই কি আল্লাহর আদেশ? আর যে আল্লাহর শত আদেশ উপেক্ষা করছ–সে দিকে লক্ষ্য নাই। নামাজ পড়লে চোখে দেখা যায়, তাই আনুষ সুখী হয়। আবার যে সব পাপ গোপনে করা হয় তা তো দেখা যায় না, তাই মানুষ বিরক্ত হয় না। মানুষ যে দিনের মধ্যে উঠতে বসতে কত পাপ করে, আল্লাহকে কত রকমে অপমান করে, তার কত আদেশ অগ্রাহ্য করে–তা ধরে দেখতে গেলে, মনে হয়, মানুষ শয়তানের অনুচর, আল্লাহর দাস নয়। দাসের কী এই কাজ? দাস কি কখনও প্রভুর আদেশ অমান্য করে আল্লাহকে এইভাবে তোমরা অপমান কর, তবু তিনি তোমাদের কত দয়া করেন। সারা জীবন ভরে তিনি তোমাদের অনুতাপের জন্য অপেক্ষা করেন। জীবন শেষ হয়ে যায়, তবু তোমরা সজাগ হও না।
আল্লাহর আদেশ পিতা-মাতাকে অমান্য করো না। অনেক মানুষকে দেখা যায়, জুম্মার নামাজ পড়তে চলেছে, অথচ ঘরে মা কলেরা রোগাক্রান্ত হয়ে কোন্ ফাঁকে মরে আছেন সে খবর রাখে না–মাকে যত্ন করা তো দূরের কথা। এই তো মানুষের নামাজ।
ছেলে সেয়ানা হয়েছে। বাপ-মা কী অবস্থায় থাকেন, কী খান সে সংবাদ কে রাখে? সেই বুড়াবুড়ি শেষকালে সংসারে দয়ার পাত্র-পাত্রী।