ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ তার কান্না বিজড়িত গলায় বললেন, আপনার কবুল না হওয়া দুআটাও আজ কবুল হলো, ভাই। আপনার সম্মুখে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তিনিই আহমাদ ইবনু হাম্বল। নিশ্চয় আপনার দুআর কারণেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার বান্দা আহমাদকে আপনার দোরগোড়ায় টেনে এনেছেন।[৩]
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ এবং রুটিওয়ালার গল্পের সবচেয়ে মুখ্য বিষয়টা হলো–অবিরত ইস্তিগফার! রুটিওয়ালা সর্বদা, তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে বলতেন–আসতাগফিরুল্লাহ! আসতাগফিরুল্লাহ! এই আমলটা তার জীবনের একটা নিত্য-নৈমিত্তিক রুটিন হয়ে দাঁড়ালো। যখনই সময় পান, তখনই ইস্তিগফারে মশগুল থাকার কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার জীবনের সমস্ত দুআ কবুল করতেন। তার ইস্তিগফার অবশ্যই তোক দেখানো ছিলো না এবং তাতে ছিলো না কোনো খেয়ালিপনাও। হৃদয়ের গভীর থেকে সত্যিকারভাবে তিনি আল্লাহর কাছে এই ইস্তিগফারের মাধ্যমে তাওবা করতেন বলেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পুরস্কার হিশেবে তার দুআগুলো কবুল করে নিতেন। এমনকি ইমাম আহমাদকে দেখার যে বাসনা তার ছিলো, সেটাও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পূরণ করে দিলেন একদিন। তার সেই বাসনা পূরণ করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাকে ইমাম আহমাদের কাছে টেনে নেননি, বরং ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহকেই টেনে এনেছিলেন তার কাছে।
ইস্তিগফারের এই হলো শক্তি!
আপনি কি সংসার জীবনে ভীষণ অসুখী? স্ত্রীর সাথে, বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথে নিত্য-নিয়মিত মনোমালিন্য হচ্ছে? মনে হচ্ছে সংসার জীবন থেকে বারাকাহ হারিয়েছেন? তাহলে আজ থেকে অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার পাঠ শুরু করুন।
আপনার কি চাকরি হচ্ছে না? বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে ঘুরছেন? অর্থকষ্টে আপনার জীবনটাই নাজেহাল? জীবন-সমুদ্রে খুঁজে পাচ্ছেন না পথের দিশা? আপনার জন্য কুরআনের সমাধান–অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার।
আপনার ভালো ক্যারিয়ার চাই, ভালো জীবনসঙ্গী চাই, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল চাই-ইস্তিগফার! ইস্তিগফার! ইস্তিগফার!
আপনি যা হন্যে হয়ে খুঁজছেন, তার সামনে একটা দেওয়াল তৈরি হয়ে আছে। সেই দেওয়াল ভেদ করে কাঙ্ক্ষিত বস্তু আপনার কাছে আসতে পারছে না। তাহলে আপনার কাজটা কী? আপনার কাজ হলো বাধার সেই দেওয়ালটা ভেঙে দেওয়া, যাতে আপনি পৌঁছাতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। সেই দেওয়াল ভাঙার কাজে আপনার হাতে সবচাইতে যে মজবুত শাবলটি আছে তার নাম হলো ইস্তিগফার! ইস্তিগফারের এত ক্ষমতা যে জীবনে যদি একবার তার ফল পান, তাহলে বিস্ময়াবিভূত হয়ে যাবেন।
ইস্তিগফার বদলে দিতে পারে আপনার জীবন। আপনার জীবনে যা এতদিন কেবল স্বপ্ন ছিলো, আপনার অবারিত ইস্তিগফার সেগুলোকে রূপ দিতে পারে বাস্তবতায়। কল্পনাতেও যা আপনার কাছে ছিলো অসম্ভব, ইস্তিগফার আপনাকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে সেই সম্ভাবনার দুয়ারে।
মদিনায় একবার ভীষণরকম খরা দেখা দিলে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু লোকজনকে নিয়ে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে আরম্ভ করেন। সেদিন কেবল ইস্তিগফার পাঠ করেই উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেমে গেলে অন্যরা তাকে প্রশ্ন করলো, ‘ইয়া আমিরুল মুমিনিন, আপনি তো কেবল ইস্তিগফার পাঠ করেই থেমে গেলেন। অন্য কোনো দুআ তো আল্লাহর কাছে করলেন না।
তাদের জবাবে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘ইস্তিগফার দুআ কবুলের এমন এক জায়গায় আঘাত হানে, যেখানে কোনো দুআ ব্যর্থ হয় না।[৪]
উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর কথাগুলো আপনার জীবনের জন্যও ভীষণরকম সত্যি। দুআ কবুলের সেই দরোজাটা আপনার জন্যও ভোলা আছে, যেভাবে ভোলা ছিলো উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর জন্য, মদিনাবাসীদের জন্য। সেই দরোজাটা উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু চিনেছেন বলেই নিশ্চিন্তে বলতে পেরেছেন–’ইস্তিগফার দুআ কবুলের এমন এক জায়গায় আঘাত হানে, যেখানে কোনো দুআ ব্যর্থ হয় না।
ইস্তিগফারের শক্তি তারা চিনেছেন, আমরা চিনবো কবে?
ছয়.
কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দুটো ওয়াদা আছে। দুটো অবস্থায় তিনি আমাদের ওপর আযাব নাযিল করবেন না বলে জানিয়েছেন। একটা হলো যতক্ষণ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে জীবিত আছেন, আর অন্যটা হচ্ছে–যতক্ষণ আমরা আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার তথা ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকবো।
যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে আছেন (ইয়া মুহাম্মাদ), ততক্ষণ আল্লাহ তাদের ওপর কোনো আযাব নাযিল করবেন না, এবং যতক্ষণ তারা ইস্তিগফার করতে থাকবে, ততক্ষণ আল্লাহ তাদের আযাব দেবেন না(৫)
দুটো সুযোগের একটা আমরা হারিয়েছি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর মাধ্যমে। যেহেতু তিনি আমাদের মাঝে নেই, সুতরাং প্রথম শর্তটাও আর বলবৎ থাকবে না, কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগটা আমাদের জন্য মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত খোলা। আল্লাহ বলছেন যে, আমরা যদি তাঁর কাছে অবারিত ইস্তিগফার তথা ক্ষমাপ্রার্থনার মধ্যে থাকি, তাহলে আমাদের জীবনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কোনো আযাব নেমে আসবে না।
আল্লাহর আযাব বড় কঠিন জিনিস! আল্লাহর ক্রোধে আপনার জীবন লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে মুহূর্তেই। যে পাপের দরিয়ায় আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন, তার বিনিময়ে আল্লাহ যদি আপনাকে শাস্তি দিতে চান, তাহলে চোখের পলকে তিনি আপনার জীবনকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারেন। আপনার জীবনে থাকা সুখ ছিনিয়ে নিতে পারেন, আপনার সম্পদ কেড়ে নিতে পারেন, ধূলিসাৎ করে দিতে পারেন আপনার মান-মর্যাদা। আপনার জীবনটাকে বিষিয়ে তুলতে আল্লাহর একটু অসন্তুষ্টিই যথেষ্ট।