মেষের পাল তাড়িয়ে এক নদীকূলে যেয়ে দাঁড়িয়েছ। কত মারামারি করছ, তবু একটা মেষও জলে নামছে না। নদী পার না হলেও হবে না। হঠাৎ একটা মেষ জলের ভিতর লাফিয়ে পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে সবগুলি মেষ জলের ভিতর লাফিয়ে পড়তে শুরু করলো।
মনে তোমার অনেক চিত্তা আছে, কিন্তু কাজ করতে পারছি না। কারণ, তুমি দেখা নাই কাউকে সেই কাজ করতে, যা তুমি করতে চাও! তুমি বুঝতে পােচ্ছ, এটা তোমার দুর্বলতা। তবুও তুমি পার না। কি বিস্ময়৷
ব্যবসা করা খুব ভাল। ছাড়, অর্থহীন চাকরিতে তোমার দুঃখ-বেদনা, অভাব-দৈন্য বেড়ে যাচ্ছে; কিন্তু তবু তুমি এর নাগপাশ ত্যাগ করে ব্যবসা করতে পার না। কারণ, তোমার বন্ধু-বান্ধবদের কেউ ব্যবসা করে তোমার সামনে দৃষ্টান্ত ধরে নাই।
দার্শনিক সক্রেটিসের মতো হাটের ভিতরে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষকে সপ্তাহে সপ্তাহে মহত্ত্বের কথা বলতে তোমার ইচ্ছা হয়। প্রতি রবিবারে গ্রামের কৃষকদিগকে ডেকে এনে তাদের কাছে খবরের কাগজ পড়ে তাদের জীবনকে অপেক্ষাকৃত ভাল করতে তুমি চাও। তোমার কোন কাজ নেই, নিষ্কর্ম জীবনের ভার তোমার কাছে দুৰ্বহ হয়ে উঠেছে, তোমার ইচ্ছা হয়, প্রতিবেশী ছোটলোক, হীন লোকগুলোকে নিয়ে তুমি নৈতিক কথার আলোচনা কর, তাদের ছেলেগুলোকে ধরে এনে একটু একটু পড়াও, ভবিষ্যৎ জীবনে যাতে তারা অপেক্ষাকৃত ভাল হয়। কিন্তু তা তুমি পার না, কারণ কাউকে এসব কাজ করতে তুমি দেখা নাই। তোমার এই সব উন্নত ও মহৎ কল্পনা জল বুদবুদের মত মিথ্যা হয়ে যায়।
পুণ্য ও মহত্ত্বকে যেমন অনুকরণ করি, পাপ ও হীনতার স্পর্শে তেমনি হই। একদল বন্ধু ছিলেন। তাদের ভিতর পাপ কথার আলোচনা কোনকালে হতো না, তাদের জীবন মহৎ না। হলেও হীন ছিল না। মাঝে মাঝে ভাল কথার আলোচনাও তাদের মধ্যে হতো।
হঠাৎ এক লম্পট তাদের বন্ধু হয়ে দেখা দিলো। আশ্চর্য, কিছুদিনের ভিতর এই লম্পটের স্পর্শে এসে সবগুলি যুবক হীন ও নীচাশয় হয়ে গেল। হীন রমণীয় রূপযৌবন নিয়ে ছিলো তাদের সব সময়ের কথা।
তোমার পত্নী খুবই বিলাসিনী। হাতে হাঁড়ি ধরতে ঘৃণা বোধ করেন। দাসীতে যা রান্না করে তাই তিনি খান। পাছে সম্মান নষ্ট হয়, এই ভয়ে কোন কিছুর হিসাব নেন না। তিনি যদি সম্রাট নাসিরদিনের মহিষীর সরল জীবনকথা শোনেন, তাহলে তাঁর অহঙ্কার অনেক কমে যাবে।
মানুষ কি করে মানুষকে অনুকরণ করে প্রাণ পর্যন্ত দিতে যায়, তা নিম্নলিখিত গল্পে ফুটে উঠেছে। সমুদ্রে একবার ভয়ানক ঝড় হচ্ছিল। হঠাৎ এই ঝড়ের ভিতর একখানা জাহাজ ড়ুবে গেল, উপকূলের কাছেই।
কে যাবে যাত্রীদিগকে দেখে উদ্ধার করতে? উপকূলে অনেক লোক দাঁড়িয়েছিল। একজন একখানা বোট খুলে বললেন, কে যাবে আমার সঙ্গে। প্ৰাণ যদি দিতে হয়, কে তা দিতে আমাকে অনুসরণ করবে? আমনি একজন বললেন, আমি যাবো। সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক লোক বললে, আমরাও যাবো।
ঝড়ের ভিতর ডুবোজাহাজের যাত্রীদিগকে দেখে গ্রেস ডারলিঙ্গের পিতা দুঃখ করেছিলেন, ব্যথিত হয়েছিলেন সত্য, সেই দারুণ দুর্যোগে তাদের উদ্ধার করার জন্যে কিন্তু তিনি সাহস করেননি। মহামনা কন্যা গ্রেস যখন বললেন, বাবা, আমি আপনার সঙ্গে যাবো, আমরা হতভাগ্য যাত্রীদলকে বাঁচাতে পারবো, তখনি পিতা অগ্রসর হলেন। বিক্ষুব্ধ তরঙ্গে পিতাপুত্রী নৌকা ভাসালেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ সৈন্য দেখাদেখি প্ৰাণ দেয়, আগুনের সামনে দাঁড়ায়, সঙ্গীন তরবারিকে উপহাস করে।
জীবন্ত আদর্শের মূল্য বেশী। অশরীরীভাবে ভাল কাজ হয় না। বিলেতে গেলে বড় বড় উন্নত শক্তির জীবন্ত আদর্শে আমরা নিজদিগকে শক্তিমান করতে পারি, তাই সেখানে যাই। শক্তির স্পর্শে এসে নিজের শক্তি জেগে উঠে।
সেই কোরআন আছে। তবু মুসলমান জাতি উন্নত হল না কেন? অতীত হিন্দু-মুসলমান মানুষ হই না কেন? কত কথা শুনি আর পড়ি, কিন্তু কই, তাতে ভাল কাজ হয় কই?
চাই মানুষ, জীবন শক্তিময় আদর্শ। যার স্পর্শে প্ৰাণে জাগরণ আসে।