আপনি অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ার এলগরিদম পরিবর্তন করতে পারবেন না। সেই এখতিয়ার আপনার নেই। আপনি মানুষকে বলতে পারেন না, যেন তারা দুঃখ বাড়ায় এমন পোস্ট দেওয়া বন্ধ করে বা এমন পোস্ট বেশি দেয়, যেগুলো আনন্দ দেয়। আপনি যা করতে পারেন, তা হলো সেলফ-কন্ট্রোল। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাত্রা সীমিত ও পরিমিত পর্যায়ে আনতে পারলে এমন দ্রুত মুড সুইংয়ের হাত থেকে বাঁচা সহজেই সম্ভব।
যেহেতু ফোনের স্ক্রিনে ভেসে থাকা নোটিফিকেশন আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতে প্রলুব্ধ করে সর্বদা, আপনি ইচ্ছে করলে আপনার স্মার্টফোনের সেটিংস অপশানে গিয়ে নোটিফিকেশন অফ করে রাখতে পারেন। যে যে অ্যাপসের নোটিফিকেশনের কারণে আপনাকে বারংবার ভার্চুয়ালে ঢু মারতে হয়, সেই অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখলে সেগুলো থেকে আর কোনো নোটিফিকেশন আপনার কাছে আসবে না, আর আপনিও তাড়না অনুভব করবেন না যখন-তখন ফোন হাতে নেওয়ার, ফেইসবুক-ইউটিউব-টুইটারে আসার। ফোনের সেটিংস থেকে নোটিফিকেশন অপশানে গেলে কোন কোন অ্যাপ থেকে নোটিফিকেশন বন্ধ করতে চান, সে অপশান আপনি অনায়াসে পেয়ে যাবেন। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কমাতে এটা এক কার্যকরী কৌশল।
চাইলে আরেকভাবে আপনি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরতে পারবেন। আপনার ফোনের সেটিংসয়ে Digital Wellbeing’ নামে একটা অপশান আছে। ফোনের স্ক্রিনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি যে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করবেন তা ফোন কোম্পানিও বুঝতে পারে। তাই তারা গ্রাহকদের মানসিক স্বাস্থকে গুরুত্ব দিতে এ-ধরনের একটা অপশান ফোনগুলোতে রাখছে আজকাল। এই Digital Wellbeing অপশানে গিয়ে আপনি আপনার ফোনে থাকা কোন অ্যাপস একদিনে কতক্ষণ ব্যবহার করবেন, তার একটা সীমা ঠিক করে নিতে পারেন। ধরা যাক, আপনি স্থির করলেন যে–পুরোদিনে আপনি একঘন্টা ফেইসবুক অ্যাপ ব্যবহার করবেন। আপনি যদি ওই অপশানে ফেইসবুক অ্যাপের জন্য একঘণ্টা টাইম নির্ধারণ করে দেন, তাহলে ফেইসবুক অ্যাপ ব্যবহারের মাত্রা একঘন্টা পার হওয়ামাত্র ওই অ্যাপ একপ্রকার অকেজো হয়ে পড়বে। ওইদিনে আপনি কোনোভাবেই তখন আর ফেইসবুকে ঢুকতে পারবেন না। ঠিক পরেরদিন পুনরায় আপনি আবার একঘণ্টা ফেইসবুক ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। যে-সকল অ্যাপসের কারণে আপনার প্রচুর সময় নষ্ট হয়, সেগুলোকে আপনি এভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির একটা দৃশ্যমান প্রমাণ হলো–সকালবেলা বিছানায় থাকা অবস্থাতেই ফোন হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকে পড়া। রাতে যখন ঘুমোতে আসে তখন প্রায় দুটো। সকালে যখন জাগে তখন দিনের নয়টা বাজে। এই সময়টুকুর মাঝে ফেইসবুকে কি-না-কী ঘটে গেলো, কে কী লিখে ফেললো, কে কী শেয়ার করে ফেললো–তা একবার দেখে না নিলে চলবে কেন? এমন চিন্তা থেকেই ঘুম-ভাঙা চোখে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে ঢুকে পড়া হয় সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে। এরপর স্ক্রলিং আর স্ক্রলিং। কোনো কূল-কিনারা নেই।
আপনার যদি এমন অভ্যাস থাকে, তাহলে সেটা ভাঙতে হবে। সকালবেলার স্নিগ্ধ আবহাওয়াটা, শান্ত পরিবেশটা সসাশ্যাল মিডিয়ার জ্যামে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর শুরুতেই কখনো ফোন হাতে নেওয়া যাবে না। এটা ঠিক সময় দেখার জন্য, ক্যালেন্ডার চেক করার জন্য আজকাল ফোন হাতে না নিয়ে উপায় নেই কোনো; তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে–সময় দেখতে এসে সময় অপচয়ের জন্য আমরা যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝুঁদ হয়ে না যাই।
কেবল সকালবেলা ঘুম-ভাঙা চোখে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বর্জন করলে হবে না, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় স্মার্টফোন যেন আপনার আশেপাশে না থাকে, সেই বন্দোবস্তও আপনাকে করতে হবে। সেই দিনগুলোর কথা ভাবুন তো, যে দিনগুলোতে রাতে বিছানায় শুয়ে শুধু একটু ফেইসবুকে চোখ বোলানোর জন্য এসেছিলেন, কিন্তু যখন ফেইসবুক থেকে বের হলেন, তখন প্রায় শেষ রাত চলে। আপনি বুঝতেও পারেননি, কীভাবে এত সময় পার হলো! এটা একদিন-দুদিন বা অকস্মাৎ ঘটে এমন কোনো দৃশ্য নয়। এটা আমাদের প্রায় সবার নিত্যদিনকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়া গবেষকরা বলছেন, রাতে ভালো একটা ঘুমের জন্য আমাদের উচিত হবে অন্ততপক্ষে ঘুমানোর এক থেকে দেড় ঘন্টা আগে যাবতীয় স্ক্রিনের আলো থেকে দূরে থাকা। স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো যেহেতু আমাদের মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়, তাই ভালো একটা ঘুম পেতে হলে দরকার রাত্রিবেলা যতটা সম্ভব ক্রিনের নীল আলো থেকে দূরে থাকা। আপনার যদি রাতে অনলাইনে জরুরি কোনো কাজ থাকে, তা যত দ্রুত সম্ভব সেরে নিয়ে নিজেকে ঘুমের জন্য আগেভাগেই প্রস্তুত করতে পারেন।
আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে–সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সময় আপনি অকাতরে ব্যয় করেন, তাতে আপনার কোনো না কোনো কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই। হয় আপনি পর্যাপ্ত পড়াশোনা করছেন না, নতুবা আপনি চাকরিতে ভালো পারফরমেন্স করতে পারছেন না, অথবা পরিবারে দিতে পারছেন না পর্যাপ্ত সময়। তাছাড়াও, খেয়াল করলে দেখবেন–সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি আপনাকে আপনার শখগুলো থেকেও অনেকটাই দূরে সরিয়ে এনেছে। এই আসক্তি কাটানোর জন্য আপনাকে আপনার শখগুলোর কাছেও ফিরে যেতে হবে। বাগান করা, ঘুরতে যাওয়া, সামাজিক কাজকর্মে যুক্ত হওয়াসহ নানাবিধ কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির লাগাম টেনে ধরা অনেকটাই সম্ভব।