বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

আত্মকথা – আবুল মনসুর আহমদ

Attokotha by Abul Mansur Ahmad

.

৩. সাধু থাকা কঠিন না

এমন দৃষ্টান্ত নিশ্চয়ই আমার জীবন প্রভাবিত করিয়াছিল। টাকা পয়সার প্রতি আমার খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। তার মানে প্রয়োজন-মাফিক টাকা পাইলেই আমার হইয়া যাইত। উঠন্ত বয়সের অবিবাহিত স্বাধীন কলিকাতা প্রবাসী যুবকদের অনেকের যেসব দোষ ছিল, আমার সে সব দোষের একটাও ছিল না; এই কারণেই কলিকাতায় পঞ্চাশ-ষাট টাকার সাংবাদিকতা করিয়াও সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করিতে পারিয়াছিলাম। পাঁচ-ছয় টাকা মেসের খোরাকি, এক টাকা সিট-রেন্ট দিয়া থাকিতে পারিলে কতই বা টাকার দরকার? পোশাক-পরিচ্ছদ? এক টাকা আঠার আনার একটা খদ্দরের ধুতি কিনিয়া একটা তহবন্দ ও একটা পাঞ্জাবি বানাইতাম। কাটি-কুটিতে একটা গান্ধী টুপি হইয়া যাইত। সিলাই লাগিত পাঞ্জাবিতে ছয় আনা, তহবন্দ ও টুপিতে এক কানা করিয়া দুই আনা। এমনি করিয়া দুই খানা ধুতিতে সোওয়া দুই টাকা ও সিলাইয়ে এক টাকা খরচ করিলে বছরের পোশাক হইয়া যাইত। ধুপা-লনড্রি খরচ ছিল না। পাঁচ আনায় দু’সের এক নম্বর নূতন ঢাকাইয়া সাবান কিনিতাম। সপ্তাহে দুইবার নিজ হাতে কাপড় ধুইতাম। তাতেই পনের দিন যাইত। শীতবস্ত্র হিসাবে বউ-বাজার চোরা বাজার হইতে তিন-চার টাকায় একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গরম কোট কিনিয়া আমি পাঁচ বছর চালাইতাম। উড়নার জন্য খদ্দরের একটা মোটা শাল’ কিনিতাম আড়াই-তিন টাকায়। সেটাও চার-পাঁচ বছর নিতাম। যাতায়াত খরচা বেশি ছিল না। পারতপক্ষে ট্রামে উঠিতাম না, হাঁটিয়াই আফিস করিতাম। উঠিতে হইলেও সেকেন্ড ক্লাসে উঠিতাম। ভাড়া ছিল তিন পয়সা। ‘অপব্যয়ের মধ্যে ছিল দুইটা। একটা সিনেমা দেখা। রোজ সিনেমা দেখিতাম। মাঝে-মাঝে দিনে দুইবারও দেখিতাম। কোনও কোনও দিন তিনবারও দেখিতাম। কিন্তু টিকিট কিনিতাম সর্বনিম্ন ক্লাসের। চৌরঙ্গী অঞ্চল হইলে চার আনা। উত্তর কলিকাতা হইলে তিন আনা। এতেই মাসে পনের টাকা যাইত। আরেকটা বাতিক ছিল পুরাতন বই কিনা। কলেজ স্কোয়ারের বড়-ছোট পুরাতন পুস্তকের দোকান, তথাকার ফুটপাথ ও ধর্মতলা-ফ্রিস্কুল স্ট্রিটের ফুটপাথের দোকানের সবগুলিতে আমি ছিলাম একটা পরিচিত উৎপাত। দু-চার ঘণ্টায় দোকানের সব-পুস্তক ঘাঁটিয়া কিনিতাম দু’চার আনার একখানা বই। কিন্তু কিনিতাম। সেজন্য কোনও দোকানদারই আমার সাথে অভদ্রতা করিত না। ইচ্ছামত বই ঘাঁটিতে দিত। কারণ তারা জানিত, শেষে একখানা আমি কিনিবই। ফলে পয়সা যাইত আমার সারাদিনে হয়ত ছয় আনা-আট আনা। কিন্তু সময় যাইত আমার চার-পাঁচ ঘণ্টা। বন্ধুরা বলিত আমি সময়ের অপচয় করিতেছি। কিন্তু আমি জানিতাম তাদের ধারণা ভুল। কারণ এই সব পুরাতন পুস্তকের দোকান ছিল আমার ফ্রি রিডিং রুম।

আমি ইচ্ছা করিয়া সঞ্চয় কখনও করি নাই। কিন্তু সঞ্চয় আমার অমনি হইয়া গিয়াছে। অত অল্প আয়ের সব টাকা আমি খরচ করিয়া সারিতে পারিতাম না। কারণ সব জিনিসই আমার কাছে অসাধারণ টিকসই হইত। কাপড়-চোপড় ছিড়িতেই চাইত না। ১৯১৩ সালে সতের টাকায় একটা সাইমা লন্ডন হাতঘড়ি ও আড়াই টাকায় একটা ব্ল্যাকবার্ড ফাউন্টেন পেন কিনিয়াছিলাম। ১৯২৭ সালেও দুইটাই চালু ছিল। এই সালে জানালার ফাঁক দিয়া চোর আমার কোটটা চুরি করে। সেই কোটের পকেটে আমার হাতঘড়ি ও ফাউন্টেন পেন ছিল। চুরি না হইলে ওরা কতদিন চলিত আমিও বলিতে পারি না। ১৯১১ সালে আমি একটি ছাতা কিনিয়াছিলাম। ১৯২৬ সালে সেটা কোনও এক দোকানে ফেলিয়া আসি। আর পাই নাই।

.

৪. নবাব সাহেবের উপদেশ

বুদ্ধি ও বিশ্বাসের সংঘাত সম্পর্কে অতি মূল্যবান কথা বলিয়াছিলেন নবাব মোশাররফ হোসেন সাহেব। তিনি তখন মন্ত্রী। তাঁর এক কাজের সমালোচনা করিতে গিয়া দি মুসলমানএর সম্পাদকীয়তে নবাব সাহেবের কাজকে নির্বুদ্ধিতা (ফুলিশনেস) বলিয়াছিলাম। এতে নবাব সাহেব রাগিয়া আমাদের অফিসে আসিয়া আমার কৈফিয়ত তলব করিলেন। বলিলেন : তুমিও বি এল, আমিও বি-এল। তুমি মাসে পঁচাশি টাকা রোযগার কর। আমার বার্ষিক ইনকাম চার লাখ। তুমি আমাকে “ফুল” বলিয়া গাল দাও কোন মুখে?’ নবাব সাহেব আমাকে খুব স্নেহ করিতেন। সুতরাং শক্ত কথা বলার অধিকার তাঁর ছিল। আমিও তাকে শক্ত বলিতে পারিতাম। বলিলাম : চার লাখ টাকা আয়ের শ্বশুরের মেয়ে বিয়া করিলে আমারও ঐ ইনকাম হইত। শ্বশুরের খুঁটা দেওয়ায় নবাব সাহেব চটিলেন না। বরঞ্চ হাসিয়া বলিলেন : তেমন শ্বশুরের মেয়ে বিয়া বুদ্ধিমানরাই করিতে পারে, নির্বোধরা পারে না। তর্কে-তর্কে নবাব সাব বলিলেন : যে নিজেকে সবার চেয়ে বুদ্ধিমান মনে করে, তার মত নির্বোধ আর নাই। তোমাকে লোকে অত ঘন-ঘন ঠকায় কেন? যেহেতু তুমি নিজেকে মস্তবড় বুদ্ধিমান মনে কর। তোমাকে কেউ ঠকাইতে পারিবে না এই বিশ্বাসেই তুমি সবাইকে বিশ্বাস কর। ঐ বিশ্বাসের সুযোগ নিয়াই সবাই তোমাকে ঠকায়। আমি স্পষ্টই দেখিতেছি, তুমি জীবন-ভর ঠকিবে। জীবনে কোনও দিন সফল হইতে পারিবে না। যদি জীবনে সফল হইতে চাও, তবে আমার কথা শোেন। জীবন রং-এন্ডে’ নয়, ‘রাইট-এন্ডে’ শুরু কর। অর্থাৎ সকলকে বিশ্বাস করিয়া নয়, অবিশ্বাস করিয়া শুরু কর। যারা কাজে-কর্মে তোমার বিশ্বাস অর্জন করিবে তাদেরই শুধু বিশ্বাস কর। অন্য সবাইকে অবিশ্বাস কর। দেখিবে কেউ তোমাকে ঠকাইবে না। অবশেষে সবাই তোমার বিশ্বাসী হইবে। আর তা না করিয়া তুমি যদি ঐ ‘রং-এন্ডে’ আরম্ভ করিতেই থাক, তবে সবাই তোমাকে ঠকাইবে। অবশেষে তোমার কারো উপর বিশ্বাস থাকিবে না। চারদিকে কেবল অবিশ্বাসী-বিশ্বাসঘাতক দেখিবে। শেষ জীবন তোমার বড় দুঃখে কাটিবে। আমি তোমাকে বদ-দোওয়া করিতেছি না। শুধু হুঁশিয়ার করিয়া দিতেছি মাত্র।

Page 164 of 173
Prev1...163164165...173Next
Previous Post

শুভবুদ্ধি – আবুল ফজল

Next Post

এবার ভিন্ন কিছু হোক – আরিফ আজাদ

Next Post

এবার ভিন্ন কিছু হোক - আরিফ আজাদ

জীবন যেখানে যেমন - আরিফ আজাদ

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In