.
১২. আল্লাহর আদেশ, নরহত্যা করো না
শুধু কি না বুঝে নামাজ পড়লেই ধর্ম জীবনের কর্তব্য পালিত হল?–কী মিথ্যা বিশ্বাস! না বুঝে নামাজের আবৃত্তি করেই আজ মুসলমানের ছুটি। এই অন্ধ নামাজ-রোজার সার্থকতা কোথায়? ভুল বিশ্বাসই মুসলমান সমাজের পতন এবং সর্বনাশের একমাত্র কারণ। আল্লাহর আর কোনো আদেশই তার পাষাণ, সংগ্রামহীন কর্মবিমুখ মনে সে অনুভব করে না। সে নামাজই পড়ে, কিন্তু সর্বপ্রকার কুকার্য করে–তার জীবন পশুর মতো বিচারহীন, অতিশয় কুৎসিত–অতিশয় মন্দ।
খুন কারা করে? প্রতিশোধ কারা নেয়? ব্যভিচার কে করে? মিথ্যা কথা কারা বলে? অল্প ওজনে জিনিস কারা দেয়? দোকানে রূঢ় কথা বলে ক্রেতাকে কারা অপমান করে? নারীর সম্পত্তি কারা হরণ করে? এতিমের সম্পত্তি কারা ভোগ করে? যেখানে যেখানে ধর্ম জীবনের পরীক্ষা সেখানেই মুসলমান অপারগ, অসমর্থ এবং গোনাহগার। কোরান, সূরা বকর ১৭৬ নম্বর আয়াত (বাক্য)—“পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ করলে পূণ্য হয় না। যে কেউ ঈশ্বরের ও শেষ বিচারে দিনে, স্বর্গের দূতগণে, সমস্ত অবতীর্ণ ঐশ্বরিক গ্রন্থে এবং নবীগণে বিশ্বাসী (এই সবের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আন্তরিক বিশ্বাস পোষণ করে) এবং তাঁর প্রেমে আত্মীয় ও অনাথদের (নিঃসহায়) ধন প্রদান করে, জাকাত দান করে প্রতিজ্ঞা পালন করে, দারিদ্র্যে, পীড়ায় ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যশীল হয়–তারা সত্য কথা বলিয়াছে–ঈশ্বরের ভক্ত বান্দা। আল্লাহ্তে যার বিশ্বাস নাই, তার আবার ধর্ম কী? তাঁর আবার জাতি কী? জিজ্ঞাসা করি, বুকে হাত রেখে বল, আল্লাহতে বিশ্বাস আছে কি?–তার বিদ্যামানতায়, তার প্রেমে, তার ন্যায় বিচারে, তার প্রতাপ ও শক্তিতে, তার নৈকট্যে, তার সর্ব ব্যাপকতায়, বিশ্বাস আছে কী?–একদিন তোমার কৃতকর্মের বিচার হবে, তার ফল তোমার ভোগ করতে হবে–এ বিশ্বাস আছে কি?
তোমাকে ‘কাফের’ ছাড়া আর কী বলি? তুমি ধর্মহীন গুরু। তুমি ঈশ্বরের দূতগণের অস্তিত্ব বিশ্বাস কর? তুমি কি অনাথ, দরিদ্র নিঃসহায় পথিক ও ভিক্ষুককে প্রেম করে থাক?
আজকাল একদল লোক ধর্মপথের পথিক নয়, ভিক্ষার জন্যে পথিক বা মুসাফির। আল্লাহ্ এদেরকে পথিক বলেন নাই। আল্লাহর পথে যারা পর্যটক, তারাই মানুষের সাহায্য দাবি করতে পারে। অশিক্ষিত, অকর্মণ্য, আলস্যপরায়ণ ব্যক্তিরা কখনও আল্লাহর পথের পথিক নয়।
অনাথ যারা, নিঃসহায় যারা তাদের কথা সমাজের একজনও ভাবে না। শুধু দালান দেওয়ার কথা, জমিদারি রক্ষার কথা, আপন পরিবারের সুখ-দুঃখের কথাই মানুষ বলে বলে শেষ করতে পারে না। আল্লাহর আদেশ মানুষের পালন করতে দেখি কৈ? সময়কালে একটু নামাজ পড়তে দেখি মাত্র! সাহেব বাকি সময় যেন রেগেই বসে থাকেন। কে কবে জাকাত দিয়ে থাকে?–আমি তো একজনকেও জাকাত দিতে দেখি না। মুসলমানকে আল্লাহর কোনো আদেশই পালন করতে দেখি না। শুধু নামাজের আবৃত্তিতেই কোনো কাজ হবে কি? তাও কেউ কেউ বৎসর শেষে একবারও মাত্র পড়ে। আল্লাহর সমস্ত প্রেরিত ধর্মগ্রন্থে কার বিশ্বাস আছে? কৈ এক কোরান ছাড়া কাউকে তো ইঞ্জিল (বাইবেল), জবুর, তওরাত পড়তে দেখি না। হযরত ঈসাকে তো অনেক মুসলমান গালি দেয়। কোরানে লেখা আছে–ইঞ্জিলে হেদায়েত ও জ্যোতি আছে। তার সন্ধান তো একজনকে করতে দেখি না! পাছে খ্রিষ্টান হতেই হবে। নইলে মুসলমান হবে কী করে? সে নিজের কোরানই বুঝে না, পড়ে না–তাতে অন্য ধর্মগ্রন্থ, আল্লাহর কোন আদেশটি সে মানে? মুসলমান প্রতিজ্ঞা পালন করে কৈ? তার মতো মিথ্যাবাদী আমি দেখি না।
দারিদ্রে তার ধৈর্য কৈ? একটু উপায়ের পথ পেলে সে দুই হাত দিয়ে লুট করতে থাকে। ক্ষমতা পেলে সে দারিদ্রের উপর জুলুম করে। বিশ্বাসঘাতকতা তার ধর্ম। দারিদ্র্যে সে ছলনা, প্রতারণা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়। সততাতার কাছে নাই।
আল্লাহর শত আদেশ সে অগ্রাহ্য করে। জীবন ভর সে আল্লাহকে অগ্রাহ্য করে বুড়াকালে কিছুদিন নামাজ নামে অন্ধভাবে আবৃত্তি করে।
ইহকাল, পরকালে কোনো মঙ্গল তার ভাগ্যে হওয়া সম্ভব? তোমরাই বিচার কর।
নামাজের সঙ্গে জীবনকে সত্যময়, নিষ্পাপ, মধুর, ঐশ্বরিক গুণভূষিত, নবী-পন্থী এবং সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে হত্যা করা দূরের কথা, মানব হৃদয়ে বেদনা দেওয়াও মহাপাপ। ঈশ্বরের হাতে প্রতিশোধ নেবার ভার দাও। তোমরা নিজেরা গোপনে মানুষকে হত্যা করো না। ধৈর্যশীল হও এবং প্রার্থনা কর।
আল্লাহর আদেশ, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না। ভয়ে মিথ্যা পক্ষ সমর্থন করা মহাপাপ। খোদাকেই ভয় কর ন্যায় পক্ষে কথা বল। বড় লোক বলে ভয়ে তার দিক হয়ে কথা বলো না–তা হলে তোমার ঈমানের কোনো মূল্য থাকবে না।
প্রায়ই দেখা যায় মানুষ ক্ষতির ভয়ে, প্রাণের ভয়ে সাংসারিক স্বার্থ নষ্ট হবার ভয়ে, ধনবানের পক্ষে কথা বলে। যথার্থ ধার্মিকের কাজ তা নয়। যা বিবেক, জ্ঞান ও ধর্মসঙ্গত, যা সত্য তা নির্ভীকভাবে প্রকাশ কর। অধার্মিকেরা আত্মীয় ও বলবানের দিকে টেনে কথা বলে। যেখানে সত্য লাঞ্ছিত হয়, বিচার অপমানিত হয়, সেখানে আল্লাহর অভিশাপ আসে। অন্ধের মতো মৌখিক নামাজ পড়লে, কাজ হবে না। কার্যে, কথায়, ব্যবহারে আল্লাহর মর্যাদা রক্ষা কর। যা আল্লাহ্, তাই সত্য, তাই ন্যায়, তাই বিচার।