ওয়াটের আবিষ্কারের ফলে আর্করাইট সুতা প্রস্তুত করবার উন্নত ধরনের কল প্ৰস্তুত করতে সক্ষম হন। আর্করাইট কোন বড় ঘরের ছেলে নন। প্রেসটন শহরে ১৭৩২ খ্ৰীষ্টাব্দে তার জন্ম হয়। বাবার অবস্থা খুব শোচনীয় ছিল। তের ছেলের মধ্যে আর্করাইট ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। কোন কালে তার স্কুলে যাবার ভাগ্য হয়নি। নিজে নিজে যা একটু পড়েছিলেন।
প্ৰথমে বাপ তাঁকে এক নাপিতের কারখানায় পাঠান। কাজ শেখা হলে আর্করাইট নিজে একটা দোকান খোলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পরচুলা লাগাবার ব্যবসাও আরম্ভ করলেন। শহরে শহরে মেলায় মেলায় ঘুরে তিনি চুল কিনে বেড়াতেন। এই ব্যবসা টেকসই হয় নাই। বিপন্ন হয়ে আর্করাইট ভাবলেন, একটা সুতা তৈরী করবার উন্নত ও ভাল রকমের যন্ত্র আবিষ্কার করলেই হয়। তারপর রাতদিন কেবল ভাবতে লাগলেন। রোজগার বন্ধ হয়ে গেল। অবস্থা যারপরনাই শোচনীয় হয়ে পড়লো। এর আগেই তিনি বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রী স্বামীর এই মাথাপাগলামী সহ্য করতে না পেরে একদিন যত যন্ত্রপাতি ছিল, সব ভেঙ্গেচুরে বাইরে ফেলে দিলেন। আর্করাইট এতে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন—ফলে, স্বামী-স্ত্রীতে চিরবিচ্ছেদ সংঘটিত হয়। গায়ে জামা নাই—পরনে জুতা নাই—ছিড়ে গিয়েছে— কিন্তু সেদিকে তাঁর ক্ৰক্ষেপ নাই। এক মনে তিনি ভাবতে লাগলেন কি করে উন্নত প্ৰণালীতে বাষ্পীয় শক্তির সাহায্যে সুতা তৈরী করবার যন্ত্র আবিষ্কার করা যায়।
ঐকান্তিক সাধনার সম্মুখে কিছু বেধে থাকে না। আর্করাইটের সাধনা ব্যর্থ হলো না। জগৎ সভ্যতার প্রধান ভিত্তি তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন।
আর্করাইটের চরিত্র বল অসীম ছিল। পরিশ্রম করবার শক্তিও তার ছিল অসাধারণ। এই আবিষ্কারের পর তিনি বড় বড় কারখানা স্থাপন করলেন। এইসব কারখানার কাজে তাকে প্ৰাতঃকাল হতে রাত্রি ন’টা পর্যন্ত অনবরত খাটতে হতো।
যখন তার বয়স পঞ্চাশ, তখন তিনি ইংরেজী ব্যাকরণ পড়া আরম্ভ করেন। কারণ, শুদ্ধ করে তখনও তাঁর দুই লাইন লিখবার ক্ষমতা ছিল না।
সম্পদ ও গৌরব তার লাভ হলো। মানুষের কল্যাণ তিনি করলেন। তাঁর মহৎ জীবনকে সম্মান করবার জন্য সম্রাট তাঁকে উপাধি দিলেন।
বিলাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষসিংহ স্যার রবার্ট পিলের নাম তোমরা শুনেছ। তিনি সম্রাট চতুর্থ জর্জের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর বাপ ছিলেন সামান্য কৃষক। বৃহৎ পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন চালান কঠিন হয়ে পড়াতে পিলের বাবা কাপড় বোনা আরম্ভ করলেন। তখনও কাপড়ের কারখানা বিলাতে স্থাপিত হয় নাই। লোক তখন বাড়ী বাড়ী কাপড় বুনতো। পিলের পিতা সাধু প্ৰকৃতির ও পরিশ্রমী লোক ছিলেন। এই ব্যবসা করতে করতে কাপড়ে ছাপ লাগানোর পন্থা আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করলেন। আর্করাইটের ন্যায় বহু চিন্তা, পরিশ্রম এবং ব্যর্থতার পর তিনি সাধনায় জয়ী হলেন। মানুষের চেষ্টা, অধ্যবসায় ও চিন্তার সম্মুখে কিছু অসম্ভব নয়।
স্যার রবার্ট পিল তাঁর পিতা সম্বন্ধে বলেছেন—পিতা বুদ্ধিমান এবং দৃষ্টিসম্পন্ন লোক ছিলেন। তাঁর দ্বারাই আমাদের বংশের শ্ৰীবৃদ্ধির সূচনা হয়। জাতির উন্নতি ব্যবসার উপর নির্ভর করে। দেশের সকল মানুষের শ্ৰীবৃদ্ধির প্রাণ ব্যবসা। এখানে-ওখানে দুই একজনের একটু আধটু উন্নত অবস্থার কোন মূল্য নাই।
বিশ বছর বয়সে পিল কয়েকখানা ভাঙ্গা ঘর আর মাত্র কয়েক শত টাকা নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেন।
সাধু, পরিশ্রমী এবং মিতব্যয়ী পিল ক্ৰমে উন্নতি করে নানা জায়গায় নতুন নতুন কারখানা খুললেন।
সম্পদ, সম্মান, কোটি কোটি টাকার মালিক পিল প্রথম বয়সে মজুর ছিলেন। সাধুতা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা তিনি দেশমান্য পুরুষ হতে পেরেছিলেন।
০৫. সাধনা ও পরিশ্রম
সাধনা ও পরিশ্রম ব্যতীত জগতে কোন উন্নতি হয় না। কপালের জোরে লক্ষ টাকা পাবে—এ কখনো বিশ্বাস করো না। যে কোন কাজই কর না, সম্যক পারদর্শিতা লাভ করতে হলে বহু বছর সাধনা করতে হবে।
ছোট নগণ্য ক্ষুদ্রকে ঘৃণা করো না। ক্ষুদ্রের সাহায্যেই বিরাটের সৃষ্টি। ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলি কাজে লাগালে জীবনে সোনা ফলাতে পারবে। রাতারাতি কেউ বড় মানুষ হয় না। হঠাৎ কোন সুবিধা কারো হয় না। হলেও তা বিশ্বাস করে নিজেকে দুর্বল করো না।
যারা কাপুরুষ তারাই ভাগ্যের দিকে চেয়ে থাকে। পুরুষ চায় নিজের শক্তির দিকে। তামোর বাহু, তামোর মাথা তামোকে টেনে তুলবে, তোমার কপাল নয়।
একদিন দুইদিন করে জীবনের দীর্ঘ সময় চলে যাচ্ছে-জগতে যারা বড়, তারা অপচয় সহ্য করবেন না।
ওয়াট যে সময় দোকানে বসে বেচাকেনা করতেন। সেই সময় তিনি রসায়নশাস্ত্র ও জার্মান ভাষা আলোচনা করে উভয় বিষয়েই পণ্ডিত হয়েছিলেন। তুমি এ কথা শুনে হয়ত বিস্মিত হবে। স্টিফেনসন ইঞ্জিনে কয়লা যোগাতেন। আর অঙ্ক করতেন।
যত সময় তুমি হাসিগল্পে ও ঠাট্টায় কাটিয়ে দাও-তার ভিতর থেকে বেশী নয়, এক ঘণ্টা সরিয়ে রাখা। সমস্ত দিনে-রাত্রে মাত্র এই এক ঘণ্টা যদি তুমি কোন কোন বিষয় আলোচনা করা দেখতে পাবে, দশ বছর পরে তুমি একজন বড় পণ্ডিত হয়েছ। বন্ধু ও সঙ্গীদের কাছে তোমার সম্মান বেড়েছে। হয়ত তুমি সমস্ত জগতের ইতিহাস জেনে ফেলেছ—অঙ্কশাস্ত্ৰে প্ৰভূত পণ্ডিত্য লাভ করেছ, একজন বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হয়ে পড়েছ কিংবা অর্থসহ সমস্ত কোরআন শরীফ বা গীতাখানা মুখস্থ করে ফেলেছ।