শুধু নিজের অবস্থায় সস্তুষ্ট থাকলেও চলবে না, তোমাকে কিছু কিছু বঁটাচাতে হবে। খুব সামান্য হোক ক্ষতি নাই। বেঁচে থাকা যেমন দরকার, কিছু কিছু বঁটাচানও তেমনি দরকার। যা তুমি বঁচাবে তার অস্তিত্ব ভুলে যাও। তা কাউকে দিও না।
যখন সর্বস্বান্ত হয়েছ—দুৰ্গতির যখন সীমা নাই, তখন যদি নিজের নিবুদ্ধিতার জন্য নিজেকে ধিক্কার দাও, তাতে লাভ কি? স্ত্রী-পুত্র হয়ত এক সময়ে তোমার উপহারে সুখী হয়েছিল-আজ তোমার দুৰ্গতির দিনে তারা বলবে, না বুঝে আবদার করেছিলাম, তুমি জ্ঞানী পিতা হয়ে কেন তা শুনলে? বস্তুত দুঃখের দিনে তারা তোমার গত উপকার ও দানের কথা ভেবে চুপ করে থাকবে না, এক সময়ে সুখের জীবন ছিল বলে আজ তারা খালি পেটে থাকতে পারে না!
অভাবে মানুষ পশু হয়, স্ত্রী-পুরুষ আত্মীয়-বন্ধু সকলের সঙ্গে অজ্ঞাতসারে মর্মান্তিক অসদ্ব্যবহার করতে হয়, অথচ সে হীনতা নিজে কিছু বোঝা যায় না।
তোমার কৃপণতায় (?) একটা মানুষ অসন্তুষ্ট হতে পারে, কিন্তু সে যখন ক্ষুধাতুর হয় তখন যদি তুমি তাকে ভাত না দাও সে তোমাকে হত্যা করবে।
বেশী ভাবতেন! হেলায় যে পয়সা রাস্তাঘাটে ফেলে দিচ্ছ, সেগুলি জমিয়ে রাখলে হয়ত একটি বড় কারবারের ভিত্তি স্থাপন করতে পারতে।
পর তোমাকে চিনল না বলে, তুমি মরে যেতে পার না। জগতে অতি অল্প লোকই একজনে আর একজনের কষ্ট বোঝে। অতএব সাবধান।
পিতার সাধনার সম্পদ অনেক কুড়ে সন্তান ভোগ করে, আবার অনেকে উড়িয়ে দেয়-নিজের স্বভাব দোষে।।
পরের পরিশ্রমলব্ধ অর্থ যদি বিনা পরিশ্রমে লাভ হয়, তাহলে জাতীয় জীবন দুর্বল হয়ে পড়ে। মানুষ পরিশ্রম করে না-হিসেবী হয় না।
একথাও ঠিক হৃদয়হীন ধনী অত্যাচারীর উপর অনশনক্লিষ্ট অত্যাচারী দীন-দরিদ্র বিরক্ত না হয়েও পারে না।
অবস্থা শোচনীয় এ কথা কাউকে বলো না। তাতে কোন লাভ হবে না, কেউ তোমাকে দয়া করবে না। কাজ করো। আশীর্বাদ আর অনুগ্রহ যদি আসে। তবে তা খোদার কাছ থেকে আসবে। আমার এ কথা বিশ্বাস করে।
যদি খরচপত্র সম্বন্ধে সতর্ক থাক, যে আয়ই হোক তোমার সংসার একরকম চলবেই—তোমার দরিদ্র প্রতিবেশীকে সম্ভবমত সাহায্য করবার সৌভাগ্য তোমার হবেই।
এক ব্যক্তিকে জানি-বাড়ি থেকে চিঠি এসেছিল, ভাই তিনটির শীতের কাপড় নেই—লোকটি সে কথায় আদৌ কান না দিয়ে নিজের জন্য ১০ টাকার এক জামা কিনে ফেললো।
বস্তুত এই সমস্ত অপদাৰ্থ মানুষ জগতে কাউকে সুখ দিতে আসে না। তারা কেবল মানুষের দুঃখ সৃষ্টি করে। যারা তাদের স্পর্শে আসে তাদের কষ্টের সীমা থাকে না।
মানুষ যদি হিসেবী হতো তা হলে জগতের পনের আনা দুঃখ কমে যেতো। জগতে এত দরিদ্র লোক থাকত না-মানুষের এত হাহাকার শোনা যেতো না।
মানুষটি জ্ঞানী এবং সত্যবাদী কি-না একথা জানিবার আগে তিনি মিতব্যয়ী কি-না এ— কথা জানতে চেষ্টা করো।
মেয়ে বিয়ে দেবার সময় জামাইয়ের রূপ, গুণ ও শিক্ষার খবর নেবার সঙ্গে সঙ্গে শুনে রেখো, জামাই টাকা-পয়সা হিসেবমত খরচ করেন কি-না, কারণ, সেটা একটা মস্ত গুণ। তার ঋণ করবার কু-স্বভাব আছে কি-না!
শিক্ষা না থাক, রূপ না থাক, গুণ না থাক, মিতব্যয়ী জামাতার হাতে তোমার মেয়ের খাবার পরিবার কোন কষ্ট হবে না।
কেউ কেউ বলে থাকে, ভদ্রলোক যারা তাদের অবস্থা খারাপ না হয়ে যায় না। একথা তুমি বিশ্বাস করো না। ভদ্রলোক অন্যায় করে বা অসৎ উপায়ে পয়সা উপার্জন করতে ঘৃণা বোধ করেন। সত্য, কিন্তু তাই বলে তাকে টানাটানির ভিতর পড়ে থাকা ঠিক নয়। যেমন করে হোক, তিনি তার শোচনীয়তার মধ্যেই সচ্ছলতা টেনে আনবেন। তিনি পর-প্রত্যাশী। হবেন না। পরের দুয়ারে তিনি হাত পাতবেন না। তিন আলসে এবং কুড়ে হয়ে বসে। থাকবেন না-সৎ উপায়ে পয়সা অর্জন করে অর্জিত অর্থ হিসেবী হয়ে খরচ করবেন।
মানুষকে হিসেবী হতে হবে-এর অর্থ এ নয় যে, তুমি অতি মাত্রায় হিসেবী হবে—যাতে তোমার পরিবারবর্গের খুব কষ্ট হয়, তোমার সুবুদ্ধি ও বিবেচনা তোমার ব্যয়কে নিয়মিত করবে।
কখনও ঋণ করো না। এই একটা কথা যদি তুমি পালন করতে পার তাহলে তোমার ব্যয়কে নিয়ন্ত্রিত করবে।
খালি থলে যেমন খাড়া হয়ে দাড়ায় না; কাণ করলে তেমন তোমার সোজা। হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা থাকবে না।
ঋণ করতে থাকে, দেখবে তুমি ভারি মিথ্যাবাদী হয়েছে-তোমার মনুষ্যত্ব লোপ পেয়েছে—তুমি পশু হয়েছে।
এক ভদ্রলোক এক যুবককে এই উপদেশ দিয়েছিলেন-ঋণ করে কোন সখী মিটাতে চেষ্টা করো না-পয়সা নাই লজার খাতিরে অন্য ছেলেদের দেখাদেখি বাকী করে গায়ের জামা কিনো না। অসঙ্কোচে বলো, আমার দরকার নেই, যা আছে তাই ভাল।
যে মানুষ তোমার কাছে খুব ছোট, তার কাছ থেকে যদি তুমি টাকা ধার করে থােক, তাহলে তার সামনে তোমার একটু সঙ্কোচ হবেই। মনের এই সঙ্কোচবোধ স্বাধীনচিত্ত ভদ্রলোকের কাছে অসহ্য।
কিছুতেই ধার করবে না। ডাক্তার জনসন বলেছেন—ধার করার অর্থ, জীবনকে দুঃখময় করে তোলা। দরিদ্র যে, সে নিজের দারিদ্র্যেই বিব্রত, পরের উপকার কি করবেঃ অন্যান্য সদগুণ লাভের সঙ্গে সঙ্গে ধার করার অভ্যাসকে পরিহার করবার গুণটি লাভ করতে বদ্ধপরিকর হও।
সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার অভ্যাসটি খুব ভাল। এক পয়সার হিসােব লিখতে লজ্জা বোধ করো না। চোখের সামনে নিজের আর্থিক মূল্যাটুকু ধরে রাখলে খরচ করার আগে সতর্ক হতে পারবে।