আত্মবিশ্বাসে ফাঁটল ধরিয়ে শয়তান ভুলের রাস্তায় আমাদের নিমজ্জিত রাখে। সময় বয়ে যায়, কিন্তু আল্লাহর নির্দেশিত রাস্তায় ফিরে আসা আমাদের আর হয়ে ওঠে। না। একদিন ফুরিয়ে আসে জীবনপ্রদীপের তেজ, ধীরে ধীরে নিভে যেতে থাকে। সেটা। আর যেদিন ফুরিয়ে যায় আয়ু, সেদিন স্তিমিত হয়ে যায় জীবনের সকল আয়োজন, বন্ধ হয়ে যায় আশা এবং ভরসারও দরোজা।
কিন্তু এমন ঘনঘোর অন্ধকারে একটা মানবজীবন কি কেটে যেতে পারে? তাকে সৃষ্টির পেছনে স্রষ্টার যে উদ্দেশ্য, তা পূরণ না করেই সে চুকিয়ে দেবে জীবনের পাঠ? বোধোদয়ের আলোক-রেখা কখনোই কি উদিত হবে না তার চিন্তার আকাশে?
শয়তানি প্ররোচনায় বিচ্যুত অন্তরগুলোকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার চাইতে মহৎ কিছু আর কী আছে দুনিয়ায়! যারা হারিয়ে ফেলেছে সরল পথের দিশা, যারা ভুলে গেছে তাদের অনন্ত গন্তব্যের রাস্তা, যারা ডুবে আছে এক নিঃসীম অন্ধকারে, তাদের অন্তরগুলোকে জাগিয়ে তুলতে, অন্ধকারের গহ্বর থেকে তাদের টেনে তুলতে দরকার সঠিক পরিচর্যা এবং সুন্দর আহ্বান। অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য আর তিরস্কারের ভাষায় নয়, তাদের ডাকতে হবে ভালোবাসার সাথে। তাদের ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে পরম যত্ন করে, যাতে তারা হতাশ ও বিরক্ত না হয়ে পড়ে।
আত্মভোলা মানুষগুলোকে আল্লাহর রাস্তায় ডাকবার, তাদের ভুলগুলোকে পরম যত্নের সাথে চিহ্নিত করে সেসব থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বাতলানোর ব্যাপারে লেখক আরিফ আজাদ ইতোমধ্যেই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, তার লেখা বইগুলো প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের হিদায়াতের অসিলা হচ্ছে, তরুণ-যুবা বৃদ্ধ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আরিফ আজাদ তার আলো হাতে পৌঁছে যাচ্ছেন এটা আমাদেরসহ গোটা উম্মাহর জন্যেই বড়ো আশাব্যঞ্জক ঘটনা।
সাজিদ সিরিজের জনক আরিফ আজাদ প্রথম নিজ বলয়ের বাইরে আসেন বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের মাধ্যমে। বলাই বাহুল্য, এই কাজটাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ভরপুর বারাকাহ দিয়ে তাকে সিক্ত করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এই। বইটা আমাদের চারপাশের কত যুবক-যুবতীর হিদায়াতের অসিলা হয়েছে, কতো দিশেহারা ক্লান্ত প্রাণ যে স্বস্তি আর শান্তি নিয়ে নীড়ে ফিরেছে তা গণনার ঊর্ধ্বে, আলহামদুলিল্লাহ। প্রকাশনার ভেতরে থাকা হয় বলে সেই পরিবর্তনের অনেক গল্প, অনেক ঘটনাকে আমরা আরো কাছ থেকে দেখি এবং আল্লাহর কাছে বারংবার কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে পড়ি।
শুধু পাঠকের প্রত্যাশা ছিল বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের দ্বিতীয় কিস্তি যেন বের হয়। পাঠকের প্রত্যাশা বলেই নয়, এই সিরিজের ধারাবাহিক কিস্তিগুলো সত্যিই দরকারি। মানুষের সমস্যাগুলোকে ঠিক এভাবে সামনে আনার এবং সম্ভাবনাগুলোকে এভাবে জাগিয়ে তোলার কাজটা একটা বইয়ে সমাপ্ত হতে পারে না। আর মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানের একটা কার্যকর পদ্ধতি যখন সামনে উঠে আসে, তখন সেটাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোই উচিত বলে মনে করি। এই জায়গায় লেখক আরিফ আজাদকে আমরা সফল বলতে পারি নিঃসন্দেহে। তিনি যে শব্দশৈলী, যে ধারায় মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় ফিরতে উদ্বুদ্ধ করেন তা পাঠকেরা ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন। ফলে এই সিরিজে এই ধারায় আরো নতুন নতুন সমাধান নিয়ে তিনি হাজির হবেন, আরো নতুন সম্ভাবনার দ্বারকে উন্মোচন করবেন পাঠকদের সামনে সে প্রত্যাশা আমাদের সকলেরই ছিলো। আমাদের সেই প্রত্যাশার একটা পরিণতির নাম হলো–এবার ভিন্ন কিছু হোক৷
বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের পরের কিস্তি এবার ভিন্ন কিছু হোক৷ যেহেতু এর আগের কিস্তির আলোচ্য বিষয়াদি, বর্ণনার ধারা, ভাষার ব্যবহার, শব্দশৈলীর প্রয়োগ সম্পর্কে পাঠকেরা অবগত আছেন, এই কিস্তির ব্যাপারে তাই নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি, এই কিস্তিতেও পাঠকেরা বইটির পাতায় পাতায়, পরতে পরতে নিজেদের খুঁজে পাবেন। এ-ও বলতে পারি, বরাবরের ন্যায় মনে হবে প্রিয় লেখক বুঝি পাশে বসেই গল্পচ্ছলে আপনাদের শোনাচ্ছেন কথাগুলো।
এই সিরিজটাকে লেখক আরিফ আজাদ বলেছেন সাজিদ’ তৈরির মিশন। আলহামদুলিল্লাহ, সিরিজটাকে ঘিরে পাঠকদের উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর আবেগের ফল্গুধারা দেখে আমরা বিশ্বাস করি লেখক সফলতার সঠিক রাস্তায় আছেন। আমাদের মহান রব তার এই মিশনকে কবুল করে নিন, তার কাজে ভরপুর কামিয়াবি দান করুন এবং তার কাজগুলোকে পরকালে তার নাজাতের অসিলা করে নিন–কায়মনোবাক্যে এই প্রার্থনা-ই করি মহামহিম দয়াময়ের কাছে। বইটির সাথে জড়িত হতে পেরে সমকালীন পরিবার সবিশেষ আনন্দিত আর আপ্লুত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেন আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করে আমাদেরকেও কবুল করেন। আমিন।
.
লেখকের কথা
‘জীবনের জাগরণে’ সিরিজের প্রথম বই ছিলো বেলা ফুরাবার আগে। বইটা আমার কতো যে প্রিয় আর বইটাকে ঘিরে গত দুবছরে কতো কতো ঘটনার যে জন্ম হয়েছে, তা বলে শেষ করার মতো না। কীভাবে শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার এই অপার নিয়ামতের হক আদায় হবে, তা আমার জানা নেই; কিন্তু তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে শেষ করতে পারা আদৌ কি সম্ভব? আলহামদুলিল্লাহ।