God is truth–M.S. Letter Gandi যার গায়ে বল আছে, তার প্রতাপ বেশি যে অর্থশালী, তার পক্ষই মানুষ অবলম্বন করে। ঈশ্বরের পক্ষ মানুষ অবলম্বন করে না। ন্যায় ও সত্যের পক্ষই ঈশ্বরের পক্ষ।
মানুষ মুখে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে, কার্যত সে শয়তানের পক্ষ অবলম্বন করে। তার প্রচারিত ধর্মের সঙ্গে জীবনের ধর্মের সঙ্গতি নাই। এ চালাকি আল্লাহর কাছে ঢাকা থাকে না। আল্লাহ মৌখিক তোষামদ চান না। তিনি দেখতে চান তার বান্দা কাজে তাঁকে। শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকার করছে কিনা! স্বীকার করাই হচ্ছে প্রকৃত ঈশ্বরের সম্মান।
যে অন্যায় পক্ষ অবলম্বন করে, মিথ্যাকে সম্মান করে, সে কাফের। সে শয়তানের অনুচর। যায় যাবে যাক প্রাণ, তবুও সত্যকে সমর্থন করব, এই হচ্ছে প্রকৃত বিশ্বাসী বা ঈমানদারের জীবন নীতি।
.
১৩. আল্লাহর আদেশ মিথ্যা কহিও না
ধিক সেই কুকুরকে যে মিথ্যা কথা বলে। জান তো মিথ্যার দ্বারা কত দুঃখ সৃষ্টি হয়। যে কুকুরের কথায় ঠিক নেই, যার প্রতিজ্ঞার ঠিক নেই, তার কোনো ধর্ম নেই।
এক প্রবীণ সম্পাদকের কাছে দুই মাস হেঁটেছিলাম। তিনি প্রত্যেক বারেই বলতেন–আগামী সপ্তাহে আপনার পুস্তকের সমালোচনা বের হবে। তিনি মিথ্যা কথা বলতেন।
পণ্ডিত, বৃদ্ধ, দেশনায়ক,শাসনকর্তা যে কেউ মিথ্যা বলুক, তাকে ভ্রান্ত বলা যায়। সে ব্যক্তি মনুষ্য সমাজের সম্মানের যোগ্য নয়। বাঙালির কথায় ঠিক নাই মিথ্যা বলা তার স্বভাব–অথচ বলে আমরা সুসভ্য জাতি, স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত দাবি, আমরা ধার্মিক। আমাদের ধর্মের ন্যায় শ্রেষ্ঠ ধর্ম আর নাই। বাঙালি যদি রাত্রি ৮টার কথা বলেন। তাতে পরদিন বেলা ৮টায় বুঝায়। আমি মিথ্যাবাদীকে নীচ কুকুর বলি। জীবনে যারা সত্যবান এবং সুন্দর নয়–তাদের কোনো ধর্ম নাই। আলী নামক এক কৃষক আবদুল নামক এক ভদ্রলোককে একদা লোকচক্ষুর অগোচরে গভীর রাত্রিতে পঞ্চাশটি টাকা কর্জ দেন। না দিলে ভদ্রলোকের বহু সহস্র টাকা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা ছিল। আলী কাউকে স্বাক্ষী না করেই সেই নিশীথ রাত্রে ভদ্রলোককে পঞ্চাশ টাকা দিলেন। আলীর এই মহৎ কার্যের বিষয় আর একটি লোক জানতেন, তিনি এক সাধু। এই ঘটনার পর ২/৩ বছর গেল। আলী আবদুলের কাছে সবিনয়ে আরজ করে বললো–টাকাগুলি ২/৩ মাসের মধ্যে ফেরত দিতে চেয়েছিলেন, তিন বছর হয়ে গেল, আমি এতদিন লজ্জায় চাই নি। আমার কষ্টার্জিত টাকা, আপনাকে কয়েক দিনের জন্যে মাত্র দিয়েছিলাম। একেবারে দেই নাই। আবদুল বললেন–অপেক্ষা কর। এইভাবে আরও এক বছর গেল। সাধু এই ব্যবহারের কথা শুনে বললেন, আপনার এই মহত্ত্বের প্রতিদান! ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
অবশেষে আলীকে রাজদ্বারে অভিযোগ জানাতে হল। একজন সাক্ষী না হলে আইনত কীভাবে ডিক্রি হবে? তাই সেই সাধু বিচারপতির সামনে যেয়ে বললেন–আমি আমার সম্মুখে টাকা দিতে দেখেছি। ফলে মোকাদ্দমার ডিক্রি হল। এই মিথ্যা কথায় দোষ হয়, নাই। অক্ষর পালন ধর্ম নয়।
অনুতপ্ত–সাধু, মহৎ প্রকৃতির ফরাশি দস্যু জিন্ ভালজিনকে ইন্সপেক্টর জাভার্টি ধরতে গেলেন, তখন পথে জনৈক সন্নাসিনী উপবিষ্ট ছিলেন। রাক্ষস ইন্সপেক্টর জিজ্ঞাসা করলেন, মাতা, কোনো লোক এই পথ দিয়া গিয়াছেন? সন্নাসিনী জানতেন, সেই পথ দিয়া জিন ভালজিন ঘরে প্রবেশ করে লুকিয়ে আছেন। তথাপি ইন্সপেক্টরের অপমান হতে তাকে রক্ষা করবার জন্য অম্লানভাবে কঠিন রূঢ় কণ্ঠে ঘৃণামিশ্রিত স্বরে বললেন–না, এ পথ দিয়ে কেউ যায় নাই। জিন্ ভালজিন আল্লাহর কাছে বহু পূর্বে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে মহাপুরুষ হয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ধর্ষ প্রতিহিংসাপরায়ণ ফরাশি পুলিশ তাকে চিরজীবন দাগী করে রেখেছিল। যাই হোক সন্ন্যাসিনী মাতার এই মিথ্যা কথা সত্য অপেক্ষা মধুর, পুণ্যজনক এবং সুন্দর। তথাপি জীবনের কাজে মিথ্যা কথা পাপ। যে মিথ্যা বলে সে সমুদ্রে ভাসমান তৃণখণ্ডের মতো–যে ভর সয় না, যার জীবনের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নাই। মিথ্যাকে আন্তরিক ঘৃণা করবে, এবং যে মিথ্যা বলে তাকেও আন্তরিক ঘৃণা করবে। জনৈক মৌলবী সাহেব সারারাত্রি নামাজ পড়তেন, অথচ বিচারালয়ে পরিষ্কার মিথ্যা বলতেন। জীবনে পরীক্ষায় যে জয়ী হয় না–তার নামাজের আবৃত্তি করে কী লাভ! অন্ধেরা বুঝে না মানুষ এবং খাঁটি মুসলমান হবার জন্য আল্লাহ্ নামাজ পড়ার আদেশ দিয়ে তাঁর বাণীগুলি দিনের মধ্যে পাঁচবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন যাতে মানুষ সাবধান হয়–সতর্ক হয়। আল্লাহর আদেশগুলি সর্বদা চোখের সামনে দেখে মানুষ মনে করে-সত্যে লাভও নাই, বলও নাই। তা হলে আর কেন বল–”আল্লাহু আকবর। আর সেই মহাবাণী বলে মাটিতে মাথা রাখ। এ ভণ্ডামি কেন কর। আল্লাহ্ অর্থ সত্য হক, ন্যায়, বিচার, উত্তমতা। মুখে যা বল, কার্যে তার বিপরীত সাক্ষ্য দাও। তা হলে কী করে বলি তোমরা ঈমানদার, তোমরা মুসলমান?
শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পরেই তার কর্ণে ‘আল্লাহু আকবর’ এই মহাবাণীর ধ্বনি তোলা হয়। হায়, জীবন ভরই সে কিন্তু এই মহাবাণীর অপমান করে। তার মুখের আর জীবনের কাজে সঙ্গতি কৈ?
.
১৪. প্রতিবেশীকে প্রেম করিও
আল্লাহর আদেশ–প্রতিবেশীকে প্রেম করিও। কৈ আপন প্রতিবেশীর সঙ্গেই তো মুসলমানের বেশি বিরোধ। “আপন ভ্রাতার সঙ্গে প্রথমে সন্ধি কর, অতঃপর মসজিদ ঘরে এস।” মানুষ নিজ প্রতিবেশীকে ঘৃণা করে, ছোট মনে করে–এই তো মুসলমান সমাজের আজ দৈনন্দিন কাজ।