রিনি নেই মাসিমা?
কোথায় যেন বেড়াতে গেল তার দাদার সঙ্গে। নানু-টানু সবাই গেছে। তোমাদের ইস্কুলে কী ফাংশন হচ্ছে না আজ? ম্যাজিক না কী হচ্ছে যে বলল। তুমি যাওনি যে? যাওনি কেন?
রিনিকে নিয়ে একসঙ্গে মাঠঘাট চষে বেড়ানোর যে ম্যাজিক আমি রোজ দেখি তার কাছে কোনো ভেকিই কিছু নয়। কিন্তু সে কথা কি বলা যায়!
এমনি যাইনি। ওকে নিয়ে যাব ভাবছিলাম। নানুদের সঙ্গে চলে গেল? আমার গলায় দুঃখের সুর বেজে উঠল বুঝি।
ও বোধ হয় ভেবেছে ওখানেই তোমার সঙ্গে দেখা হবে।…
আমি তাহলে যাই মাসিমা।
যাবে কেন? বোসো না। উনিও বাড়ি নেই, কোথায় রুগী দেখতে বেরিয়েছেন গাঁয়ে। বোসো ঐখেনে। নাইতে নাইতে গল্প করা যাবে তোমার সঙ্গে।
শিশি থেকে নিজের মাথায় তেলের মতন কী একটা জিনিস তিনি ঢাললেন ভিজে চুলের ওপর–এখানে বসে বসেই একটা ম্যাজিক দ্যাখো। কেমন? এই দ্যাখো না–এই তেলটা মাথায় দিলাম তো। দেখছো তো তেল? দেখতে না দেখতে এক্ষুনি সাবান বানিয়ে দিচ্ছি এটাকে–মন্ত্রের চোটে–চেয়ে দ্যাখো তুমি?
ওমা! সত্যিই তো! মাথায় একটুখানি ঘষতে না ঘষতেই সেটা সাবানের ফেনায় ফেনায় বদলে গেল–অবাক কাণ্ড! বিস্ময়ে থই পাই না।
একে বলে শাম্পু। শুনেছ এর নাম? না তো!
মাথায় সাবান দিলে–তার ভেতরে ক্ষার আছে তো? তার জন্যে চুল উঠে যায়। শাম্পু দিতে হয়। তুমি মাখবে?
না। ঘাড় নাড়ি আমি।–কি হবে মেখে?
মাথা হালকা হবে। চুল পরিষ্কার থাকবে। খুসকি-টুসকি হবে না মাথায়।
আমার নেই ওসব।
হতে কতক্ষণ! যা ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া একমাথা চুল তোমার! ছাঁটো না কেন? ছাঁটবে।
আচ্ছা। ঘাড় নাড়লাম আবার।
মাথার শাপুর পর তিনি মুখে সাবান মাখলেন, তারপরে বললেন আমায়-পিঠের দিকটায় মাখিয়ে দাও তো আমার।
সাবানটা নিয়ে আমি তাঁর পিঠে মাখাতে লাগলাম।
ভালো করে মাখাও।
আমি জোরে জোরে ঘষতে লাগলাম।
এবার এদিকটায়।
আমি ইতস্তত করছি দেখে তিনি বুকের দিকে তোয়ালেটা সরিয়ে দিলেন এবার।
তবু আমি হাত বাড়াই না দেখে তিনি একটু হেসে বললেন–তোমার মনে পাপ ঢুকেছে দেখছি।
পাপের কথায় রাগ হয়ে গেল আমার। আমি চোখ কান বুজে জোরে জোরে সাবান ঘষতে লাগলাম।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন তারপর। পায়ে মাখাও এবার।
মাখাতে লাগলাম। কী সুন্দর সুগঠিত পা! অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার মতই। বাবা বলতেন, দেবীর স্তরে পা থেকে বন্দনা শুরু করতে হয়। সরস্বতীর বেলায় কে যেন তা করেনি, তাই তাঁর কোপে সে নাকি গাধা বনে গেছল। আমি তার মর্মটা তখন বুঝতে পারি।
এ কী! থামছ কেন? ওপর পর্যন্ত মাখাও। থেমে যাচ্ছ যে?
আমি তখন ওঁর কোমর অব্দি সাবান মাখাতে লাগি। হাঁটুর ওপরে আরো কী সুষমার রহস্য রয়েছে দেখার কৌতূহল যে না জেগেছিল তা নয়। তবুও কেমন একটা বাধ বাধ, ঠেকছিল বইকি।
আরো ওপরে। আরো।
আরো উপরে মাখাতে গিয়ে তাঁর পরনের তোয়ালে খসে পড়ে। তিনি মোটেই সামলাতে বান না।
আমি ঘাড় হেঁট করে থাকি।
থামলে কেন? মাখাবে তো।
ঘাড় গুঁজে ঘষতে থাকি সাবান।
সব জায়গায় লাগছে না যে। বাদ দিয়ে যাচ্ছ তুমি।
তারপর আমি আর কোন বাদবিসংবাদ রাখি না। ঘাড় হেঁট করে চালিয়ে যাই।
মাথা নীচু করে কেন? কোথায় মাখাচ্ছ দেখছ না? তাকাও ওপরে।
নিজেই তিনি দু হাত দিয়ে মাথাটা আমার তুলে ধরেন। প্রাণপণে আমি সাবান মাখাই। সামনে পিছনে সব জায়গাতেই।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন তারপর পা থেকে গলা অবধি বেশ করে রগড়ে দাও তো দেখি। ময়লা কেটে যাক।
রগড়াই বেশ করে। তলার থেকে গলা পর্যন্ত। দেবীর বন্দনায় কোনো অংশই বাদ যায় না।
ক্রমশই ভালো লাগতে থাকে।
এবার কুয়োর থেকে বালতি বালতি জল তুলে ঢালতে পারবে? কুয়োর ভেতরে পড়ে যাবে না তো তুলতে গিয়ে।
পড়ব কেন? এসব কাজ আমি খুব পারি। হাতে হাতে প্রমাণ দিয়ে দি।
কয়েক বালতি ঢালার পর তিনি শুকনো তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে বলেন-এসো এবার সাবান মাখিয়ে তোমার গা ধুইয়ে দি বেশ ভাল করে। কেমন? জামা কাপড় খুলে রাখো ঐখানটায়।
না।
না কেন? গা ধোও না বিকেলে?
না।
বিকেলেই তো নাইবার আরাম গো। নাও, জামা-টামা খোলো। খুলে রাখো ঐখেনে। একী, লজ্জা করছে নাকি খালি গা হতে?
না।
আমি এত বড় মেয়ে খালি গা হয়ে নাইতে পারলাম আর তুমি এইটুকু ছেলে-তোমার লজ্জা! এসো, লজ্জা কিসের? বেশ ভালো লাগবে তোমার।
না।
তখন তিনি গাটা মুছে শুকনো কাপড় পরতে লেগেছেন।
আমি এবার যাই মাসিমা।…দেখি গে, কী হচ্ছে ইস্কুলে।
আচ্ছা এসো। তারপর কী ভেবে বললেন ফেরকাল বিকেলে এসো আবার। কেমন?
তারপর রিনিদের বাড়ি যাইনি আমি। কোনো বিকেলেই যাইনি আর। ওর মার নাইবার সময় কখনই না।
বাধ-বাধ ঠেকত বলে যে, তা না। তাঁর দেহসুষমায় অভিভূত হলেও আমি তেমন কোনো আকর্ষণ বোধ করতাম না। কেমন যেন লাগত আমার।
সেই বয়সেই নগ্ন নারীদেহের মাধুরী দেখেছিলাম অনেক। আমাদের বাড়িতে বিনতি আর্টিস্টের আঁকা রঙীন ছবির অ্যালবাম ছিল বাবার–আমি দেখতাম। লুকিয়ে নয়, খোলাখুলিই। কোনো বাধা ছিল না। মা বাবা কিছু বলতেন না সেজন্যে। ভালোই লাগত দেখতে।
আমাদের বাড়ি ভারতী, সাহিত্য, প্রবাসী, ভারতবর্ষ আর মাসিক বসুমতি আসত। তার কোন কোনটায় বাঙালী মেয়ের নগ্ন দেহ দেখা যেত মাঝে মাঝে। শিল্পী টমাস, হেমেন মজুমদার আর ভবানী লাহার আঁকা সিক্তবসনা রূপসীদের দিকে আমি অপলক চোখে তাকিয়ে থেকেছি।