ভাবলেন তাঁর নিজের পর্যবেক্ষণের ভুল আছে। আবার তিনি একদিন ছদ্মবেশে দেশ ত্যাগ করে সুইডেন উপনীত হলেন।
বহুকাল পরে মিলওয়ালা তাদের পুরান বন্ধুকে দেখে খুবই খুশী হলো। এবার অধিকতর মনোযোগ ও অভিনিবেশ সহকারে তিনি তাদের মিল পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। আবার অনেক বছর তার সেখানে কেটে গেল।
অধ্যবসায়, মনোযোগ ও চেষ্টার ফলে সমস্ত ভুলের যখন মীমাংসা হয়ে গেল, তখন রিচার্ড আবার একদিন পলায়ন করেন। এবার আর তাকে অপ্ৰস্তুত
হতে হলো না।
ইংলন্ডের একটি অতি লাভজনক ব্যবসার পথ তিনি প্ৰস্তুত করলেন। স্বদেশের ধনসম্পদ তাঁর অমানুষিক চেষ্টার ফলে অনেক পরিমাণে বেড়ে গেল।
সম্রাট দ্বিতীয় চার্লস এই ত্যাগী মহাপুরুষের গুণ স্বীকার করে তাকে স্যার উপাধিতে ভূষিত করলেন। সামান্য কৃষকের সন্তান ইংলন্ডের শ্রেষ্ঠ মনীষী সম্পপ্রদায়ের আসন লাভ করলেন।
উইলিয়াম ফিলিপসের জীবন-কাহিনী অতি বিস্ময়জনক। সামান্য রাখাল বালক উইলিয়ম নিজের শক্তিতে সম্রাটের দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলেন। রাখালের পক্ষে দেশের শ্রেষ্ঠ উপাধি লাভ করা সামান্য কথা নয়। মানুষ শক্তি ও গুণকে অবহেলা করে না। তাতে যে তাদের নিজেরই ক্ষতি। গুণ ও শক্তি মহা মানুষের অবলম্বন-পিতার নাম নহো জান না, খোদার কাছে গুণ ছাড়া অন্য কিছুর আদর নাই।
উইলিয়মের বাপ বন্দুক সারার কাজ করতেন। উইলিয়ম আর তার ভাইয়েরা একুনে ছিল ছাব্বিশ জন। সকল ভাই মজুরের কাজ করে ব্যাপকে সাহায্য করতো। উইলিয়ম গরু চরাতেন। রাখালের জীবন নিয়ে থাকতে উইলিয়াম জন্মেছিলেন না। ভিতরে তার শক্তি ঘুমিয়েছিল। তাঁর ইচ্ছা হলো উত্তাল সাগর তরঙ্গের সঙ্গে তিনি খেলা করেন। অন্তহীন নীলসমুদ্রের উপর দিয়ে জাহাজে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে তাঁর বাল্য হৃদয়ে ইচ্ছা হলো। কোন সুবিধা না হওয়ায় তিনি এক জাহাজের মিন্ত্রীর কাছে কাজ শিখতে লাগলেন। অল্প সময়ে জাহাজ নির্মাণে তিনি দক্ষ হয়ে উঠলেন। এই কাজ শিখবার কালে উঅবসর সময়ে তিনি বই পড়তেন। জাহাজের কাজ আরও ভাল করে শিখে তিনি বোস্টন শহরে নিজেই জাহাজ নির্মাণ আরম্ভ করেন। এখানে তিনি এক বিধবার পাণিগ্রহণ করেন।
ব্যবসা বেশ চলছিল। একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন-সহসা কতগুলি লোকের মুখে শুনতে পেলেন, একখানা জাহাজ বহু দ্রব্যসম্ভারে পরিপূর্ণ হয়ে সমুদ্র দিয়ে আসছিল—পথে জলমগ্ন হয়েছে। যে এই জাহাজ উদ্ধার করতে পারবে, সে কোটি টাকা পুরস্কার পাবে।
ঘৃতের ভিতর আগুন দিলে যেন সে ভীষণ ভাবে জ্বলে ওঠে-এই শুভ সংবাদটিও তেমনি করে উইলিয়মের বুকের ভিতর উদ্যম ও আশার আগুন জ্বেলে দিলা সমুদ্রমগ্ন জাহাজটি যদি উদ্ধার করা যায়, তাহলে কত লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ হয়।
অবিলম্বে উইলিয়ম নাবিক ও সব কিছু সংগ্রহ করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন। এই জাহাজখানা ড়ুবেছিল আমেরিকার সন্নিকটে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের কাছে।
উইলিয়মের আশা ও পরিশ্রম ব্যর্থ হলো না। তিনি ড়ুবোজাহাজের সন্ধান পেলেন এবং বহু মূল্যবান সামগ্ৰী উদ্ধার করলেন। কিন্তু বিস্তর খরচের সম্মুখে বিশেষ লাভ হলো না।
এর কিছুকাল পরে তিনি লোক মুখে গল্পকারে শুনতে পেলেন আর একখানা জাহাজের কথা। সেখানে সমুদ্রগর্ভে প্রচুর রত্নসামগ্ৰী নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে একটি জাহাজ ড়ুবেছিলা জনশ্রুতি ও উড়ো কথাকে অবলম্বন করে উইলিয়ম নতুন করে রত্ন লাভের আশায় সাগর অম্বেষণে বহির্গত হতে ইচ্ছা করলেন।
উইলিয়মের অবস্থা তত ভাল ছিল না। ভাল হলেও একজন মানুষের পক্ষে অত বড় একটা ব্যয়সাপেক্ষ কাজ ঘাড়ে নেওয়া নিতান্তই অসম্ভব।
উপায়াত্তর না দেখে তিনি সমাট দ্বিতীয় চার্লসের কাছে সাহায্যের জন্য সকল কথা নিবেদন করলেন। তার কথা, উৎসাহ ও বিশ্বাস দেখে শেষকালে সম্রাট চার্লস তাকে সাহায্য করতে প্ৰস্তুত হলেন।
বিপুল উদ্যমে রত্ন উদ্ধার আশায় উইলিয়াম আবার সমুদ্র যাত্রা করলেন। যারা তাঁর সঙ্গে গিয়েছিল তাদেরও উৎসাহের সীমা ছিল না, তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিল বহু অর্থ লাভ করে তারা বাড়ী ফিরবে।
নির্দিষ্ট স্থানে উপনীত হয়ে উইলিয়াম লোকজনসহ সমুদ্রগর্ভ অন্বেষণে ব্যাপৃত হলেন। অন্ধের মত অজানা রাজ্যে রত্বের সন্ধান করার কাজ সোজা নয়।
এইভাবে ক্লান্তি ও পরিশ্রমে মাসের পর মাস চলে যেতে লাগলো-কিন্তু কোন সুবিধা হলো না। ক্রমে নাবিকগণের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিল। উইলিয়মের বিশ্বাস কিন্তু একটুও শিথিল হলো না।
একজন বিশ্বাসী কর্মচারীর সাহায্যে উইলিয়ম জানতে পারলেন তাকে সমুদ্রের ভিতর ফেলে দেবার ষড়যন্ত্র চলছে। জাহাজও স্থানে স্থানে ভেঙ্গে গিয়েছিল। অবশেষে নানা কারণে উইলিয়ামকে ফিরে আসতে হলো।
উইলিয়াম নিমজিত জাহাজ সম্বন্ধে আরও অনেক সংবাদ জেনেছিলেন। বিলেতে এসে তিনি সকলকে সেই জাহাজ সম্বন্ধে নতুন নতুন তথ্য জানালেন। তাঁর উৎসাহ একটুও কমেছিল না-নতুন মানুষ নিয়ে তিনি আবার সেখানে যাত্রা করতে ইচ্ছক হলেন। কিন্তু এবার সম্রাটের কাছে তার কথা ও বিশ্বাসের মূল্য হলো না।
অগত্যা তিনি সাধারণের কাছ থেকে দ্বিতীয় বার যাত্রার ব্যয় তুলতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কে তাকে বিশ্বাস কররে? নতুন করে সাধারণের বিশ্বাস জন্মতে তাঁর দীর্ঘ চার বছর ধরে চেষ্টা করতে হয়েছিল। দীর্ঘ চার বছরের চেষ্টায় কেউ কেউ তাকে বিশ্বাস করতে অগ্রসর হলেন।