বেলা ফুরাবার আগে বইটা যখন লিখি, তখন আমার ধ্যান-জ্ঞান সব যেন বইটাকে ঘিরেই। আমি স্বপ্ন দেখতাম–আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইচ্ছাতে এই বই যুবক-যুবতীদের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। তারা সালাতের প্রতি উদগ্রীব হচ্ছে, হারাম রিলেশান ছেড়ে দিচ্ছে, ফোন মেমোরি থেকে ডিলেট করে দিচ্ছে সমস্ত গান, যা না শুনলে রাতে তাদের ঘুম হতো না। ফোনের গ্যালারি থেকে তারা মুছে দিচ্ছে সেসকল ছবি আর ভিডিও, যা তাদের কু-প্রবৃত্তিকে তৃপ্ত করতে একদা। তারা বিনয়ী হচ্ছে, সময়ের গুরুত্ব বুঝছে, তারা সুন্নাহ আর নফল পালনের দিকে ঝুকছে, ফজর আর তাদের কাযা হচ্ছে না–বইটা লিখবার প্রাক্কালে এসবই ভাবতাম আর আল্লাহর কাছে অনেক দুআ করতাম। আল্লাহকে বলতাম, তিনি যেন আমার স্বপ্নগুলোকে সত্যি করেন আর বইটাকে কবুল করেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর বারাকাহ আর প্রকাশ্য সাহায্য যে কী জিনিস, তা আমি বরাবরের ন্যায় আবারও উপলদ্ধি করলাম। বেলা ফুরাবার আগে বইটাকে নিয়ে আমি যে যে স্বপ্ন একদা মনে মনে আঁকতাম, হাঁটতে হাঁটতে যে দৃশ্যগুলো দোলা দিয়ে যেতো আমার হৃদয়ে, সেসবকিছুই আমার রব বাস্তবে পরিণত করেছেন। গোটা বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশের মাঝে বইটাকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, যে আগ্রহ আমি দেখেছি, সোশ্যাল মিডিয়া, মেইল ও ইনবক্সে বইটা পড়ার পর যে সমস্ত পরিবর্তনের কথা আমি শুনেছি মানুষের কাছ থেকে, তা দেখে আমি বিশ্বাস করি যে, আমার মহান রব আমার দুআগুলো কবুল করেছেন। তিনি বইটাকে যুবক-যুবতীসহ অনেক অনেক মানুষের পরিবর্তনের অসিলা হিশেবে গ্রহণ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
বইটা প্রকাশের দুবছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ বইটা পড়ে তাদের পরিবর্তনের কথা জানাচ্ছেন। এ যে কী মধুর ভালো লাগা, বর্ণনার জন্য যথাযথ শব্দ দুনিয়ার কোনো ভাষাতে মজুত নেই। আলহামদুলিল্লাহ!
বেলা ফুরাবার আগে বইটাকে আমি বলেছিলাম ‘সাজিদ’ তৈরির মিশন। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ পড়ে যারা সাজিদ হতে চাইবে, তারা যখন জানতে চাইবে সাজিদ হতে হলে তাদের কী কী করতে হবে, আমি বলেছিলাম তারা যেন বেলা ফুরাবার আগে বইটাতে চোখ বুলায়। আমি ভীষণভাবে বিশ্বাস করি–আত্মিকভাবে। নিজেকে পরিশুদ্ধ করা না গেলে কখনোই পরম পবিত্রতার সন্ধান লাভ সম্ভব নয়। আত্মার সেই শুদ্ধতার দিকে যুবক-যুবতীদের ধাবমান করতেই আমি বইটার কাজে হাত দিয়েছিলাম। যেহেতু যুবক বয়সের সমস্যাগুলোর ভেতর দিয়ে আমি নিজেও যেতাম এবং এখনো যাই, তাই সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা আমার জন্য কঠিন কিছু ছিলো না। সেই সমস্যাগুলোর পরতে পরতে আমি হাঁটতে চেষ্টা করেছি এবং বের করে আনতে চেয়েছি সেসবের সম্ভাব্য সবচেয়ে সঠিক চিকিৎসাটাই।
অনেক পাঠক আমাকে বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের দ্বিতীয় কিস্তি আনার অনুরোধ করেছেন। যুবক বয়সের যেহেতু সমস্যার অন্ত নেই এবং তা ক্রমবর্ধমান, তাই আমারও খুব ইচ্ছে ছিলো এই ধরণের আরো বই নিয়ে কাজ করার। আলহামদুলিল্লাহ, মহান রব আমার সেই বাসনাটাও পূরণ করেছেন। এবার ভিন্ন কিছু হোক নামে এই সিরিজের পরের বইটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রকাশের সুযোগ দিলেন আমাকে। আমার রবের দরবারে অফুরান কৃতজ্ঞতা।
এবার ভিন্ন কিছু হোক বইটা বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের পরের কিস্তি। দুটো বই প্রায় একই ধাঁচে লেখা। আমি চেষ্টা করেছি অধ্যায়গুলোকে জীবনঘনিষ্ঠ রাখতে, যাতে পাঠকেরা পড়ার সময় নিজের অবস্থাকে কল্পনা করতে পারেন। যিনি বইটা হাতে নিয়ে পড়বেন, তার যেন মনে হয় বইটা আমি তার জন্যই লিখেছি এবং বইয়ের কথাগুলো যেন আমি তার পাশে বসে বসে তাকে শোনাচ্ছি। পাঠকের মনোযোগ যাতে বিচ্ছিন্ন না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা করেছি আমি, আলহামদুলিল্লাহ।
এই বইতেও পাঠকেরা অনেকগুলো সমস্যার সমাধান পাবেন এবং আরো পাবেন। অনেক আশার আলোও। যেহেতু আমি খুবই আশাবাদী একজন মানুষ, তাই মানুষকে আশা নিয়ে বাঁচতে সৃপ্ন দেখাতেই আমি ভালোবাসি। আর কেনই-বা নিশারাবাদী হবো? অবিশ্বাসীরা ছাড়া আর কারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়?
বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের মতো এই বই নিয়েও আমার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা–তিনি এই বইটাকে যেন কবুল করেন আর আমার নাজাতের অসিলা বানিয়ে দেন। তিনি যেন আমাকে সর্বদা মাটির মানুষ থাকার সুযোগ দেন। সমস্ত অহংকার, রিয়া আর বড়োত্ব থেকে তিনি যেন আমাকে মুক্ত রাখেন।
বরাবরের মতোই আমার পাঠকদের কাছে অনুরোধ–পড়া শেষ হলে বইটা নিজের কাছে রেখে দেবেন না। আপনার নিকটাত্মীয়, বন্ধু, ভাই-বোন বা এমন কারো কাছে বইটা হস্তান্তর করবেন, যার জন্য বইটাকে আপনি দরকারি মনে করবেন। সকল পাঠকের জন্য আমার অফুরান ভালোবাসা। ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা এই বইটার পেছনে যারা বিভিন্নভাবে শ্রম দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা সমকালীন প্রকাশনের প্রতি, বইটাকে পাঠকের হাতে পৌঁছে দিতে যাবতীয় বন্দোবস্তের ভার গ্রহণের জন্যে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেন আমাদের সবাইকে জান্নাতের সবুজ উদ্যানে একত্রিত করেন। আমিন।