ডাক্তার ম্যাসন গাড়ীতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবার সময় একখানা বৃহৎ পুস্তক অনুবাদ করে ফেলেছিলেন। ডাক্তার ডারউইন বেড়াবার সময়েই তার অধিকাংশ বই লিখতেন। ডাক্তার বার্নে গান শিখাবার জন্য যখন এক ছাত্রের ইতালীয় ভাষার ব্যাকরণ।
এক উকিলের কেরানী বাসা থেকে অফিসে যাবার পথে শিখেছিলেন। গ্ৰীক ভাষা। ভাত খেতে ডাকলে ডিজুসে সব সময়েই দেরি করতেন। তার মানে, সে সময় তিনি বই লিখতেন। খাবার আগের সময়টুকুও বিনা কাজে ফেসে যেতে দিতেন না।
কামার ইলিহু বুরিট দোকান ঘরের ঠিকঠকির মধ্যে বসে আধুনিক ও পুরাতন ত্রিশটি ভাষায় পণ্ডিত হয়েছিলেন।
পথে যদি ৫০০ টাকা পাও তা হলে তোমার আনন্দের সীমা থাকে না। সময় রূপ অমূল্য রত্ন তোমার পায়ে জড়িয়ে পড়েছে, সেদিকে তোমার ভ্ৰক্ষেপ নাই। মানুষের কাছে টাকা চাও, সে তোমাকে ঘৃণা করবে। সময় সম্পদ নিয়ে তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে-দয়া করে তার রত্ন উপহারগুলি গ্রহণ করা।
কতকগুলি যুবক বাক্সটারের কাছে দেখা করতে যেয়ে বলেছিল-মহাশয়! আমাদের ভয় হচ্ছে, আপনার সময় নষ্ট করছি। অভদ্ৰ (?) জ্ঞানী বাক্সটার বললেন-নিশ্চয়ই।
জ্ঞানী যারা তাঁরা নিরন্তর সময়ের প্রান্তর হতে মণি-মুক্তা কুড়িয়ে নিচ্ছেন। তুমি আমি সুযোগের আশায়, সময় নাই বলে বা দারিদ্র্যের মিথ্যা অজুহাতে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছি। কাজ কর—কাজ কর—সব অবস্থায় সকল সময়ে যে কোন কাজ কর, তার ফল পাবে। প্রথম প্রথম হয়তো তোমার পরিশ্রম সার্থক হবে না-তাতে নিরাশ হয়ে না। বিখ্যাত সাহিত্যিক এডিসন স্পেকটেটর লিখে গৌরব অর্জন করবার আগে বস্তা বস্তা কাগজ লিখেছিলেন। সেইগুলি অকেজো ঘরের মধ্যে পড়ে থাকলেও, সেইসব মাবিশ লেখার ভিতরেই তাঁর গৌরব— উন্নতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল।
০৬. মৰ্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন-নিজের শক্তি সাধনা
কোন বংশ চিরকাল পুরানো মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে টিকে থাকতে পারে না। জাতির। যেমন পতন হয়, পরিবারেরও তেমন পতন হয়।
শিক্ষা, চরিত্র ও জ্ঞান মানুষ ও পরিবারকে সম্মানী করে-অর্থে সম্মানে সব দিক দিয়েই বড় করে। মানুষ যখন মূর্থি ও চরিত্রহীন হয়ে পড়ে তখন তার প্ৰভুত্ব ও সম্মান থাকে না।
তুমি আজ ছোট আছ—চরিত্রবান ও জ্ঞানী হও, তুমিও শ্রেষ্ঠ হবে ৷ কপালে ভদ্র বলে কারো কিছু লেখা নাই।
জান? মুসলমান জাতি কত বড় ছিল? জগৎ তার সভ্যতা অনুসরণ করতে গৌরব বোধ করতো। তাদের পতন হয়েছে কিসে?
জাপানকে সেদিন পর্যন্ত লোকে অসভ্য মনে করতো। সাধনার ফলে এখন তাদের স্থান কত উচ্চে। আমাদের নাসিকা কুঞ্চনের মূল্য কি?
আজ যে পরিবারকে তুমি হীন বলে মনে করছে—যাদের সাধনা ও পরিশ্রমের ফলকে তুমি ঘৃণার চাঃেখে৷ দেখছো, কিছুদিন পরে তোমাকে তাদের কৃপা ভিক্ষা করতে হবে। তোমার কুড়ে সস্তানকে তার বাড়ীর চাকর হতে হবে! এজগতে শুধু সাধনা, চরিত্র ও জ্ঞানের জয়। মূর্থি, কুড়ে ও মার্কামারা ভদ্রলোকের কোন মূল্য নাই। বাপের নামে তুমি পরিচিত হতে যেয়ো না! তুমি ভদ্রঘরে জন্মেছ, এ কথা তুমি বল না।
সম্রাট জনকে যে সমস্ত জমিদার হাতের পুতুল করে রেখেছিলেন নাম করবার মতো তাদের একজনও বেঁচে নেই।
সম্রাট প্রথম এডওয়ার্ডের এক বংশধরকে মাংস বেচে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। ডিউক অভ ক্লারেন্সের এক বংশধরকে স্ত্রপস্যারায় শহরে জুতো সারিতে হয়েছিল। বিলাতের শ্ৰেষ্ঠ জমিদার সাইমনের বংশের একজন লণ্ডন শহরে ঘোড়ার জিন তৈরী করতো।
অতীতকালে যাঁরা শ্রেষ্ঠ আসন অধিকার করেছিলেন, তাদের শক্তি ও সম্মান নতুন নতুন মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে।
তুমি ছোট আছ? মহত্ত্ব, সাধনা ও জীবন-সংগ্রামে তুমি জয়ী হও-জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশ তোমাতে হোক—তোমার বড় আসন হবে।
রিচার্ড নামে এক দরিদ্র কৃষকশ্রেণীর যুবক বিলেতে এক মিলে কাজ করতো। সে-মিলে লোহার কাটা তৈরী হতো। এই মিলের ব্যবসা ক্রমে নষ্ট হতে লাগলো। কারণ, সুইডেন হতে এক রকম কাঁটা আসতো, সেগুলি যেমন সস্তা তেমনি মজবুত। যুবক রিচার্ড মিলে আপন মনে কাজ করতো আর ভাবতো, কি করে কাঁটাগুলি সুইডেনের কাঁটার মত সস্তা এবং মজবুত করা যায়?
কিছু দিন যায়—হঠাৎ একদিন রিচার্ডকে মিলে কাজ করতে দেখা গেল না। সকলে মনে করল, রিচার্ড আলসেমী করে সেদিন কাজ করতে আসেনি। বস্তুত তখন পাগলবেশে একখানা বেহালা কাঁধে ফেলে একটা মহা উদ্দেশ্য বুকের ভিতর চেপে রেখে সুইডেনের জাহাজে পাড়ি দিলেন। স্বদেশের এই লাভজনক ব্যবসাটিকে বাঁচিয়ে দেশের মানুষের সম্পদ অক্ষুন্ন রাখাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। তার গান গাইবার ক্ষমতা ছিল! যথাসময়ে সুইডেন পৌঁছে সেখানকার মিলওয়ালাদিগকে গানের দ্বারা মুগ্ধ করে একটা আধ-বোঝা বোকারূপে সে কারখানায় প্রবেশ করবার ও থাকবার অনুমতি পায়। সকলে মনে করতে লাগলো, লোকটির বুদ্ধি নাই—শুধু একটু গাইতে পারে। কেউ তাকে সন্দেহ করলো না।
কারোর সন্দেহের পাত্র না হয়ে রিচার্ড দেখতো, কি উপায়ে এরা কাটা তৈরী করে।তাদের মিলের বিশেষত্ব কোথায়, এমন করে কয়েক বছর কেটে গেল। এক প্ৰভাতে মিলওয়ালা দেখলো তাদের বহুদিনের সঙ্গী সেই চেনা পাগলা আর নাই।
রিচার্ড যখন বুঝেছিলেন, কাঁটা তৈরীর সব কৌশল শেখা হয়েছে তখনই তিনি পালিয়েছিলেন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তাঁর সহসা অন্তহিত হবার অর্থাৎ সুইডেন যাত্রার কারণ যখন সকলে জানলেন, তখন মহাজনেরা লাভের আশায় উৎসাহিত হয়ে রিচার্ডকে ম্যানেজার করে এক বৃহৎ কারখানা স্থাপন করলেন। রিচার্ডের নির্দেশ অনুযায়ী যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলো, কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় কল চললো না। সকলে নিরুৎসাহ হয়ে পড়লো-রিচার্ডও যথেষ্ট অপ্ৰস্তুত হলেন। রিচার্ড ভাবলেন, এত কষ্ট, অর্থ ও পরিশ্রম সবই কি বৃথা হলো। রিচার্ডের বিশ্বাস ও মনের বল কিন্তু কমলো না।