আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনি যে আসক্ত তা বুঝবেন কীভাবে, তাই তো? প্রশ্নটা আপনার একার নয়, দুনিয়ার অনেক-মানুষের। অনেক সাইকোলোজিস্ট, থেরাপিস্ট এবং ডিজিটাল-ডিটক্স নিয়ে কাজ করছে। এমন অনেক গবেষক এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির অনেকগুলো লক্ষণ বিদ্যমান, কিন্তু সেসবের মধ্যে ভয়ানক পর্যায়ের কিছু লক্ষণ আছে, যা দেখে আপনি আঁচ করতে পারবেন যে, আপনার সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির পর্যায় কতখানি।
সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর স্মার্টফোনটার কথাই যদি সর্বাগ্রে আপনার মনে আসে এবং বিছানায় থাকাবস্থাতেই যদি আপনি ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার বা ইনস্টাগ্রাম ক্ৰল করবার তাড়না অনুভব করেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন যে, আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভালো রকমের আসক্ত।
ধরুন, আপনি কোনো কাজ করছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফোন চেক করবার, নোটিফিকেশন চেক করবার তাড়না অনুভব করেন কি? ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে কাজ করার সময় আপনি কি আলাদা ট্যাবে ফেইসবুক খুলে রাখেন, যাতে খানিক পর পর আপনি সেখানে ছুঁ মারতে পারেন? যদি আপনার মাঝে এই অভ্যাসটা থাকে, তাহলে তা সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির অন্যতম লক্ষণ।
ধরুন, এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন যে, আপনি কোনোভাবে ফেইসবুকে ঢুকতে পারছেন না। হয়তো আপনার ফোনে ডাটা নেই অথবা ফেইসবুকের নিজস্ব কারিগরি সমস্যার কারণে ফেইসবুকে ঢুকতে আপনার সমস্যা হচ্ছে কিংবা এমনও হতে পারে–কোনো কারণে ফেইসবুক আপনার অ্যাকাউন্টটাকে সাসপেন্ড করে দিয়েছে। ভাবুন তো, ওই নির্দিষ্ট সকালটা আপনার কেমন কাটবে? নিশ্চয় একরাশ বিরক্তি আর অস্থিরতায়। সেদিনের স্বাভাবিক সবকিছুকে আপনার বিরক্তিকর মনে হবে। কখন আপনি পুনরায় ফেইসবুকে ফেরত যেতে পারবেন আর কীভাবে সাসপেন্ড হওয়া অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে আনতে পারবেন–এমন চিন্তায় বিক্ষিপ্ত থাকবে আপনার মন। খিটখিটে হয়ে থাকবে মেজাজ-মর্জি। এই ঘটনা যদি আপনার সাথে ঘটে থাকে বা ঘটবার আশংকা থাকে, ধরে নিতে পারেন যে, আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জোরালোভাবে আসক্তদের একজন।
কোথাও বেড়াতে গেলে বা পরিবার আর বন্ধুদের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর অনেক অনিন্দ্য সুন্দর মুহূর্তকে নিশ্চয় আপনি ক্যামেরাবন্দি করেন, তাই না? এসব মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করার সময় আপনার মনে কি বারংবার সোশ্যাল মিডিয়ার কথা ভেসে ওঠে? এই ছবিগুলোকে কত বাহারি ক্যাপশানে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করবেন, তাতে কাকে কাকে ট্যাগ করবেন, সেসব দেখে অন্যদের কী প্রতিক্রিয়া হবে–এসব চিন্তা কি আপনার ভাবনা-জগতে এসে দোলা দেয়? উত্তর যদি হ্যাঁ, হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, আপনি একজন সোশ্যাল মিডিয়া আসক্ত ব্যক্তি।
ফেইসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামে দেওয়া পোস্টগুলো ঘন ঘন তদারকি করার প্রবণতা কি আপনার মাঝে বিদ্যমান? অর্থাৎ, আপনার লেখা বা ছবিগুলোতে কতগুলো লাইক-কমেন্ট পড়লো, কে কী মন্তব্য করলো, তা দেখার জন্য সারাক্ষণ কি আপনার মন আকুপাকু করে? যদি তা সত্য হয়, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির ছোবল থেকে নিরাপদ নন আপনিও।
মাঝে মাঝে আপনার মনে হয়, যেন আপনি নোটিফিকেশনের শব্দ শুনতে পেলেন মাত্র, কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে–আপনার সাথে বা আপনার আশেপাশে কোনো স্মার্টফোন-ই নেই। কেন এমন হয় জানেন? কারণ নোটিফিকেশনের শব্দে আপনার এমন অভ্যস্ততা চলে আসে যে, আপনার অবচেতন মন সর্বদা সেই শব্দকে আশা করে থাকে। এমনটা যদি আপনার সাথে হয়ে থাকে, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির ব্যাপারে আপনাকে জরুরিভাবে ভাবতে হবে।
ফেইসবুকে কী লিখবেন, ইনস্টাগ্রামে কোন ছবিটা ছাড়বেন, টুইটারে কোন বিষয়ে পোস্ট করবেন, তা নিয়ে যদি আপনি আগাম ভাবনা-চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন এবং এর পেছনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন যে, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কোনো একটা পর্যায়ে আপনি ইতোমধ্যেই হাঁটতে শুরু করেছেন।
তাছাড়া বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা আড্ডা দেওয়ার চাইতে যদি আপনি সোশ্যাল মিডিয়া লিংকে বেশি পছন্দ করেন, পরিবারের কোনো কাজ সুচারুরূপে করার চেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট পড়াটা যদি আপনার কাছে অধিক গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া আপনার জীবনে নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিশ্চিত।
আপনার এসাইনমেন্টটা যদি সঠিক সময়ে শেষ না করতে পারেন, যদি সঠিক সময়ে। ক্লাশে উপস্থিত না থাকতে পারেন, যদি কাজে যেতে আপনার প্রায় প্রত্যেকদিন দেরি হয়ে যায়, যদি আপনার ক্লাশের বা কাজের মান দিনের পর দিন কেবল খারাপ-ই হতে থাকে, যদি আপনি নতুন কিছু শেখবার জন্য সময় না করতে পারেন, যদি আপনি পরিবারে সময় দিতে হিমশিম খান–আপনার উচিত হবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার সময় ব্যয়ের দিকটাকে খতিয়ে দেখা। আস্তে আস্তে জীবনের গতি থেকে ছিটকে পড়ার আসল কারণ আপনি হয়তো এখানেই পেয়ে যাবেন।
হয়.
ইনসমোনিয়ার রোগীদের কথাবার্তা শুনলে আপনার খুবই কষ্ট হবে। রাতে একটু আরাম করে ঘুমোতে না পারার যে কী যন্ত্রণা–এটা কেবল তারাই জানে, যাদের নিঘুম রাত কাটে! যারা হাজার চেষ্টা করেও চোখের তারায় নামাতে পারে না একবিন্দু ঘুমের রেশ। রাতে একটু ঘুমোনোর জন্য তারা কত কত ডাক্তারের চেম্বারে, কত প্রকারের ওষুধ আর কত ধরনের চেষ্টা-তদবির যে করেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।