সৎ জ্ঞানী ও মহৎ যিনি তিনি নিজেকে ব্যক্তিত্বহীন করতে ভয়ঙ্কর লজ্জা বোধ করেন— তিনি তাতে পাপ বোধ করেন।
চাকরি করে অন্যায়ভাবে পয়সা রোজগার করে ধনী হবার লোভ রাখ? তোমার চেয়ে মুদি ভাল। মুন্দির পয়সা পবিত্র।
অনেক যুবক থাকতে পারে, যারা কোন রকম একটা চাকরি সংগ্রহ করে সমাজের ভিতরে আসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই হলো! চুরির সাহায্যেই হোক বা অসৎ উপায় অবলম্বন করেই হোক, ক্ষতি নাই।
চরিত্র তোমার নিষ্কলঙ্ক। সামান্য কাজ করে পয়সা উপায় করে তাতে জাত যাবে না। চোর-অন্যায়ের সাহায্যে যে বাঁচতে চেষ্টা করে, তারই জাত যায়। অসৎ উপায়ে পয়সা উপার্জন করো না, মিথ্যার আশ্রয় নিও না। লোককে বিপদে ফেলে অর্থ সংগ্ৰহ করতে তুমি ঘৃণা বোধ করে!
ইউরোপের জ্ঞানীগুরু প্লেটো মিশর ভ্ৰমণকালে মাথায় করে তেল বেচে রাস্তা খরচ জোগাড় করতেন। যে কুড়ে, আসলে, ঘুষখের ও চোর, সে-ই হীন। ব্যবসা বা ছোট স্বাধীন কাজে মানুষ হীন হয় না, হীন হয় মিথ্যা, চতুরতা ও প্ৰবঞ্চনায়। পাছে জাত যায়, সম্মান নষ্ট হয়-এই ভয়ে পরের গলগ্রহ হয়ে মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছে? সম্মান কোথায়, তা তুমি ঠিক পাওনি?
সৎ উপায়ে যে পয়সা উপার্জন করা যায়। তাতে তোমার আত্মার পতন হবে না। তোমার আত্মার পতন হবে। আলস্য ও অসাধুতায়। তোমারই স্পর্শে কাজ গৌরবময় হবে।
আমার দেশের লোক যেমন আজকাল বিলেতে যায়, এককালে তেমনি করে বিলেতের লোক গ্ৰীক ভ্ৰমণে যেতো।
বিলেত ফেরত লোককে কেউ ইট টেনে বা কুলির কাজ করে পয়সা করতে দেখেছে? বিলেতের পণ্ডিত দেশ ভ্ৰমণ দ্বারা অগাধ জ্ঞান অর্জন করেছিলগ্ৰীক-দেশ থেকে ফিরে এসে তিনি আরম্ভ করলেন এমন কাজ, যা তুমি আমি করতে লজা বোধ করবো। তাতে তাঁর জাত গিয়েছিল না। যার মধ্যে জ্ঞান ও গুণ আছে, সে কয়দিন নীচে পড়ে থাকে? লোক তাকে সম্মান করে উপরে টেনে তোলেই।
কাজে মানুষের জাত যায় না-এটা বিশ্বাস করতে হবে। কাজ হীন হয় ঐ সময় যখন কাজের ভিতর অসাধুতা প্রবেশ করে, আর কোন সময়ই নয়।
বিশ্ব-সভ্যতার এত দান তুমি ভোগ করছে—এসব কি করে হলো? হাতের সাহায্যে নয় কি? কাজ-কামকে খেলা মনে করলে চলবে না। মিন্ত্রীর হাতুড়ির আঘাত, কামারের কপালের ঘাম, কুলীর কোদালকে শ্রদ্ধার চোখে দেখো।
অনেকে বলে, তাদের জন্য কোন কাজ নাই। যে কাজই তারা করুক, যে দিকেই তারা হাঁটুক-কেবলই ব্যর্থতা। মুর্থ যারা তারাই একথা বলে। তাদের এ ব্যর্থতার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। এই নৈরাশ্যের হা-হুতাশ তাদেরই অমনোযোগ আর কুড়েমির ফল।
ডাক্তার জনসন মাত্র কয় আনা পয়সা দিয়ে লন্ডনের মত শহরে যেতে উপস্থিত হয়েছিলেন, অথচ তিনি কারো কাছে কোন কালে হাত পাতেননি। এক বন্ধু তাঁকে এক সময় একজোড়া জুতো দিয়েছিলেন, অপমান করে তিনি জুতো পথে ফেলে দিয়েছিলেন। উদ্যম, পরিশ্রম ও চেষ্টার সামনে সব বাধাই জল হয়ে যায়। গুণ যার মধ্যে আছে, যে ব্যক্তি পরিশ্রমী, তাঁর দুঃখ নাই। জনসনকে অনেক সময় রাত্ৰিতে না খেয়ে শুয়ে থাকতে হতো, তাতে তিনি কোনদিন কষ্ট, ব্যথিত বা হতাশ হন নাই। বাধাকে চূর্ণ করে বীরপুরুষের মত তিনি যে নীতি রেখে গিয়েছেন, তা অনেক পণ্ডিতই পারবেন না।
গুণ থাকলেও চেষ্টা না করলে জগতে প্ৰতিষ্ঠা লাভ করা যায় না। আরভিং সাহেব বলেছেন, চুপ করে বসে থাকলে কাজ হবে না।
চেষ্টা কর—নাড়াচাড়া কর— এমন কি কিছু নারী ভিতর কিছু ফলাতে পারবে। কুকুরের মতো চীৎকার কার-সিংহ হয়েও ঘুমিয়ে থাকলে কি লাভ?
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছ—তারপর মনে হচ্ছে তোমার মূল্য এক পয়সা নয়। জিজ্ঞাসা করি, কেন? জান না, এ জগতে যারা নিতান্ত আনাড়ী তারা মাসে হাজার হাজার টাকা উপায় করছে?
তোমার এই মর্মবেদনা ও দুঃখের কারণ, তুমি মুর্থ। মানুষ বালিতে সোনা ফলাতে পারে, এ তুমি বিশ্বাস করো না? তুমি কুড়ে— তোমার উদ্যম নেই— তুমি একটা আত্মপ্ৰত্যয়হীন অভাগা।
কাজ ছোট হোক বড় হোক, মন প্ৰাণ দিয়ে করবে। মূল্যহীন বন্ধুগণের লজ্জায় কাজকে ঘৃণা করো না। সকল দিকে, সকল রকমে তোমার কাজ যাতে সুন্দর হয় তার চেষ্টা করবে।
ফকস সাহেবকে এক সময়ে এক ভদ্রলোক বলেছিলেন, আপনার লেখা ভাল নয়। কাজের চারুতার প্রতি তাঁর এত নজর ছিল যে, তিনি সেই দিন হতে স্কুলের বালকের ন্যায় লেখাপড়া আরম্ভ করলেন এবং অল্পকালের মধ্যে তার লেখা চমৎকার হয়ে গেল।
উন্নতির কারণ হচ্ছে দৃষ্টি ও মনােযোগ। এক ভদ্রলোকের খানিক জমি ছিল। জমিতে লাভ তো হতোই না, বরং দিন দিন তার ক্ষতি হচ্ছিল। নিরুপায় হয়ে নামমাত্র টাকা নিয়ে তিনি এক ব্যক্তিকে জমিগুলি ইজারা দিলেন। কয়েক বছর শেষে ইজারাদার একদিন ভূ-স্বামীকে বললেন, যদি জমিগুলি বিক্রয় করেন। তাহলে আমাকেই দেবেন, আপনার কৃপায় এই কয় বছরে আমি অনেক টাকা জমা করতে সক্ষম হয়েছি। ভূ-স্বামী অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এত বছরের ভিতর যে জমিতে আমি একটা পয়সা উপায় করতে পারিনি, সেই জমি তুমি মাত্র কয়েক বছর চাষ করেই খরিদ করতে সাহস করছো? সে বললে, আপনার মতো অমনােযোগী ও বাবু আমি নই। পরিশ্রম ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। বেলা দশটা পর্যন্ত ঘুমানো আমার অভ্যাস নাই।
এক যুবক স্কট সাহেবের কাছে কিছু উপদেশ চেয়েছিল, যুবককে তিনি এই উপদেশটি দেন– কুড়েমি করো না, যা করবার তা এখনই আরম্ভ করো। বিশ্রাম যদি করতে হয় কাজ সেরে করবে।