- বইয়ের নামঃ এবার ভিন্ন কিছু হোক
- লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ
- বিভাগসমূহঃ আত্মোন্নয়নমূলক
এবার ভিন্ন কিছু হোক
কোনো উৎসর্গপত্র নয়, তবু এই পৃষ্ঠায় দুটো কথা লিখতে ইচ্ছে হলো। ল্যাপটপে কিংবা ফোনে দেদারসে বাংলা লিখি, কিন্তু এই বাংলা লেখাটাকে যিনি আমার জন্য জলবৎ তরলং করে দিয়েছেন তার নিপুণ সৃষ্টিশৈলীর মাধ্যমে, অভ্রের প্রতিষ্ঠাতা সেই মেহেদি হাসান ভাইকে কখনো কৃতজ্ঞতা জানানো হয়নি। এখানে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং এক-আকাশ ভালোবাসা জানিয়ে রাখলাম।
.
প্রকাশকের অনুভূতি
মানুষ গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্পের ধারাভাষ্য যেহেতু জীবনের অলিগলি থেকে উঠে আসে এবং যাপিত জীবনের মানুষগুলোই গল্পের মূল উপকরণ, সুতরাং গল্পকে ঘিরে মানুষের রয়েছে দুর্নিবার কৌতূহল।
তবে সব গল্পই যে মানুষের কথা বলে তা কিন্তু নয়। সব গল্প সত্য এবং সুন্দরের কথাও বলে না। কিছু গল্প মানুষকে বিপথে নিয়ে যায়। আবার কিছু গল্প পড়ে মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়। কোনো কোনো গল্প মানুষকে বিচ্যুত করে দেয় তার স্বাভাবিক জীবনপ্রক্রিয়া থেকে। দুনিয়ায় যেমন আলোর একাধিপত্য কিংবা অন্ধকারের একক স্থায়িত্ব বিরাজ করে না, ঠিক তেমনই সব গল্প থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয় না, কোনো কোনো গল্প অন্ধকারের পথও চিনিয়ে দেয়। তবে আমরা আঁধারের যাত্রী নই। যেখানেই অন্ধকারের ঘনঘটা, আলো হাতে সেখানেই আমাদের সরব উপস্থিতি।
স্বনামধন্য লেখক আরিফ আজাদ একজন আলোর ফেরিওয়ালা। বিশ্বাসের দর্শন দিয়ে লেখালেখির জগতে পা রাখা এই লেখক এবার হাজির হয়েছেন জীবনের কিছু গল্প নিয়ে। জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গল্পগুলোকে লেখক তুলে এনেছেন তার শৈল্পিক রং-তুলিতে। আলো থেকে ফুরিত হওয়া সেই অসাধারণ গল্পগুলো যেমন জীবনের কথা বলে, তেমনই জীবনে রেখে যায় বিশ্বাসী মূল্যবোধের গভীর এক ছাপ।
জীবন যেখানে যেমন নিরেট গল্পের একটি বই। তবে কেবল গল্পের বই বলে একে মূল্যায়নের সুযোগ নেই। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে লেখক তার পাঠকদের জন্য রেখে গিয়েছেন চিন্তার কিছু খোরাক। পাঠকের ভাবুক মন যদি সেগুলোয় নিবিষ্ট হয়, আমরা আশা করতে পারি, গল্পের পাশাপাশি তারা জীবনের কিছু উপকারী পাঠ কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হবে। লেখক আরিফ আজাদ তার লেখনীশক্তির মুন্সিয়ানায় গল্পগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। এ কারণে প্রতিটি গল্পই হয়ে উঠেছে সুখপাঠের এক বিশাল আধার। এ বইতে পাঠকসমাজ নতুন এক আরিফ আজাদকে আবিষ্কার করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে বলতে হচ্ছে, লেখক নিজস্ব বানান ও ভাষারীতি অনুসরণ করে থাকেন। ফলে বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দের অচেনা রূপ দেখে তারা বিভ্রান্ত হবেন না–এই কামনা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য আর সুন্দরের পথে অবিচল রাখুন। আমিন।
প্রকাশক
সমকালীন প্রকাশন
.
লেখকের অনুভূতি
খুব ছোটবেলা থেকেই আমি গল্প-পাগল। যেখানেই গল্পের গন্ধ পেয়েছি, সেখানেই ডুবিয়ে দিয়েছি চোখ। গল্প পড়তে, গল্প শুনতে আমার দুর্নিবার আগ্রহ। আমার মনে পড়ে শৈশবের কথা। জোছনাভরা রাতে উঠোনে মাদুর পেতে আমরা গোল হয়ে বসতাম। আমাদের মাঝে কখনো গল্প-কথক হিশেবে থাকতেন আমার দাদি, কখনো বা আমার জেঠু। মাঝেমধ্যে বাবাকেও পাওয়া যেতো। তারা পুরোনো দিনের রাজা-রানির গল্প, রাক্ষস-খোক্কসের গল্প, জ্বীন-ভূতের গল্প বলে আসরে মোহ সৃষ্টি করতেন। কোনো কোনো গল্প শুনে বিষাদে ছেয়ে যেতো আমাদের মন। আবার কোনো কোনো গল্প শুনে গায়ের রক্ত হিম হয়ে যেতো ভয়ে। গল্প আমাদের মাঝে যে অনুভূতিই তৈরি করুক–গল্প শোনার ব্যাপারে আমরা ছিলাম একেবারে নাছোড়বান্দা।
সেই থেকে হয়তো–গল্প আমার জীবনের একটা অনুষঙ্গই হয়ে দাঁড়ালো। মানুষকে গল্প শোনাবার এক তীব্র আকর্ষণ, সুতীব্র বাসনা আমার মাঝেও প্রবল হয়ে ওঠে। আমার লেখা প্রথম বই প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ সম্ভবত সেই আগ্রহ আর বাসনার এক যৌথ সম্মিলন। সাজিদ সিরিজে আমার আলোকপাতের বিষয়গুলো অনেক বেশি কাঠখোট্টা। সেই কাঠখোট্টা বিষয়বস্তুকে গল্পাকারে উপস্থাপনের ভূতুড়ে চিন্তা নেহাত গল্প-পাগল না হলে কি সম্ভব হতো?
প্রচলিত আছে–সাহিত্য হলো সমাজের দর্পণ। একটা সমাজ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সেই সমাজের মানুষগুলো কী ভাবছে, কীভাবে ভাবছে, সেই সমাজের তরুণেরা কোন পথে আছে, জোয়ানরা কীভাবে দিন পার করছে, বৃদ্ধরা কীভাবে ছিলো, সভ্যতা বিনির্মাণে সেই সমাজের অবদান কততখানি–সাহিত্যের মাঝে এসব কিছুরই দেখা মেলে। কারণ, সাহিত্য ধারণ করে সময়কে আর সাহিত্যিকেরা সময়কে বন্দী করে যান কাগজের ফ্রেমে।
বলা বাহুল্য, বাংলা সাহিত্য হিশেবে আমরা যা পড়ি বা পড়ে এসেছি, তাতে যদিও বা সময়ের একটা চিত্র ফুটে উঠেছে, কিন্তু নিদারুণভাবে যা অনুপস্থিত থেকে গেছে। তা হলো–এদেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষের জীবনাচার। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ যে ধর্মমতে বিশ্বাসী, যে ধর্মবিশ্বাস এখানে বহুযুগ ধরে শেকড় গেড়ে আছে, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়–সেই জীবনাচার, সেই বিশ্বাসের বিষয়বস্তু আমাদের বাংলা সাহিত্যসমাজে স্থান পায়নি।
সাহিত্য কল্পনানির্ভর, কিন্তু কল্পনার সূত্রপাত হয় বাস্তবতা থেকে। চারপাশের মানুষের জীবনাচার, জীবনপদ্ধতিই হলো সাহিত্যের মূল নিয়ামক। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে লক্ষ্যণীয় যে, আমাদের সাহিত্যসমাজে আমাদের চারপাশের সেই জীবনাচার, সেই জীবনপদ্ধতি অনেকাংশেই ব্রাত্য।