নিজের লেভেলে চলে যান। দিনের যে সময়ে প্রথম সিগারেট ধরান সেই সময় এবং পরিবেশটা মনের পর্দায় দেখুন। নিজেকে পরিষ্কার ভাবে দেখতে পেতে হবে, আপনার শরীরের সমস্ত পেশী ঢিল হয়ে আছে, কোনো উত্তেজনায় ভুগছেন না। এই মুহূর্তটি থেকে পরবর্তী একটি ঘন্টা দেখতে হবে নিজেকে আপনার, এই সময় সাধারণত যা যা করে থাকেন আপনি সব করবেন, শুধু সিগারেট খাওয়া ছাড়া। সময়টা যদি সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটা হয়, নিজেকে বলুন, এখন থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত আমি একজন প্রাক্তন-ধূমপায়ী হিসেবে থাকবো। প্রাক্তন- ধূমপায়ী হিসেবে এই একটা ঘন্টা উপভোগ করবো আমি। প্রাক্তন-ধূমপায়ী হিসেবে এই সময়টা কাটানো একেবারে সহজ, এতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এই অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে আপনাকে যতদিন না বিটা লেভেলে ওই সময়টায় ধূমপান না করেও সম্পূর্ণ শান্ত এবং অনুত্তেজিত থাকতে পারেন। এই একই নিয়ম ধরে দ্বিতীয় ঘন্টার জন্যে সাজেশন দেবেন নিজেকে, তারপর তৃতীয় ঘন্টার জন্যে, এভাবে সময় বাড়াবেন। ধীরে-সুস্থে এগোনোই ভালো, তাড়াহুড়ো করলে আপনার শরীরের ওপর অত্যাচার করা হয়ে যাবে, যা তার প্রাপ্য নয়। কারণ, আপনার শরীর নয়, অভ্যেসটা আমদানী করেছিল আপনার মন। তাড়াবার কাজটা তাকেই করতে দিন। কল্পনার সাহায্য নিয়ে আপনার মনই পারবে অভ্যেসটাকে বিদায় করতে।
ধূমপানের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে দু’একটা পরামর্শ।
১। ঘন ঘন ব্র্যাণ্ড বদল করুন।
২। দিনের যে সময়টায় আপনি প্রাক্তন-ধূমপায়ী নন, সিগারেট ধরাতে যাবার। আগে প্রতিবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘সত্যিই কি এটা এখন আমার দরকার আছে?’ বেশিরভাগ সময় উত্তর হবে, না। যতোক্ষণ না সত্যি ওটা দরকার হচ্ছে ততোক্ষণ। অপেক্ষা করুন।
৩। অভিশাপ মুক্ত সময়ে কখনো যদি ধূমপান করার প্রচণ্ড ইচ্ছা জাগে, যদি মনে। হয় এখন আপনার সিগারেট খাওয়া দরকার, বুক ভরে বাতাস নিন, তিন আঙুল এক করুন, এবং ধ্যানমগ্ন অবস্থায় যে শব্দ ব্যবহার করেছিলেন সেই একই শব্দ ব্যবহার। করে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন, ‘যাই ঘটুক না কেন, এই একঘন্টা আমি অধূমপায়ী থাকতে চাই, থাকতে পারবো।’
.
ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করার আরো টেকনিক আছে, মূল পদ্ধতিটির সাথে সেগুলোও আপনি। ব্যবহার করতে পারেন। আট বছর ধরে দিনে দেড় প্যাকেট সিগারেট খেতো এক লোক, আলফা লেভেলে পৌঁছে মনের পর্দায় দেখলো, এতোদিন ধরে যতো সিগারেট খেয়েছে সব এক জায়গায় জড়ো করায় বিরাট এক তূপ তৈরি হয়েছে, সেই স্কুপে আগুন। ধরিয়ে দিলো সে।
এরপর সে মনের পর্দায় দেখলো, সিগারেট যদি না ছাড়ে তাহলে ভবিষ্যতে যতো সিগারেট খাবে সেগুলো এক জায়গায় জড়ো করায় আরো একটা বিরাট স্তূপ তৈরি হয়েছে, তাতেও আগুন ধরালো সে। এর আগেও এই লোক বেশ কয়েক বার সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিল, কিন্তু এবার মাত্র একবার ধ্যানমগ্ন হয়ে সেই যে সিগারেট ছাড়লো, আর ধরেনি। ছেড়ে দেয়ার পর কোনো অসুবিধে হয়নি তার, কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ারও শিকার হয়নি।
নিয়মিত অনুশীলনের জন্যে এখানে কয়েকটা ফর্মুলা দেয়া হলো।
অভ্যাস নিয়ন্ত্ৰণঃ ভোজন (১)
আপনার বাড়তি ওজনের পরিমাণ যদি খুব বেশি হয়, এবং এই ওজন যদি কমাতে চান, তিন–এক পদ্ধতির সাহায্যে নিজের লেভেলে চলে যান, তারপর আপনার ওজন সমস্যাটা বিশ্লেষণ করুন। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় চিন্তা করে বের করুন কোন ধরনের খাবার আপনার এই ওজন-সমস্যার জন্যে দায়ী। যে খাবারগুলো দায়ী বলে মনে হবে, প্রত্যেকটিকে মনের পর্দায় দেখুন, এক এক করে প্রত্যেকটির গায়ে বড় লাল অক্ষরে লিখুন–না।
অভ্যাস নিয়ন্ত্ৰণঃ ভোজন (২)
আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান, যেসব খাবার খেলে ওজন বাড়ে সেগুলো বেশি করে খেতে অভ্যস্ত হোন। খাবারগুলো চিবিয়ে, ধীরে ধীরে খাবেন। যে-সব খাবার সামনে নিয়ে বসবেন সেগুলোর দিকে গভীর মনোযোগ থাকা চাই, যাতে স্বাদ এবং গন্ধ পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে।
অভ্যাস নিয়ন্ত্ৰণঃ ধূমপান।
দিনের প্রথম সিগারেট যখন ধরান তখন সিগারেট না ধরিয়ে ধ্যানমগ্ন হোন, নিজেকে বলুন, প্রথম সিগারেটটা একঘন্টা পর ধরাবো। এইভাবে সময়টা একঘন্টা একঘন্টা করে বাড়াতে থাকুন, যতদিন না দিনে মাত্র দু’একটা সিগারেট খাওয়ার সময় পান হাতে। এভাবে যদি কমিয়ে আনতে পারেন, একেবারে ছেড়ে দেয়া তখন আর কোনো সমস্যা হবে না।
আপনি যাদের ভালোবাসেন তাদের মুখ চেয়ে সিগারেট ছেড়ে দেয়া উচিত।
০৯. ডাক্তারি
জ্বী, তাঁর নাম ডা. মন। সবচেয়ে বড় ডিগ্রী নিয়ে আপনার শরীরের ভেতরেই চেম্বার খুলে বসে আছেন। হাউজ-ফিজিশিয়ান বা গৃহচিকিৎসক বলতে যা বোঝায়, উনি ঠিক তাই। বারবার তাঁকে কল দিতে হয় না, উনি নিজে থেকেই নিয়মিত আপনার শরীরের খবরাখবর নেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে থাকেন। জননী এবং সন্তানের সাথে যে সম্পর্ক, আপনার সাথে ওই ডাক্তার সাহেবেরও অনেকটা সেই রকমই সম্পর্ক। মা যেমন নিজে থেকেই সন্তানের যত্ন-আত্তি করে, কিন্তু সন্তান না চাইলে তাকে দুধ দেয় না, সেই রকম আপনার এই হাউজ-ফিজিশিয়ানও আপনার শরীরের যত্ন আত্তি করেন, কিন্তু আপনি না চাইলে আপনার রোগমুক্তি ত্বরান্বিত করেন না, বা আপনি না চাইলে কিছু কিছু রোগ সারাবার জন্যে তেমন গা করেন না। শুধু প্রাচীন কালে দেখা গেছে তাই নয়, বর্তমান কালেও এমন অনেক সাধক বা ধ্যানী পুরুষ এমনকি সাধারণ সংসারী আছেন যাঁরা অসুখ-বিসুখ করলে ডাক্তারের কাছে দৌড়ান না, নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করেন, এবং সে চিকিৎসায় কোনো রকম ওষুধের ব্যবহার হয় না। এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনেকেই গুঢ় রহস্যময় আধ্যাত্মিক শক্তির প্রয়োগ বলে বর্ণনা করেন, এবং ব্যবহার করতে ভয় পান। তাঁরা সম্ভবত ভাবেন, অজানা শক্তিকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে না জানি কি হয়! কিন্তু মনকে আমরা দৈনন্দিন কাজে কম-বেশি ব্যবহার তো করছিই, কই, কি ক্ষতি হচ্ছে আমাদের? অসুখ-বিসুখ সারাবার জন্যে ডাক্তার যে ওষুধপত্র দিচ্ছেন সেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াই বরং আমাদের শরীরের জন্যে। বিপদ ডেকে নিয়ে আসছে।